ছট পূজার সময় থেকেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নজরে ছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
বায়ুদূষণ রোখা যায়নি। পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি গঙ্গার দূষণও। প্লাস্টিক আবর্জনা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দূষণ প্রতিরোধ করতে এতোদিন পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের তরফে যা যা পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা সন্তোষজনক নয়। এমনটাই দাবি করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল।
পরিবেশ দূষণরোধে এতোদিন কী কী করা হয়েছে এবং আগামী দিনে কী করার পরিকল্পনা রয়েছে, তা বিস্তারিত জানাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে নয়া দিল্লিতে। রাজ্যের পুরো পরিকল্পনা বিশদে জানিয়ে হলফনামা দিতে হবে মুখ্যসচিবকে।
জাতীয় পরিবেশ আদালতের অভিযোগ, দূষণ ঠেকাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যা যা পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, তার কোনওটাই মানা হয়নি। কলকাতা ও হাওড়ায় (গঙ্গার অপরপাড়ে) যেভাবে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। গরমকালে দূষণের মাত্রা সেভাবে বোঝা না গেলেও ঠান্ডা পড়তেই পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে যায়। যানবাহনের ধোঁয়ার দূষণ তো আছেই, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণস্থলের দূষণ ও কল-কারখানার দূষণ।
বায়ুদূষণ রোধের জন্য ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট বেশ কয়েকটি নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ ঠিকভাবে পালন না করায় গত বছর নভেম্বরেই পশ্চিমবঙ্গকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল আদালত।
বায়ুদূষণের উৎস কী তা জানতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জরিপ করতে বলেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। ১০ বছরের পুরানো ডিজেল-চালিতগাড়ি ধাপে-ধাপে বাতিল করার কথাও বলা হয়েছিল নির্দেশিকায়। কিন্তু দেখা গিয়েছে, পুরানো গাড়ি বাতিল তো হয়ইনি, উল্টে নির্মাণস্থল ও কারখানার দূষণ আরও বেড়ে গেছে।
শুধু বায়ুদূষণই নয়, প্লাস্টিক দূষণ, গঙ্গা দূষণ রোধের নির্দেশিকাও রাজ্যকে দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই নির্দেশও সঠিকভাবে মানা হয়নি বলে উষ্মা প্রকাশ করেছে তারা। অভিযোগ, গঙ্গার দূষণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গঙ্গার পাড়ের সার্বিক সৌন্দর্যায়নও হয়নি। অথচ দূষণ রোধে নয়া দিল্লির অনুদান পৌঁছে পশ্চিমবঙ্গে। পরিবেশবিদদের মতে, শহরের নোংরা পানি নিকাশি নালার মাধ্যমে গঙ্গায় পড়ছে। অন্তত ৫২টি খাল গঙ্গার দূষণের জন্য দায়ী।
পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গার পাশে কলকাতা, হাওড়া, বালি, চুচুঁড়া, বাঁশবেড়িয়া, বারকপুর, ভদ্রেশ্বর, বজবজ, চন্দননগর ডায়মন্ড হারবার, গারুলিয়া সহ ৪৪টি পৌরসভা রয়েছে। ওই সব এলাকার নোংরা পানি নিকাশি নালার মাধ্যমে গঙ্গায় মেশে। গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়ন করতে গিয়ে গঙ্গার কোনও ক্ষতি করা হয়েছে কিনা, তাও জানতে চেয়েছে পরিবেশ আদালত।
ছবি ● সংগৃহীত
ডিজিজি/এসএমএম