• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০১৯, ১১:৩২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৭, ২০১৯, ১১:৩৩ পিএম

উপকূলে প্রলয় না সমুদ্রেই শক্তি ক্ষয় : কোন পথে ‍‍‘বুলবুল‍‍’

উপকূলে প্রলয় না সমুদ্রেই শক্তি ক্ষয় : কোন পথে ‍‍‘বুলবুল‍‍’

ঘূ র্ণি বু বু

..........................

আরব সাগর হতে ধেয়ে আসা 'মহা' সঙ্কটের মাঝেই ডানার ঝাপ্টায় বঙ্গোপসাগরের বুক উত্তাল করে তুলেছে আন্দামানের 'বুলবুল'। ভারতের গুজরাট ও ওড়িষ্যা-অন্ধ্রসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসা এই দুটি ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাতের ভয়ে বর্তমানে তটস্থ পুরো অঞ্চল।

চলতি মাসের শুরুতে আন্দামান সাগরে সৃষ্ট দুটি গভীর নিম্নচাপের মধ্যে একটি পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের বুকে পৌঁছানোর পর ঘনীভূত হয়ে পরিপূর্ণ ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল'-এ রূপান্তরিত হয়। প্রাথমিকভাবে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও বুধবার (৬ নভেম্বর) রাতে তা গতিপথ পরিবর্তন করে বাংলাদেশের চট্রগ্রাম অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।   ডাউন টু আর্থ ম্যাগাজিন

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ওয়ান ইন্ডিয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বেশ দ্বন্দ্বে রয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সমুদ্রে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে ঘূর্ণিবলয় সৃষ্টিকারী গভীর নিম্নচাপটি প্রচণ্ড শক্তিশালী সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার ইঙ্গিত দিলেও চলার গতি অত্যন্ত ধীর বলে জানা গেছে। যার প্রেক্ষিতে, ঘুর্ণিঝড়টি উপকূলে প্রলয় আঘাত হানবে নাকি তার আগেই শক্তি হারিয়ে সমুদ্রে বিলিন হবে তা নিয়েও জেগেছে প্রশ্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতি কম হওয়ার ফলে সাগরের গভীর জলরাশির বুকে দীর্ঘ সময় অবস্থান করায় প্রচণ্ড শক্তিশালী ঝড়ের রুপ নিতে পারে বুলবুল। অথবা স্বল্প গতি নিয়ে উপকূলের দিকে ধাবমান ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে পৌঁছানোর আগেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তবে ঠিক কোন দিকে যাবে বুলবুল, তা এখনও সঠিকভাবে নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি। 

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সাইক্লোন ট্র্যাকিং স্যাটেলাইটের তথ্যচিত্র পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে প্রলঙ্করী সাইক্লোনে পরিনত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উত্তর ওড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল ও পশ্চিমবঙ্গের গা ঘেঁষে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার দিকে এগিয়ে আসছে। 

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর বলছে,পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়।

উপকূলে প্রলয় নাকি সমুদ্রে শক্তিক্ষয় 
আলিপুরের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শেষ পর্যন্ত বুলবুলের প্রভাবে প্রলয়ের আশঙ্কাই সত্যি হবে বলেই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে ধীরগতির ঝড়টি উপকূলের কাছে এসে শক্তিক্ষয়ে সমুদ্রেই লুটিয়ে পড়তে পারে।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রাথমিক ও পরিবর্তীত গতিপথ

সর্বশেষ তথ্য মতে, বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত গভীর নিম্মচাপটি এই ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শক্তি বাড়িয়ে ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের আকার নেবে বুলবুল। এরপর আগামী ৩৬ ঘণ্টায় আরও শক্তি বাড়িয়ে আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে বুলবুল।

আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামী ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। একইসঙ্গে পূর্ব-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৭০ কিমি।

৭ নভেম্বর সকালে ওই অঞ্চলে হাওয়ার বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিমি। এই সময় হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ ছুঁতে পারে ঘণ্টায় ৯০ কিমি। ৮ তারিখ সন্ধ্যার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িষ্যা উপকূলে ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ওই এলাকায় হাওয়ার সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৬০ কিমি। এর প্রভাবে উত্তাল হতে পারে সমুদ্র। এই প্রেক্ষিতে ৮ তারিখ থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীজের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাওয়ার বেগ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই সময় বাতাসের বেগ ছুঁতে পারে ঘণ্টায় ১২০-১৩০ কিমি। তবে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ১০ নভেম্বর নাগাদ বাংলাদেশে আঘাত হানার সময় হাওয়ার গতিবেগ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৪৫ কিমি পর্যন্তও হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভয়াবহ তাণ্ডবে রমুখে পড়বে উপকূলীয় অঞ্চল।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারতের আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, এদিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৩০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি কম। এদিন শহরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ১৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ২ ডিগ্রি কম। শহরে বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বাধিক ৯৪ শতাংশ, ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ।

সৌজন্যে: অ্যাকুয়া ওয়েদার

অপর দিকে গতি স্বল্পতার কারণে ক্রমেই শক্তিক্ষয়ে দুর্বল ঝড়টি উপকূলের কাছে এসে সমুদ্রেই মুখথুবড়ে পড়োতে বলেও ধারোণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আবহাওয়াবিদদের যা অনুমান তাতে করে কোনওভাবেই উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের।

তবে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শনি ও রোববার ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে উপকূলের জেলাগুলি ও কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলিতে। শনি ও রবিবার এর মধ্যে কলকাতাতেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সবথেকে বেশি বৃষ্টি হবে দুই ২৪ পরগনা-তে। ভারী বৃষ্টি হবে দুই মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম হাওড়া হুগলি এবং নদীয়াতে।

ঘূর্ণিঝুড় ব্লবুল: আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষনকারী সংস্থাসমূহের দেয় সম্ভাব্য প্রভাব

এর আগে শুক্রবার বিকেল থেকেই উপকূলের জেলাগুলিতে জড়ো হওয়া শুরু হবে। পূর্ব মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার উপকূলের জেলাগুলিতে আগামিকাল, শুক্রবার ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইবে এবং রবিবার তার সর্বোচ্চ ১০০ কিলোমিটার গতিবেগ হতে পারে বলে আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের।

তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে সকল জেলেদের সমুদ্র থেকে ফিরে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ শুক্রবার থেকে মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যাওয়া নিষেধ। শনি ও রবিবার দীঘা থেকে বকখালি, সমস্ত সমুদ্রসৈকতে বিনোদনমূলক রাইড বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সমুদ্রে নামাও নিষেধ ।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতরের নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে। বুলবুল নামটি নেয়া হচ্ছে পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।

এসকে
 

আরও পড়ুন