• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৫, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম

পশ্চিমবঙ্গ

এনআরসি ঠেকাতে শুরু হচ্ছে পাহাড় থেকে সাগর পদযাত্রা

এনআরসি ঠেকাতে শুরু হচ্ছে পাহাড় থেকে সাগর পদযাত্রা
কলকাতায় এনআরসি বিরোধী জনসমাবেশের একাংশ -ছবি : কলকাতা প্রতিনিধি

এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনশিপ বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জী) আতঙ্কে কাঁপছে পশ্চিমবঙ্গ। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে এনআরসির অভিজ্ঞতা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের উপর্যুপরি হুঙ্কারে এই আতঙ্ক আরও তীব্রভাবে চেপে বসেছে এপার বাংলার মানুষের মনে। তার সঙ্গে সময় সময় তাল মিলিয়েছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি দিলীপ ঘোষও।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশই মনে করছে, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি পৌরসভা যে বিজেপি’র হাতছাড়া হয়েছে, তার মূলেও রয়েছে এনআরসি সম্পর্কে মানুষের মনে তৈরি হওয়া তীব্র আশঙ্কা।

গত কয়েক মাস ধরেই পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে চলছে এনআরসি বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভ। এমনমি অতি সম্প্রতি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যে রাজনৈতিক জোট হয়েছে, সেখানেও এনআরসি বিরোধী একাধিক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এবার আরও বড় আন্দোলনে নামছে নাগরিক পঞ্জী বিরোধী যুক্তমঞ্চ।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) থেকে তারা শুরু করছেন পাহাড় থেকে সাগর নাগরিক পঞ্জী বিরোধী পদযাত্রা। আগামী ৪ ডিসেম্বর পদযাত্রা পৌঁছবে বকখালিতে। উত্তরের দার্জিলিং থেকে শুরু হয়ে এই পদযাত্রা আসবে পশ্চিমবঙ্গের একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত কাকদ্বীপ-বকখালিতে। এরপরে ৯ ডিসেম্বর একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ হবে কলকাতায়। সেখানে বক্তব্য রাখবেন বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে যুব-আইকন হয়ে ওঠা কানহাইয়া কুমার।

সংগঠনের অন্যতম নেতা রতন বসু মজুমদার এই খবর জানিয়ে বলেছেন, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) শিলিগুড়ি এবং শনি (১৬ নভেম্বর) ও রোববার (১৭ নভেম্বর) উত্তরবঙ্গের দুই দিনাজপুরে দু’তিনটি জনসভা করবেন কানহাইয়া কুমার, জিগনেশ মেবানি প্রমুখ।

এই দুই সর্বভরতীয় যুব নেতা তাদের তীব্র বিজেপি, তথা নরেন্দ্র মোদী বিরোধিতার জন্য ভারতের যুবসমাজের কাছে আইকনে পরিণত হয়েছেন।

পদযাত্রার উদ্যোক্তাদের তরফে এও জানানো হয়, পদযাত্রা যে যে জেলার ভেতর দিয়ে আসবে, সেখানেই সমাবেশ করে এনআরসির বিপদ সম্পর্কে মানুষের সামনে প্রচার করা হবে। সেই সঙ্গে মানুষের কাছে এও আবেদন করা হবে, সম্মিলিতভাবে যাতে মোদী সরকারের এই প্রচেষ্টা রুখে দেয়া যায়, সে ব্যাপারে সর্বত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

প্রতিবেশী আসাম রাজ্যে এনআরসি প্রক্রিয়া চালানোর ফলে ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এই ১৯ লাখের লক্ষের মধ্যে ১২ লাখ বাঙালি হিন্দু এবং ৫ লাখ বাঙালি মুসলমান। আছেন গোর্খা, দলিত, আদিবাসী এমনকি অসমীয়াভাষী মানুষও। এনআরসি-ছুট এই ১৯ লাখকে মানুষকে এখন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়ে নিজেদের নাগরিকত্ব সাব্যস্ত করতে হবে। না পারলে তাদের বিদেশি চিহ্নিত করে ডিটেনশন ক্যাম্প বা বন্দি শিবিরে আটক করে রাখা হবে। আসামে এনআরসি নবীকরণ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যবাসীকে ২৪ মার্চ ১৯৭১-এর আগেকার নথিপত্র জমা দিয়ে বর্তমানে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলেছিল। এর ফলে মানুষের শুধু হয়রানিই নয়, এই সময়ের মধ্যে ৬০ জনের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এমনিতেই ভারতের মতো দেশে বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষকে ঘরছাড়া হতে হয়।

সংগঠনের বক্তব্য, এরপরেও যদি বিশাল সংখ্যক (কয়েক লাখ) মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করে রাখা হয়, তার চেয়ে বিপর্যয়কর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আর কী হতে পারে?

বিরোধী সবক’টি রাজনৈতিক দলেরই অভিযোগ, আসামে ১৯ লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা সমাধান করার বদলে গোটা দেশেই এই নাগরিক পঞ্জী করতে উঠে-পড়ে লেগেছে মোদঅ সরকার। এরই মধ্যে দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাম বাদে সমস্ত রাজ্যে জনসংখ্যা-পঞ্জী বা এনপিআর তৈরির নির্দেশিকা জারি করেছে। বস্তুত তার পর থেকেই আরও তীব্র হয়েছে এনআরসি আতঙ্ক।

ডিডিজে/এসএমএম