• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০২:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৪:১৮ পিএম

রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যু

মিয়ানমারের মানবতা বিরোধী অপরাধ তদন্তের আদেশ দিলো আইসিসি

মিয়ানমারের মানবতা বিরোধী অপরাধ তদন্তের আদেশ দিলো আইসিসি

মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের ওপর সেদেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও দমন অভিযানে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কি না তা তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এপি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সোমবার (১১ নভেম্বর) এ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইনের বিধান অনুসারে মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করতে ন্যাদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া।

বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সর্বোচ্চ সহযোগিতামূলক সংস্থা ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) প্রতিনিধি হিসেবে এই মামলাটি দায়ের করে গাম্বিয়া। 

এরই প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে আমলে নেয়া ও তদন্ত পরিচালনা করা যায় কি না তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেয় আইসিসি। 

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক আদালতের একদল আইনজ্ঞ বিষয়টি বিশ্লেষণ করে- রোহিঙ্গাদের উপর সহিংসতা পরিচালনার আলামত লক্ষ্যণীয়, এ মর্মে সিদ্ধান্ত জানালে গাম্বিয়ার অভিযোগ আমলে নিয়ে মিয়ানমারে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়াদি তদন্তের আদেশ প্রদান করে।

বৃহস্পতিবার আইসিসি এক বিবৃতিতে প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে।

এতে বলা হয়, “এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে যে, ব্যাপকভাবে এবং/অথবা সিস্টেমেটিক সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ির পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকতে পারে। আদালতের আইনজ্ঞ পর্ষদ তাই বাংলাদেশ/মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে।”

এর আগে জাতিসংঘের বিশেষ অনুসন্ধানি দল 'ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন, কফি আনান কমিশন ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর সংঘটিত সামরিক অভিযানকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

পাশাপাশি এই অসহায় রোহিঙ্গা অভিবাসীদের নিজ ভূখণ্ডে মানবিক আশ্রয় প্রদান করায় বাংলাদেশ ও তার ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার ও বিকৃত তথ্য প্রকাশ এবং সীমান্তে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করায়, আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনারও সম্মুখীন হয় মিয়ানমার।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সঙ্গে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।

এর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের কথায় উঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ।

তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

গত বছর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়।প্রা

থমিক তদন্ত শেষে পূর্ণ তদন্ত শুরুর জন্য আইসিসির কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদার একটি আবেদন করেন। এখন বিচারকরা সায় দেওয়ায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংতার অভিযোগের তদন্তে এটাই হচ্ছে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্যোগ।

এসকে