• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৩:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২২, ২০১৯, ০৩:৪৯ পিএম

তাকামিকুরা সিংহাসনে সম্রাট নারুহিতোর অভিষেক (ভিডিও)

তাকামিকুরা সিংহাসনে সম্রাট নারুহিতোর অভিষেক (ভিডিও)
শপথ পাঠ করছেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো

বিশ্বের ১৭০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সিংহসানে আরোহণ করলেন জাপানের নতুন সম্রাট নারুহিতো। আর নতুন এ সম্রাটের অভিষেকের মধ্যে দিয়ে জাপানি সাম্রাজ্যের ইতিহাসে ‘রেইওয়া’ (শৃঙ্খলা ও ঐকতান) নবযুগের সূচনা হল।

প্রার্থনালয়ে সম্রাট নারুহিতো- দ্য গার্ডিয়ান

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, স্থানীয় সময় দুপুরে টোকিওর ইমপেরিয়াল প্যালেসের ‘হল অব পাইনে’ রাজকীয় আয়োজনের মধ্যে দিয়ে জাপানের ‘তাকামিকুরা’ সিংহাসনে আরোহণ করেন ৫৯ বছর বয়সী নারুহিতো। এর মধ্য দিয়ে তিনি জাপানের অভিষিক্ত হন  ১২৬তম সম্রাট হিসেবে।

সম্রাটের এই রাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সম্রাট নারুহিতোর অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ

উপস্থিত অন্যান্য অতিথিদের মাঝে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাজা উইলিয়াম আলেক্সান্ডার, স্পেনের রাজা ফিলিপ, বেলজিয়ামের রাজা ফিলিপ, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেয়েল ওয়াংচুক, ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লস এবং মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ আরও অনেকেই।

নারুহিতো বাবা এমেরিটাস সম্রাট আকিহিতো ৮৫ বছর বয়সে গত ৩০ এপ্রিল স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করেন। বয়স ও স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। জাপানের ইতিহাসে আকিহিতোই প্রথম সম্রাট যিনি স্বেচ্ছায় সিংহাসন ত্যাগ করলেন।

অভিষেকের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দিনের শুরুতে তিনটি ধর্মীয় উপসনালয়ে প্রার্থনা সারেন নতুন সম্রাট নারুহিতো। পরে সম্রাজ্ঞী মাসাকো ও পরিবারের সদস্যরাও উপসনালয়গুলো প্রদক্ষিণ করেন। এর পর স্থানীয় সময় বেলা ১টায় রাজপ্রসাদের হলে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। উনিশ শতকে তৈরি করা কমলা রঙের রাজকীয় পোশাক পরে ‘সেইডেন-মাৎসু-নো-মা’তে প্রবেশ করেন সম্রাট নারুহিতো।

নারুহিতোর অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের একাংশ- সৌজন্যে ব্লুমবার্গ

তার পেছনে সাম্রাজ্যিক ক্ষমতার প্রতীক তলোয়ার, রত্ন এবং সিলমোহর নিয়ে প্রবেশ করেন রাজকীয় অধ্যক্ষ। এরপরই সম্রাজ্ঞী মাসাকো অনুষ্ঠানস্থলে আসেন জাপানের ঐতিহ্যবাহী ‘কিমোনো’ পরে।

সিংহাসন কক্ষে প্রবেশের পর বেগুনি রঙের পর্দা ঘেরা তাকামিকুরা সিংহাসনে বসেন নতুন সম্রাট। তার পাশে কিছুটা কম উচ্চতার মিচিডাই সিংহাসনে বসেন সম্রাজ্ঞী মাসাকো।

নির্ধারিত সময়ে দুজনের আসনের সামনে থেকে পর্দা সরে যায়। ড্রামের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই জাপানি কায়দায় ঝুঁকে সম্রাটকে সম্মান জানান। বিদেশি অতিথিরাও এ সময় দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

এরপর রাজকীয় ভাষণ দেন পরে সম্রাট নারুহিতো। ভাষণের সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ভাষণ শেষে জাপানি কায়দায় মাথা ঝুঁকিয়ে সম্রাটকে অভিবাবদন জানান আবে। সেখানে দাঁড়িয়েই নতুন সম্রাটকে অভিনন্দন জানিয়ে ভাষণ দেন তিনি।

ভাষণ শেষে শিনজো আবে হাত তুলে তিনবার উল্লাস ধ্বনি দেন। প্রাসাদের বাইরে এসময় তোপধ্বনি দেওয়া হয়।

সম্রাটের  সাফল্য কামনা করে বিজয় ধ্বনি দিচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে- সৌজন্যে: ব্লুমবার্গ

রাজকীয় ভাষণে নিজের সিংহাসনে আরোহণের কথা ঘোষণা দিয়ে নারুহিতো বলেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি, বিধান অনুযায়ী দেশের এবং জনগণের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করব।”

সম্রাট আরও বলেন, “আমার চিন্তা-চেতনায় সবসময় জনগণের সুখ এবং বিশ্ব শান্তির কামনা থাকবে।” জাপানের সম্রাটের রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলেও তিনিই জাতীয় প্রতীক।

নতুন সম্রাটকে অভিনন্দন জানিয়ে শিনজো আবে বলেন, নতুন সম্রাটের নেতৃত্বে আমরা দেশকে আরও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাব। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তি কামনায় এবং বিশ্ব মানবের কল্যাণে অবদান রাখব।”

১৯৬০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া নারুহিতো রাজ পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে জাপানের বাইরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। ১৯৯১ সালে ৩১ বছর বয়সে তিনি যুবরাজ হিসেবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত হন।

এসকে