• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ১১:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০, ১১:৫৬ এএম

একুশে : মাতৃভাষার আবেগে সামিল এপার বাংলাও

একুশে : মাতৃভাষার আবেগে সামিল এপার বাংলাও
কলকাতার রাজপথে অমর একুশের প্রভাত ফেরি - ছবি : জাগরণ

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি বা অমর একুশে উপলক্ষে ওপার বাংলার পাশাপাশি মাতৃভাষার আবেগে সামিল হয়েছে এপার বাংলাও। ২১শে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু বাংলা ভাষা দিবস নয়, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অর্থাৎ বিশ্বের সমস্ত মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করার, প্রণত হওয়ার দিন। তবু দিনটির সূত্রপাত যেহেতু বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে এবং বাংলার মাটি রক্তাক্ত করেই হয়েছিল, তাই স্বাভাবিকভাবেই দুই বাংলায় এই দিনটির তাৎপর্য এবং আবেগ একটু বেশিই। আর সেই উপলক্ষেই শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে রাজপথে নেমে আসেন বঙ্গভাষী মানুষ।

একাডেমি চত্বরে ভাষা ও চেতনা, কার্জন পার্কে ভাষা শহীদ স্মারক সমিতির দুটি মূল অনুষ্ঠান তো ছিলই, এর সঙ্গে গোটা পশ্চিমবঙ্গে একাধিক অনুষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণ করে দিনটি উদযাপন করা হয়েছে। বেলেঘাটাসহ কলকাতার একাধিক স্থানে ভাষা শহীদ স্মারকে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ভাষা ও চেতনার তরফ থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একটি সুবিশাল মশাল মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। শুক্রবার সকাল থেকে বাংলা নৃত্য-গীত, কবিতা, একাঙ্ক নাটকের মাধ্যমে দিনটি পালন করা শুরু হয়। কার্জন পার্কের ভাষা শহীদ স্মারক উদ্যানেও সকাল থেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বহু মানুষ।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দফতরের পক্ষ থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি   - ছবি : জাগরণ

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দফতর সারা দিন প্রভাত ফেরিসহ একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি পালন করেছে। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়েছে। কলকাতায় ভাষা দিবসের মিছিলে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতা এবং একাডেমি চত্বরে মশাল মিছিল হয়েছে। সেই মশাল মিছিলেও উঠে আসে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরোধিতা।

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের সকালে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ট্যুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই ট্যুইটে তিনি লিখেছেন—আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। বাংলাজুড়ে পালিত হচ্ছে ভাষা শহীদ দিবস। এই ঐতিহাসিক দিনে বাংলা ভাষার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাঁদের জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম। সকলকে জানাই মাতৃভাষা দিবসের শুভেচ্ছা। আমাদের মাতৃভাষা সহ আমরা সকল মাতৃভাষাকেই ভালোবাসি।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের তরফে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকালে উপদূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মীরা একটি প্রভাত ফেরি বের করে। বিকালে বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণে উপ-হাইকমিশন দফতরের চত্বরে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এর আগে শহীদবেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ ছাড়াও ছিল বাণী পাঠ ও আলোচনাসভা।

এদিন বিভিন্ন আলোচনাসভায় উঠে এসেছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তা হল, কাজের জগতে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষার দাপটে ভারতের মতো দেশে বাংলা বা অন্য কোনো আঞ্চলিক মাতৃভাষা শেষ পর্যন্ত কতখানি কার্যকরী থাকতে পারছে। বক্তাদের উদ্বেগ বিশ্বায়নের বাপ্তি যত বাড়ছে, ততই প্রকট হচ্ছে এই সমস্যাটি। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বলেছেন, অনেক বাংলা মাধ্যম স্কুলকে ইংরাজি মাধ্যম করার সরকারি সিদ্ধান্ত বাংলা ভাষার সর্বনাশের অন্যতম কারণ। এর মাধ্যমে বাংলা যে কোনো কাজের ভাষা নয়, সেই বার্তাই যাচ্ছে। 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের প্রধান তথা বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আনন্দ লাল বলেছেন, ইংরাজি শেখার সঙ্গে বাংলার কোনো বিরোধ নেই। একাধিক গবেষণায় ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, শিশুরা সহজেই অন্তত তিনটে ভাষা শিখতে পারে।

এফসি