• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২০, ১০:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৮, ২০২০, ১০:১৭ পিএম

পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটীদের সাথে মিলেমিশে পুলিশি তাণ্ডব

পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘটীদের সাথে মিলেমিশে পুলিশি তাণ্ডব
ধর্মঘটীদের পিকেটিং- ছবি : কলকাতা প্রতিনিধি

১৭টি শ্রমিক সংগঠনের ডাকা একদিনের সাধারণ ধর্মঘটে বুধবার (৮ জানুয়ারি)  দেশের অন্তত ১৫টি রাজ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন। মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, ত্রিপুরা, আসাম সহ উত্তরপূর্বের কয়েকটি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গে মোটের ওপর সফল ভারত বনধ।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বনধ পালিত হয় পশ্চিমবঙ্গে। তাৎপর্যপূর্ণ এই কারণে, এর আগে বামফ্রন্ট এবং তাদের সহযোগী দলগুলো একই ইস্যুতে একাধিকবার ধর্মঘট করলেও তা এদিনের মতো পূর্ণতা পায়নি। তার অন্যতম কারণ ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি বিরোধীদের ডাকা বনধের বিরোধিতা। এর আগের প্রতিটি বনধেই পুলিশ এবং প্রশাসন সক্রিয় থেকেছে বনধ বানচাল করার জন্য। সরাসরি সরকারি নির্দেশেই জোর করে দোকান-পাট খোলানো, বেসরকারি বাস চালানো, ধর্মঘটীদের মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো তো থাকেই, তার সঙ্গে থাকে শাসক দলের দুষ্কৃতীদের লাঠিয়ালের ভূমিকায় রাস্তায় নেমে পড়ে বনধ ব্যর্থ করার অতি সক্রিয়তা। এবারের বনধেও সেগুলোর কোনও অভাব ছিল না। তা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের ধর্মঘটীদের দমিয়ে রাখা যায়নি।

কলকাতা তো বটেই রাজ্যের বেশিরভাগ জেলাতেই বনধের প্রভাব সুস্পষ্ট দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বনধের দাবি তালিকায় ছিল নাগরিকত্ব আইনের প্রত্যাহার। মোদী সরকারের এই কালা কানুনের আতঙ্কে ভুগছে গোটা দেশ। তারই প্রত্যক্ষ প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বুধবারের (৮ জানুয়ারি) বনধে। কলকাতার ব্যস্ত বাজারগুলো এদিন বন্ধই ছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক দল-টল বুঝি না। আমরা এনআরসি চাই না। তাই বনধ করেছি।

বাস এবং অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম সকাল থেকেই রাস্তায় ছিল কম। সরকারি দফতরের কর্মীরা মমতা প্রশাসনের জারি করা ‘ডায়াস নন’-এর কোপে পড়ে যাওয়ার ভয়ে কোনও রকমে অফিসে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু বেসরকারি অফিস-কাছারিতে হাজিরার হার ছিল অত্যন্ত কম। বেশ কয়েক জায়গায় বনধের সমর্থনে দোকানপাটও খোলা হয়নি। একান্ত বাধ্য হয়ে যারা এদিন রাস্তায় বেরিয়েছিলেন, তারাও অভিযোগ করেছেন অপ্রতুল পরিবহনের।

একটা সময় পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন ক্ষেত্রের শ্রমিক সংগঠনে পুরো দখল ছিল বামপন্থীদের। গত কয়েক বছরে তা অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছিল। আগের বনধগুলো ব্যর্থ হওয়ার এটাও একটা অন্যতম কারণ বলে মনে করা হত। তবে বুধবারের বনধে ফের চেনা ছকে ফিরতে দেখা গিয়েছে বামপন্থীদের। বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটগুলো এদিন নামমাত্র বাস চালিয়েছে। রাস্তায় লোকজনও ছিল কম, ফলে ট্যাক্সি, অ্যাপ-ক্যাবও সেভাবে চোখে পড়েনি। মোটামুটি একই ছবি দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র।

এবার বনধের আগেই বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছিল বনধ ভাঙতে এলে সরাসরি পাল্টা প্রত্যাঘাত করা হবে। সেই মতো বুধবার সকাল থেকেই রাস্তায় ছিলেন এই দুই রাজনৈতিক দলের নেতারা। কলকাতার যাদবপুর অঞ্চল থেকে ট্রেন বন্ধ করার সময় গ্রেফতার করা হয় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। এছাড়াও একাধিক জেলায় বাম ও কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুধু কলকাতা শহরেই মোট ৯০ জনকে এদিন গ্রেফতার করা হয়েছে।

বুধবারের সাধারণ ধর্মঘটে পুলিশের যে ভূমিকায় সারা রাজ্যে নিন্দার ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা হল ইউনিফর্ম পরেই একের পর এক গাড়ি ভাঙা। এই ঘটনাটির ভিডিও সন্ধ্যার মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।

বুধবার সকাল থেকেই মালদহের সুজাপুরে বনধ সমর্থনকারীদের সঙ্গে তৃণমূল বাহিনীর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ঘটছিল। একটা সময় দু’পক্ষই এলাকা ছেড়ে সরে যায়। এরপরেই আসরে নামে মালদহের পুলিশ। লাঠি, রাইফেলের বাঁট দিয়ে তারা একের পর এক গাড়ির কাঁচ ভাঙতে থাকে। মোবাইল ক্যামেরায় ধরা এই ছবি মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর প্রাক্তন পুলিশ কর্তারাও নিন্দায় মুখর হয়েছেন।

রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বলেছেন, ইউনিফর্ম পরে পুলিশকর্মীরা বিনা প্ররোচনায় একের পর এক গাড়ি ভাঙছেন, এই দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। মালদহের কংগ্রেস সংসদ সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরী জানিয়েছেন, তৃণমূল ও পুলিশ মিলিতভাবে এই বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে। এই ভাঙচুর করে তারা পুরো দায় চাপাতে চেয়েছিল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সমর্থকদের ওপর।

ডিজিজি/এসএমএম

আরও পড়ুন