• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৫:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৫:২৩ পিএম

হুঁশিয়ারি মমতার

‘আইন নিজের হাতে নিলে কড়া ব্যবস্থা, কেউ ছাড় পাবে না’

‘আইন নিজের হাতে নিলে কড়া ব্যবস্থা, কেউ ছাড় পাবে না’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ফাইল ছবি

মাথা ঠাণ্ডা রেখে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ আন্দোলনের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গত দু’দিনে বিক্ষোভ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে এলাপাথাড়ি পাথর ছোড়ার পাশাপাশি একাধিক স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর, রাস্তা অবরোধের সঙ্গে বাস এবং গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটছে। রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে এবার বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিলেন, বিক্ষোভের নামে বাসে আগুন ধরানো, ট্রেনে পাথর ছোড়া এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা একেবারেই বরদাশত করা হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ শুরু হয়। শনিবারও পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার বদলে আরও খারাপ হতে থাকে।

সিএবি-এনআরসি বিতর্ক

ভুল বোঝাবুঝি করবেন না, কোনওরকম উত্তেজনা ছড়াবেন না, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না, সাম্প্রদায়িক উসকানিতে কান দেবেন না। নিশ্চিন্তে থাকুন, বাংলায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বাংলায় কার্যকরী হচ্ছে না। এখানে আমাদের সরকার

...................‘’...................

উদ্বিগ্ন মমতা এদিন বলেন, গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলন করুন। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। পথ অবরোধ, রেল অবরোধ করবেন না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বরদাশত করা হবে না। যারা গণ্ডগোল করছেন, রাস্তায় নেমে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন, তাদের কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না। বাসে আগুন লাগিয়ে, ট্রেনে পাথর ছুড়ে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলায় কোনওভাবে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরী হতে দেবেন না বলেও এদিন ফের জানান মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি করবেন না, কোনওরকম উত্তেজনা ছড়াবেন না, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না, সাম্প্রদায়িক উসকানিতে কান দেবেন না। নিশ্চিন্তে থাকুন, বাংলায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বাংলায় কার্যকরী হচ্ছে না। এখানে আমাদের সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার আইন পাস করলেও রাজ্যকেই তা কার্যকর করতে হয়। আমরা এখানে এনআরসি বা ক্যাব করতে দেব না তা বলেই দিয়েছি। তাই নিশ্চিন্তে থাকুন। রাস্তা ব্লক করবেন না দয়া করে। আইন হাতে তুলে নেবেন না। এতে মানুষের অসুবিধা হয়। মানুষ ভাল থাকুন এটাই আমাদের ইচ্ছা। আসুন সবাই মিলেমিশে থাকি।’

এর আগে শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) শান্তির আবেদন জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ করতে আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিনের থেকে তার গতকালের আর্জি আরও নরম ছিল। ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। কোনা এক্সপ্রেসওয়েতেও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন একদল মানুষ। সেখানে সরকারি বাসে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। বিক্ষোভ ঠেকাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাই লাঠিচার্জ করতে হয় পুলিশকে।

বিক্ষোভের জেরে শিয়ালদহ-হাসনাবাদ শাখায় ভোর থেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধ। লক্ষ্মীকান্তপুর-নামখানা শাখায় রেলের ওভারহেড তারে বিক্ষোভকারীরা কলাপাতা ফেলে রাখে বলে অভিযোগ। মালদহ-বীরভূম-সহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খাস কলকাতাতেও। নিউ টাউনের একাধিক জায়গায় পথ অবরোধ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুলও পোড়ান বিক্ষোভকারীরা।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে কঠোর বার্তা আসা খুব জরুরি ছিল। প্রশাসন শুধু বার্তা দিয়ে চুপ করে বসে থাকবে, অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করবে না, এই বার্তা ছড়িয়ে পড়লে অশান্তি আরও বাড়তে পারত। পরিস্থিতি আর সেদিকে গড়াতে দিতে চান না মমতা। তাই এ দিন কড়া বিবৃতি দিলেন। এই অশান্তি বরদাশত করা হবে না এবং অশান্তি সৃষ্টিকারীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে যে কড়া পদক্ষেপ করা হবে সে কথা মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন।

ধনখড়ের টুইট

গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারকেই খোঁচা দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘এই মুহূর্তে রাজ্যে যা ঘটছে, তাতে অত্যন্ত আহত আমি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ায় সংবিধানের ওপর আস্থা থাকা উচিত ওর। তবে রাজ্যপাল হিসাবে সংবিধান এবং আইন রক্ষা করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করব আমি।’

তার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো মন্ত্রীরা। তাদের দাবি, দক্ষ হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এসএমএম

আরও পড়ুন