• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৩:০৮ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে বুলবুলের তাণ্ডবে নিহত ৬

পশ্চিমবঙ্গে বুলবুলের তাণ্ডবে নিহত ৬
বকখালিতে বুলবুলের দাপটের পর- ছবি : পিটিআই (আনন্দবাজার পত্রিকা)

আয়লার মতো তীব্র না হলেও ১০ নভেম্বর (রোববার) বুলবুলের দাপটে তছনছ হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৩টি জেলা। কলকাতা সহ আরও কয়েকটি জেলায় প্রভাব পড়েছে আংশিক। সরকারি সূত্রে ৩টি জেলায় মোট ৬ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে। তবে অসমর্থিত সূত্রে নিহতের সংখ্যা ১০।

রোববার (১০ নভেম্বর) বিকালে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন, আপাতত বুলবুলের বিপদ কেটেছে।

পশ্চিমবঙ্গের দুর্যোগ মোকাবেলা মন্ত্রী জাভেদ খান জানান, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরেই বুলবুলের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। এর মধ্যে উত্তর চব্বিশ পরগনায় মারা গেছেন ৫ জন। তারা হলেন- মইদুল গাজী, রেবা বিশ্বাস, সুচিত্রা মণ্ডল, প্রকৃতি মৃধা এবং বিদেশি সরদার।

রোববার গভীর রাত পর্যন্ত নবান্নের (পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দফতর) কন্ট্রোলরুম থেকে ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছুটি বাতিল করে দেয়া হয়েছিল শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের। মমতার সঙ্গে ছিলেন তারাও। মুখ্যমন্ত্রীর সোমবার উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করতে যাওয়ার কথা ছিল। সেই সফর বাতিল করে দিয়ে বকখালি যাচ্ছেন তিনি।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় যে সব জায়গায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে কাকদ্বীপ, বকখালি এবং সুন্দরবনের ভিতরে রায়দিঘি অঞ্চল।

পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যয় মোকাবেলা মন্ত্রী জাভেদ খান রোববার (১০ নভেম্বর) বলেন, বুলবুলের প্রভাবে আড়াই লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে এক লাখ ৭৪ হাজার মানুষকে আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। মোট ৯টি জায়গায় এই ত্রাণ শিবিরগুলো খোলা হয়েছে। দুই চব্বিশ পরগনা জেলায় গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে মোট ৩৭৩টি গোষ্ঠীগত রান্নাঘরে রান্না-বান্না চলছে। ৩টি জেলার গ্রামাঞ্চলে মোট ২৬ হাজার বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে।

আয়লার মতো না হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় বুলবুলের ভয়াবহতা ভালোমতোই টের পেয়েছে গোটা দক্ষিণবঙ্গ। বুলবুলের দাপটে কলকাতা ও নদীয়া জেলায় শনিবার সারাদিনই চলে দফায় দফায় বৃষ্টি। সঙ্গে চলেছে ঝড়ো হাওয়া। নদীয়ারও কয়েকটি বাড়িতে অল্পবিস্তর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা ছাড়াও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে। মেদিনীপুরের দীঘা অঞ্চল থেকে আগেই পর্যটকদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। মৎস্যজীবীদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। 

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ত্রাণ দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানায়, সময় যত এগিয়েছে, ততই সামনে এসেছে মৃতের সংখ্যা, ততই স্পষ্ট হয়েছে বুলবুলের ভয়াবহতার সঠিক চিত্র।

রোববার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লি থেকে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নবান্ন সূত্রে খবর দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রীকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রতিরোধে রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজভবন থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘বুলবুল আছড়ে পড়ার আগেই যেভাবে প্রশাসন তৎপরতা দেখিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য, না হলে ক্ষয়-ক্ষতি ও প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারত।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্যই বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। বলা যেতে পারে বিস্তীর্ণ সুন্দরবনের কারণেই বেঁচে গিয়েছে রাজ্য।

শনিবার দুপুর থেকে বুলবুল প্রতিরোধ এবং ত্রাণকার্যে কজে নামে এনডিআরএফ (ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স) এবং এসটিআরএফ (স্টেট রিলিফ ফোর্স)। এনডিআরএফ-র ৬টি এবং ৮টি এসটিআরএফ দল উদ্ধারকার্য চালিয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধার কাজে নামানো হয় ১৫ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারকে।

ডিডিজি/একেএস

আরও পড়ুন