• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম

নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ

নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় জ্বলছে পশ্চিমবঙ্গ

ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে বদলে যেতেই উত্তর-পূর্বের সীমান্ত রাজ্যগুলোয় শুরু হয় অশান্তি। এর আঁচ এসে পড়েছে বাংলায়ও। কোথাও জাতীয় সড়ক অবরোধ, কোথাও ট্রেন লাইন ও স্টেশন আগুন জ্বালিয়ে চলছে প্রতিবাদ। বস্তুত প্রতিবাদের নামে চলছে তৃণমূলের দুষ্কৃতকারীদের একাংশের মদদে লাগামছাড়া তাণ্ডব। বিক্ষোভ আন্দোলনের নামে বাস ও ট্রেনের মতো সাধারণের পরিবহণ ব্যবস্থার ওপর এই মাত্রাহীন তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। ফলে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে পাশে দাঁড়ানোর বদলে এই তাণ্ডবে যারপরনাই বিপর্যস্ত এবং চূড়ান্ত অসুবিধার মধ্যে পড়ে বিরক্তই হয়েছেন তারা। এর প্রতিফলন পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্টে। আপাতদৃষ্টিতে অরাজনৈতিক বিক্ষোভ প্রতিবাদ হলেও পশ্চিমবঙ্গের শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই বিক্ষোভে সামিল। বিরোধী কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেছেন, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর লক্ষ্যে এই কালা আইনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হোক। কিন্তু তা কোনোভাবেই হিংসা বা তাণ্ডবের পথে নয়। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরম্পরা মেনেই।

বিজেপি ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের শাসক ও বিরোধী শিবিরের সব দলই প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে এই আইনের। ভারতের চারটি রাজ্যের মতোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুক্রবার বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কিছুতেই চালু করতে দেয়া হবে না নাগরিকত্ব আইন। পশ্চিমবঙ্গের দুই মূল বিরোধী শক্তি- বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়েছে, নাগরিকত্ব আইন, এনআরসিসহ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে তাদের যৌথ আন্দোলন আরও তীব্র করে তোলা হবে। অর্থাৎ সহজ কথায়, মোদি সরকারকে জমি ছাড়বে না এই দলগুলো। তবে দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। ফলে ‘আইন লাগু করতে দেব না’ বললে মাঠ-রাজনীতিতে হাততালি পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু এর বেশি কিছু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। 

এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক-উদ্বেগ ছিলই। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়া মাত্রই সেই উদ্বেগ বিক্ষোভের চেহারা নিয়ে নেমে এসেছে রাস্তায়। সেই বিক্ষোভকে উস্কে দিতে শুক্রবার থেকেই রাস্তায় নেমে পড়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী। শুক্রবার রাতেই উলুবেড়িয়া স্টেশনে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। আটকে পড়ে করমণ্ডল ও কাণ্ডারী এক্সপ্রেস। ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় স্টেশনে। যশবন্তুপুর এক্সপ্রেস, তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, মুম্বাইসহ আটকে পড়ে একের পর এক ট্রেন। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটে আহত হন করমণ্ডল এক্সেপ্রসের চালক। বিক্ষিপ্ত অশান্তির জেরে হাওড়াসহ বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়ার খবর আসতে থাকে।

আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে ফের উত্তপ্ত হয়েছে বাংলা। হাওড়ার কোনা এক্সপ্রেসওয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ওপর বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে লাঠিচার্জও করতে হয়েছে পুলিশকে। হাওড়ায় এদিন একটি বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পার্শ্ববর্তী সাঁকরাইলে রাস্তায় বেরিয়ে এসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বহু মানুষ। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হাওড়া জেলায় মোট ছটি বাসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। ডোমজুড়ের সলপ মোড়ে সকালে দীর্ঘক্ষণ রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন বিক্ষোভকারী জনতা।

হাওড়ায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাসনাবাদের কাছে রেললাইন ও জাতীয় সড়কের ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে বন্ধ করে দেয়া হয় যান চলাচল। অবরোধ এবং স্লোগান দ্রুত হিংসাত্মক চেহারা নেয়। মুর্শিদাবাদের সুতিতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। রঘুনাথগঞ্জ এবং গড়বেতায় বেশ কয়েক জায়গায় পথ অবরোধ করে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানুষ।

তবে দক্ষিণবঙ্গে জনবিক্ষোভ সবেচেয়ে তীব্র আকার নেয় বাংলাদেশ লাগোয়া দুই ২৪ পরগনা জেলায়। ওই দুই জেলায় রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানুষ। রাস্তার ওপরেই মোড়ে মোড়ে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই দুটি জেলায় পাঠানো হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শনিবার সকালে সাগরদিঘির পোড়াডাঙ্গা স্টেশনে জড়ো হন বহু মানুষ। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করেন তারা।

এফসি

আরও পড়ুন