• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৯, ২০১৯, ০৭:৪২ পিএম

ভারতের লোকসভায় ‘মুসলিমবিরোধী’ নাগরিকত্ব বিল পাস

ভারতের লোকসভায় ‘মুসলিমবিরোধী’ নাগরিকত্ব বিল পাস
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ - ছবি: সংগৃহীত

বিরোধী দলগুলোর প্রবল আপত্তি এবং উত্তর-পূর্বে ব্যাপক বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেই ভারতের লোকসভায় পাস হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কিত বিলটি পেশ করেন। ৯০ মিনিট উত্তপ্ত বিতর্কের পর ২৯৩-৮২ ভোটের ব্যবধানে এটি পাস হয়। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় বিলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিতর্কিত এ বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। আইনে পরিণত হতে হলে বিলটির এখন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে।

৪ ডিসেম্বর ভারতে অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে একটি খসড়া বিলে অনুমোদন দেয় দেশটির মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী হওয়া অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে এ বিলটি আনা হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, ভারতে টানা ৫ বছর ধরে বসবাস করা অমুসলিমরাই নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এর আগে ২০১৬ সালে একবার পার্লামেন্টে এ বিলটি লোকসভার অনুমোদন পেলেও রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। তখন আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। বিলটির প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের একটি প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে। 

বিজেপি সরকার বলছে, এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, বিজেপির মুসলমান জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করার নীতির অংশ হিসেবেই পার্লামেন্টে বিল তোলা হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা শশী থারুরসহ অনেক বিরোধী নেতাই এই সংশোধনীটিকে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছেন।

তবে নাগরিকত্ব বিলে ধর্মীয় বৈষম্য হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন অমিত শাহ। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে ফের কংগ্রেসের ঘাড়ে দেশভাগের দায় চাপিয়েছেন তিনি। সংসদে বিরোধিতার মুখে পড়ে তিনি বলেন, ‘আজ এই বিলের প্রয়োজন পড়ল কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ধর্মের নিরিখে দেশভাগ না করলে, আজ এই বিলের প্রয়োজনই ছিল না। আমরা নই, ধর্মের নিরিখে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেসই।’’

এ প্রসঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর কথাও টেনে এনে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তখন তিনি পাকিস্তানি শরণার্থীদের আশ্রয় দেননি কেন? তা হলে কি ইন্দিরা গান্ধীও অসাংবিধানিক পদক্ষেপ করেছিলেন?’

দেশের সংখ্যালঘু বর্গকে নিশানা করতেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীরঞ্জন চৌধুরী। এই বিলের মাধ্যমে সংবিধানে উল্লিখিত সমানাধিকার সংক্রান্ত ১৪ ধরার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তৃণমূলের সৌগত রায়। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অমিত শাহ বলেন, ‘দেশের .০০১ শতাংশ সংখ্যালঘুকে কোণঠাসা করা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের উদ্দেশ্য নয়। আগেই এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সমানাধিকার নিয়ে আলোচনা চাইলে গোটা বিশ্বের উদাহরণ তুলে ধরতে পারি। কিন্তু সমানাধিকারের কথা যখন উঠছেই, তখন একটা কথা বলতেই হয়, সংখ্যালঘুরা যখন শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণ পায়, তখন সমানাধিকারের যুক্তি কোথায় যায়? তাতে সংবিধানের ১৪ ধারার লঙ্ঘন হয় না?’

ধর্মীয় নিপীড়ণের জেরে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এ দেশে প্রবেশকারী  হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীকে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে নাগরিক স‌ংশোধনী  বিলে। এর আগে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনও ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। নতুন বিলে ওই সংস্থান কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। এতেই আপত্তি তুলছেন বিরোধীরা। কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে বেছে বেছে অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। কিন্তু অমিত শাহের যুক্তি, প্রতিবেশী দেশ থেকে কোনো মুসলিম নাগরিকত্বের আবেদন জানালে, তা খতিয়ে দেখা হবে। শুধুমাত্র সংশোধনী বিলের আওতায় কোনো সুবিধা পাবেন না তারা। কারণ পাকিস্তান, বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশে তাদের ধর্মীয় নিপীড়ণের শিকার হতে হয় না।

এফসি

আরও পড়ুন