• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ০৮:৩৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ০৮:৩৯ পিএম

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

সমাবর্তনে আচার্যের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিরোধ

সমাবর্তনে আচার্যের যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিরোধ
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়-ছবি : কলকাতা প্রতিনিধি

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় কথায় কথায় মান করেন। সরকারের তরফে তাকে কোনও কিছু না জানানো হলেই, ‘সাংবিধানিক পদের অবমাননা হল’ বলে সাংবাদিকদের ডেকে নালিশ ঠোকেন। তাতেও না থেমে একটি জ্বালাময়ী টুইট করে তারপর তার ক্রোধ একটু প্রশমিত হয়। উপর্যুপরি তার এই আচরণে এমনই একটি ‘ছেলেমানুষ’ ভাবমূর্তি এরই মধ্যে তৈরি করে ফেলেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। এবার বিরোধের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে।

২৪ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে উপাচার্য, তথা রাজ্যপাল ধনখড়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আর তাতেই প্রভূত ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, দেশে নাগরিকত্ব আইন এবং সারা ভারতে নাগরিকপঞ্জি তৈরি করার আবহে রাজ্যপাল আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন-শৃ্ঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সেই আশঙ্কায় এবার সমাবর্তনের উৎসব ঘটা করে করা হবে না। শুধু পড়ুয়াদের ডিগ্রি প্রদান করা হবে। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে কোনও এক সময় নিয়মমাফিক সমাবর্তন অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু উপাচার্য তা মানতে রাজি নন। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, আবারও আমাকে উপেক্ষা করা হল। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে আমার প্রতি এই আচরণ একেবারেই অনভিপ্রেত। আমি বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করব। কিন্তু কী এই বিশেষ ক্ষমতা তা খোলসা করেননি জগদীপ ধনখড়।

চলতি সপ্তাহে মোট ১৭টি অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের যাওয়া আটকে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।

রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্যপাল আসলে পরিস্থিতি খারাপ হবে, বারবার গোয়েন্দা দফতর সূত্রে এমন রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নাকি রাজ্যপালের কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে বারবারই পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ‘রাবার স্ট্যাম্প কিংবা পর্যটক-রাজ্যপাল’ হতে না-চাওয়া জগদীপ ধনখড়ের তা পছন্দ হওয়ার কথা নয়, হয়ওনি। এবারের উপলক্ষ যাদবপুরের সমাবর্তন। গত কয়েদিনের এই টানাপোডেনের পর রোববার (২২ ডিসেম্বর) জগদীপ ধনখড় টুইট করে বলেছেন, আমি এবার রাজ্যপালের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করব। পাল্টা হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে সকলেই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। যাকেই জিজ্ঞেস করি, তিনিই বলেন— কিছু জানি না।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাবরই বাম এবং অতি-বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রাধান্য বেশি। সমাবর্তনের আগে তারা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সমাবর্তনের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে বিক্ষোভ তো হবেই। তাকে ঘেরাও করাও হতে পারে। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য— রাজ্যের রাজ্যপাল বিজেপি এবং ফ্যাসিবাদের একনিষ্ঠ প্রচারক। তিনি সোচ্চারে মোদী সরকারের আনা নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং সমগ্র ভারতে নাগরিক পঞ্জি তৈরি প্রক্রিয়ার সমর্থন করে থাকেন। সারা দেশে যখন বিরোধিতার আগুন জ্বলছে, তখন এই রাজ্যপাল বিবৃতি দিয়ে আইনটিকে সমর্থন করে মোদী সরকারের পাশে থাকার আবেদন জানিয়েছেন। এমন একজন ব্যক্তিত্ব যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে যাদবপুরের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসেন, তাহলে তাকে ‘উপযুক্ত’ স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করে রাখবে পড়ুয়ারা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজেপিপন্থী রাজ্যপালকে বয়কট করার ঘটনা এই প্রথম নয়। জগদীপ ধনখড়ের পূর্বসুরি কেশরীনাথ ত্রিপাঠির আমলেও একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সে সময় বাংলা স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্রী গীতশ্রী সরকার মঞ্চে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, আরএসএস’র ধ্যান-ধারনায় পুষ্ট রাজ্যপালের হাত থেকে আমি ডিগ্রি নেব না। সেই ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গে। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এবারও না ঘটে, সে ব্যাপারে নজর রেখেই এবারের সমাবর্তনে রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানায়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ‘ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ভয় ভাঙানোর’ মহান ব্রতে অবিচল রাজ্যপালও।

ডিজিজি/এসএমএম

আরও পড়ুন