• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০, ১০:৩৪ এএম

বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব

লাগামহীন কোভিড-১৯ সংক্রমণে ২৪৬১ জনের মৃত্যু

লাগামহীন কোভিড-১৯ সংক্রমণে ২৪৬১ জনের মৃত্যু
ইতালির দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ মেডিকেল টিমের তৎপরতা- রয়টার্স

লাগামহীন হয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দ্রুত মহামারিতে রূপ নেওয়া ভাইরাসটিতে প্রতিদিন শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটছে। কেবল তাই নয়, ভাইরাসটির শনাক্তস্থল চীনের সীমানা পেরিয়ে এর প্রাদুর্ভাব আরও অন্তত ২৮টি রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়েছে।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা সিএনএন প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৯৩০ জন। আর মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৪৬১ জনে।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) নাগাদ দেশটির মূল ভূখণ্ডে ৬৪৮ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ৭৬ হাজার ৯৩৬ জনে। যার মধ্যে শুধু চীনেই এই সংখ্যা ২৪৪২ জন। যাদের মধ্যে ৬৩০ জন হুবেই প্রদেশের।

এদিকে চীনের পর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সাউথ কোরিয়া'স সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন কর্মকর্তারা বলছেন, শনিবার নাগাদ দেশটিতে নতুন করে আরও ১২৩ জনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যাতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫৬ জনে। এদের মাঝে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি ইতালিতেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা একদিনে বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ জনে। তাদের মধ্যে ৩৯ জনই দক্ষিণাঞ্চলীয় লোমবারডি অঞ্চল এবং ১২ জন ভেনেতো অঞ্চলের বাসিন্দা। চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতালির মিলান শহরের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার নাগরিক এরইমধ্যে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।

লোমবারডির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান গুইলিও গলেরা শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭৭ বছরের এক নারীকে তার বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাকে নিয়ে দেশটিতে এই রোগে দ্বিতীয় ব্যক্তির মৃত্যু হল। এই ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে মিলানের দক্ষিণের ১০টি গ্রামে সব ধরনের ‘পাবলিক অ্যাক্টিভিটিজ’ আপাতত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে গলেরা জানিয়েছেন। রয়টার্স        

এছাড়া জাপানে আক্রান্ত ৭৩৮ ও মৃত্যু ৩, সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত ৮৬, হংকংয়ে আক্রান্ত ৬৮ ও মৃত্যু ২, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৩৫ জন করে, ইরানে আক্রান্ত ২৮ ও মৃত্যু ৬, তাইওয়ানে আক্রান্ত ২৬ ও মৃত্যু ১, মালয়েশিয়ায় আক্রান্ত ২২, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ২১, ইতালিতে আক্রান্ত ৫৫ ও মৃত্যু ২, ভিয়েতনাম ও জার্মানিতে আক্রান্ত ১৬ জন করে, ফ্রান্সে আক্রান্ত ১২ ও মৃত্যু ১, মাকাওয়ে আক্রান্ত ১০, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ৯ জন করে, ফিলিপিন্সে আক্রান্ত ৩ ও মৃত্যু ১, ভারতে আক্রান্ত ৩, রাশিয়া ও স্পেনে আক্রান্ত ২ জন করে এবং বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, ফিনল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, মিশর, লেবানন ও ইসরায়েলে একজন করে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করে শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরস আদহানোম গেব্রেয়েসাস বলেছেন, আমাদের সুযোগের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। সুযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু করতে হবে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি যে কোনো দিকে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ভালো করতে পারলে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। আর যদি ভালো করার সুযোগ নষ্ট করি তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে। সামনেই এটি আসছে।  আল জাজিরা

মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য নতুন এ করোনাভাইরাসের নাম দেওয়া হয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর সংক্রমণে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯।

পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির গবেষণায় ব্যস্ত বিশেষজ্ঞ দল। সৌজন্যে- রয়টার্স

এদিকে নতুন এই করোনাভাইরাস যেভাবে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস-এর পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তার মতে, ভ্রমণজনিত কারণে চীনের বাইরে এই ভাইরাস এসে এখন মানুষ থেকে মানুষে এবং তার থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটছে।

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা বিজ্ঞানীরা।

এসকে