• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৬:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৪, ২০১৯, ০৬:৪২ পিএম

রোহিঙ্গা সঙ্কট

‘চীন কোনও দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না’

‘চীন কোনও দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না’
সেমিনারে অংশ নেন চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমিংসহ অন্যান্যরা -ছবি : সংগৃহীত

রোহিঙ্গা ইস্যুর টেকসই সমাধানের জন্য চীন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে অনন্য ভূমিকা পালন করছে এমন উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমিং বলেছেন, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে প্রশংসা করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় যেতে চাই। চীন কোনও দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না। এমন একটি সমাধান চাই যাতে দুই পক্ষই লাভবান হবেন।

রোববার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনের উপায় সন্ধান’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট আয়োজিত সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীন একটি নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীন এ ব্যাপারে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। রোহিঙ্গাদের কিভাবে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন করানো যায় এবং তা যেন টেকসই হয় সে ব্যাপারে চীন যথেষ্ট আন্তরিক।

লি জিমিং বলেন, গত দুই বছর ধরেই চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের উপায় খুঁজতে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে তৃতীয় পক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিভিন্নভাবে চীন ভূমিকা রাখছে। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত তিন দেশের বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার।

সেমিনারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, আমার দীর্ঘ কর্ম-জীবনে এমন অবর্ণনীয় শরণার্থী শিবির দেখিনি, যেটি দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে। বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করছে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চান যদি তারা সেখানে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পান। তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতেই হবে। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আর না আসতে হয় রোহিঙ্গাদের। এ ব্যাপারে যথাযথ নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন মোটেও অসম্ভব ব্যাপার নয়। এটা সম্ভব। এ জন্য নিজ ও পরিবারের নিরাপত্তা দরকার। তারা নিজ দেশে নিজেদের যথাযথ মর্যাদা চায়। এটা নিশ্চিত করা গেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে গত কয়েক দশক বাংলাদেশকে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক আশ্রয় দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যাক। গত দুই বছর ধরে এ কথা বললেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো একজন রোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিরে যেতে পারেননি। 

বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের উচিত দ্রুত মিয়ানামারে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো। যারা সেখানকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে একটি নিরাপদ আবাসন গড়ে তুলতে হবে। যেন রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিরাপত্তা বিশ্লষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, মানবিক অপরাধের কারণে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের বিপক্ষে। মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক নানারকম ঝুঁকি তৈরি করছে।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করা উচিত। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা মনে করি আজ না হোক আগামীতে এটা অবশ্যই হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নিজ দেশের নাগরিককে ফেরত নিতে হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পোস্ট এর প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সকল আন্তর্জাতিক সহযোগীদের সাথে নিয়ে টেকসই উপায় বের করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা ইস্যু বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিকসহ আরও অনেকে। 

এএইচএস/এসএমএম

আরও পড়ুন