• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৮, ২০১৯, ০৮:৫৮ পিএম

পশ্চিমবঙ্গের তিন কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের তৃণমূলের জয়

পশ্চিমবঙ্গের তিন কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের তৃণমূলের জয়
উপ-নির্বাচনে জয়ের পর তৃণমূলের আনন্দ মিছিল -ছবি : জাগরণ

২৮ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তিন কেন্দ্রের (কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর এবং খড়গপুর সদর) উপ-নির্বাচনে বিজেপি’কে কার্যত দুরমুশ করে জয় ছিনিয়ে আনলো তৃণমূল। নির্বাচনের বহু আগে থেকেই বাংলা দখলের লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপি’র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতারা। সেই সঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনে ২৮টি আসন পাওয়ার বাড়তি উচ্ছ্বাসও কাজ করছিল। 

পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি কার্যকর করে বেআইনি অভিবাসীদের দেশছাড়া করার আগ্রাসী অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিজেপি নির্বাচনি প্রচারে নেমেছিল। কিন্তু এদিন ফল প্রকাশের পর দেখা যায় খড়গপুর কেন্দ্রে তিন নম্বরে চলে গেছে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দল। বাকি দুটি কেন্দ্রে অবশ্য তারা দু’নম্বরেই রয়েছে।

ফল ঘোষণার পর (তখনও সম্পূর্ণ ফল সামনে আসেনি) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘ঔদ্ধত্য বাংলার মানুষ সহ্য করেন না। বিজেপির ঔদ্ধত্য অতিরিক্ত পর্যায় চলে গিয়েছিল।

 
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ফল বিজেপিকে শুধু বড় ধাক্কাই নয়, একই সঙ্গে একটা বার্তাও দিতে পেরেছে যে, নাগরিকত্বসহ অন্যান্য একাধিক ইস্যুতে মোদি সরকারের ‘যা খুশি করার’ মানসিকতাকে প্রশ্রয় দেননি বাংলার ভোটাররা।

ভোটারদের মনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল তৃণমূল সম্পর্কে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও উপ-নির্বাচনে তারা বিজেপিকে সহজে জায়গা ছেড়ে দেননি। একই সঙ্গে  বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিও কাজ করেছে। ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক মানসিকতার ভোটারদের একটা বড় অংশ ছিলেন তাদের দিকেও। যে কারণে তৃণমূলের ৩-০ জয়কে এত অনায়াস দেখাচ্ছে বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন খোদ বিজেপি প্রার্থী। নিজের হারের জন্য নিজের দলকেই দায়ী করেছেন কলিয়াগঞ্জের বিজেপি প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকার। তিনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন তার দলের এনআরসি নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের প্রচারের জন্যই খেসারত দিতে হল তাকে।

তিনি বলেছেন, এনআরসি দিল্লি করছে। আর সেটাই পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দলের বিপক্ষে গিয়েছে। এই আসনটি আরও একটি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এখানে ৫৭ হাজার ভোটে গিয়ে থেকে লড়াই শুরু করেছিল বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক সমীক্ষায় এই আসনটিতে অন্তত প্রথম থেকেই বিজেপি প্রার্থীকে এগিয়ে রেখেছিল। এই আসনটিতে জিতেছেন তৃণমূলের প্রার্থী তপন দেব সিংহ।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত আমলা, বর্তমানে একাডেমিক সমীক্ষা সংস্থার অন্যতম ভূমি-রাজস্ব বিশেষজ্ঞ বুদ্ধদেব ঘোষ বলেছেন, প্রথম থেকেই বিভেদ নীতির ওপর নির্ভর করে এগিয়েছে বিজেপি। এনআরসি প্রচারের মাধ্যমে সেই বিভেদ-নীতি আরও প্রকট হয়েছিল। সেই প্রকোপে পড়েই উপ-নির্বাচনে বিজেপিকে এই ফলাফলের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিছুদিন আগেই এই কালিয়াগঞ্জে প্রচারে গিয়ে তৃণমূলের কার্যত নাম্বার-টু শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘বাম ও কংগ্রেসকে ভোট দেয়ার অর্থ নোটা-য় (নান অব দ্য অ্যাবাভ, অর্থাৎ প্রার্থীদের কাউকে পছন্দ নয়) ভোট দেয়া। এই নির্বাচনে তৃণমূল হারলেও রাজ্যে সরকারে কোনও অসুবিধা হবে না। কিন্তু বিজেপি জিতলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শুভেন্দুবাবুর এই মন্তব্যই কার্যত ছিল সীমান্ত অঞ্চলের ৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারদেরও মনের কথা।

অন্যদিকে এই ৩টি কেন্দ্রের ভোট নিয়েই চরম আশাবাদী ছিলেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম নেতা মুকুল রায়। প্রথম দিন থেকেই এই ৩টি কেন্দ্রে বিজেপির জয় হচ্ছে বলে দাবি করছিলেন তিনি। জয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত আশাবাদী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও। এমনকী দিল্লিতেও বিজেপির সদর দফতরেও এমন বার্তাই তিনি দিয়েছিলেন এই দুই নেতা। এখন বিজেপির মধ্যেই এই দিলীপ ঘোষের দিকে সমালোচকদের আঙুল উঠতে শুরু করেছে। নির্বাচনি প্রচারে তিনি এনআরসি-র প্রসঙ্গ তুলে বাংলাদেশি মুসলিমদের পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাড়ানোর কথা বলেছিলেন। আর অসমের অভিজ্ঞতা বাংলার মানুষকে শিখিয়েছে, এনআরসি হলে হিন্দু–মুসলমান আলাদা করে নয়, বিতাড়ণের খাঁড়া নেমে আসবে আসলে বাঙালির ওপরেই।

একেএস