• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৯:৫৪ পিএম

উঠতে পারে তিস্তা প্রসঙ্গ

ইডেন টেস্টের অবকাশে মমতা-অমিতের সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা

ইডেন টেস্টের অবকাশে মমতা-অমিতের সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা
শেখ হাসিনা, মমতা বন্দোপাধ্যায় ও অমিত শাহ

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার প্রথম দিন-রাতের ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) কলকাতায় আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্ন এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস সূত্রে খবর, এই অবকাশে সেদিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও  কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে একান্ত বৈঠক হতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। 

সংশ্লিষ্ট মহল থেকে এমটাই সম্ভাবনার কথা শোনা গেছে। 

বুধবার (২০ নভেম্বর) দিল্লিতে লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা ভারতে ‘এনআরসি হবেই’ বলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হলেও সেখানে এনআরসি প্রক্রিয়ার ঘোর-বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন কি- না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ঘোর সন্দেহ রয়েছে। কারণ ভারতে এনআরসির প্রেক্ষাপটে অমিত শাহ এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাভাবিকভাবেই একে অপরকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাই করবেন।

অমিত শাহও একই উপলক্ষে সেদিন কলকাতায় আসছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ম্যাচের প্রথম দিনের দ্বিতীয়ার্ধে ইডেন গার্ডেন্স-এর ক্লাব হাউসে আসবেন খেলা দেখতে। মাঝের কোনও একটা সময় হতে পারে এই বৈঠকটি। আর কলকাতায় বৈঠক হলে যে তিস্তার পানিবন্টন প্রসঙ্গ যে অবধারিতভাবে উঠে আসবে তা বলাই বাহুল্য। সরকারি সূচি অনুযায়ী শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের আধিকারিক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পদস্থ আধিকারিকরা। সেখান থেকে তিনি চলে যাবেন তাজ হোটেলে। দুপুর একটায় ইডেন গার্ডেন্সে আসবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উদ্বোধনী বেল বাজিয়ে সূচনা করবেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম দিন-রাতের টেস্টের। সেখানে সিএবি আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের যাবেন হোটেল। ফেরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ তিনি ইডেন গার্ডেন্সের ক্লাব হাউসে আসবেন ম্যাচের প্রথম দিনের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা দেখতে।

বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, অপরাহ্নের আগেই কলকাতায় পৌঁছে যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার আগে ইডেনমুখো হবেন না বলে জানা গেছে। সেক্ষেত্রে মাঝের কিছুটা সময় তিন নেতার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ উজ্জ্বল হচ্ছে বলেই সংশ্লিস্ট মহল থেকে জানানো হচ্ছে। রাত আটটা পর্যন্ত ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ দেখে নৈশভোজের পরেই শেখ হাসিনা রওনা দেবেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠক হলে সেখানে তিস্তা পানিবন্টন চুক্তি প্রসঙ্গটি তুলতে পারেন খোদ অমিত শাহই। কারণ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তার পানি। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই তা নিয়ে চলছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে টানাপোড়েন। দু’পক্ষেরই আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি সম্পূর্ণ করা যায়নি, তার অন্যতম বড় কারণই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি। তিনি মনে করেন, তিস্তার পানি ভাগ হয়ে গেলে উত্তরবঙ্গের অনেকটা অংশই গরমের সময় পানির কষ্টে ভুগবে। এ ব্যাপারে একাধিক নদী বিশেষজ্ঞের রিপোর্টকেও তিনি গুরুত্ব দিতে নারাজ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রথম দফায় ক্ষমতায় বসার পরেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিস্তার পানি বাংলাদেশ পাবেই। এমনকি তিনি এও বলেছিলেন, ‘আমার ও আপনার শাসনকালের মধ্যেই বাংলাদেশে তিস্তার পানি ঢুকবে।’ কিন্তু তা হয়নি মূলত অংশীদার রাজ্য হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ বা আরও পরিষ্কারভাবে বললে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল আপত্তির জন্যই।

ভারতে ইউপিএ আমলেই ড. মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ই তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে দিল্লি-ঢাকার চুক্তি একরকম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালে স্থির হয়েছিল মনমোহন সিং ঢাকায় এসে এই চুক্তিটি সই করবেন। সে সময় তার সঙ্গে ঢাকা সফর করেছিলেন উত্তরপূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও। তাদের রাজ্যের ওপর দিয়ে তিস্তা বয়ে গেলেও, পানি বন্টন নিয়ে তাদের কোনওরকম আপত্তি ছিল না। সে কারণেই মনমোহন সিং তাদেরও সঙ্গে করে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। যাওয়ার কথা ছিল অন্যতম অংশীদার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। মমতাকে রাজি করাতে দিল্লি থেকে কয়েক দফায় এসে তিনবার তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। কিন্তু তাকে টলানো যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আরও এক ধাপ এগিয়ে আসতে পারেন।

ডিডিজি/এসএমএম

আরও পড়ুন