• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৯:২৩ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৯:২৩ এএম

ইরানের মন্ত্রী-এমপির করোনাভাইরাস

ইরানের মন্ত্রী-এমপির করোনাভাইরাস

ইরানের উপ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও একজন এমপির নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এই রোগে এরইমধ্যে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ইরানের উপ স্বাস্থ্য মন্ত্রী ইরাজ হারিরচি এক ভিডিও বার্তায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা ও ওষুধ সেবন শুরু করার কথা জানিয়েছেন বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বার বার তাকে কপাল মুছতে দেখা যায়। ওই সংবাদ সম্মেলনে কভিড-১৯ নাম পাওয়া এই রোগের প্রকোপ নিয়ে সরকার সঠিক তথ্য দিচ্ছে না বলে অভিযোগ নাকচ করেন তিনি।

চীনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই ভাইরাসে ইরানে এখন পর্যন্ত ৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে সরকার ঘোষণা করলেও সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি বলে অনেকের ধারণা।

ইরানে হঠাৎ করেন নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাস দেখা দেওয়ার পর দেশটিতে এরইমধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজারের মতো। তার বাইরে ইরানেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রাণ গেল চিকিৎসা বিজ্ঞানে এখনও অচেনা এই রোগে।  

বিশেষজ্ঞদের মধ্যে চীনের বাইরে বিশ্বে যে তিনটি দেশ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তার একটি ইরান, অপর দুটি দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালির উত্তরাঞ্চল। সম্প্রতি এসব জায়গায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক গুণ করে বাড়ছে।

মঙ্গলবার ইরানের রাজধানী তেহরানের পার্লামেন্ট সদস্য মাহমুদ সেদেঘিও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

“এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব, সেই আশা আর বেশি করছি না,” টুইটে লিখেছেন ৫৭ বছরের ওই এমপি।

এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশজুড়ে সঙ্গীত অনুষ্ঠান ও ফুটবল ম্যাচ বাতিল করেছে ইরান। অনেক প্রদেশে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইরান থেকে যাওয়ার পর কানাডা, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরাকে কয়েকজনের করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় বেশ কয়েকটি দেশ তাদের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল করেছে।

কয়েকটি দেশ সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে। ওমানের খাসাব বন্দরে ইরান থেকে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার তেহরান থেকে ১৩০ জন যাত্রী নিয়ে ইস্তানবুলে যাওয়া একটি বিমান তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তাতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত থাকতে পারে সন্দেহে। ওই বিমানের সব আরোহীকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

এই ভাইরাস সংক্রমণকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অশুভ হিসেবে বর্ণনা করে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, “আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাব।”

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিভিন্ন শহর থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে যে তথ্য তাদের কাছে আসছে, তা ইরানি কর্তৃপক্ষ যে তথ্য দিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি।

ইতালিতে যে সব জায়গায় নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়ছে সেগুলো আলাদা করে ফেলা হচ্ছে, কিন্তু ইরানি কর্মকর্তারা তা করছেন না। কোয়ারেন্টিনকে সনাতনী রীতি হিসেবে বর্ণনা করে তারা বলছেন, তাতে তাদের বিশ্বাস নেই।

ইরানে এই ভাইরাস প্রথম যেখানে ধরা পড়েছে সেই কওম শহর ও মাশহাদে শিয়া ধর্মীয় স্থাপনাগুলো এখনও চালু রয়েছে।

কওমের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতি বছর লাখ লাখ পূণ্যার্থী যান। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে লেখাপড়া করেন। এসব প্রতিষ্ঠান শিয়া বিশ্বের গর্ব বলে মনে করেন কওমের ধর্মীয় নেতারা।

এগুলো বন্ধ হওয়া ধর্মীয় নেতাদের জন্য বিরাট ধাক্কা হবে মন্তব্য করে বিবিসির পারস্য প্রতিনিধি রানা রহিমপৌর বলেছেন, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া এগুলো বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।

“এখানে ধর্মীয় মৌলবাদ ও বিজ্ঞানের মধ্যে স্পষ্ট সংঘাত দেখা যাচ্ছে।”

তাছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ সামালে যে পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার, তার ঘাটতি রয়েছে ইরানের। এরইমধ্যে দেশটিতে মাস্ক ফুরিয়ে গেছে, করোনাভাইরাস পরীক্ষার পর্যাপ্ত কীটও নেই।

এসকে