• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৭:২২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, ০৭:২২ পিএম

সিএএ-এনআরসি

আল-কায়দা, আইএসের বাংলায় পত্রিকা প্রকাশ

আল-কায়দা, আইএসের বাংলায় পত্রিকা প্রকাশ
আল কায়দা-আই এস-এর সদ্য প্রকাশিত পত্রিকার প্রচ্ছদ ● সংগৃহীত (আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন)

সিএএ-এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক এবং অশান্তির মধ্যেই ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এবং আল-কায়দা তিনটি প্রচার ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে দু’টি বাংলায় এবং একটি ইংরেজিতে। শেষের  ম্যাগাজিনটি শুধু ভারতকেন্দ্রিক। এমনটাই খবর প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন। 

খবরে প্রকাশ, কুখ্যাত ওই দুই জঙ্গি সংগঠনের এই ভারতমুখী কৌশল ঘিরে অশনিসঙ্কেত দেখছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তাদের ইঙ্গিত, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতিকে সংগঠন বিস্তারের জন্য অনুকূল মনে করছে ওই দুই সংগঠন। সেই কারণেই এই প্রথম রীতিমতো ঘোষণা করে ভারতমুখী কর্মসূচি ঘোষণা করলো আইএস এবং আল-কায়দা।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন আরও জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে আল-কায়দার প্রচার শাখা আল-ফিরদাউস মিডিয়া প্রকাশ করে দু’টি বাংলা প্রচার পত্রিকা— তারবিয়াহ এবং দাওয়াহ ইলাল্লাহ।

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে আইএসের প্রচার বিভাগ আল-কিতাল প্রকাশ করে সোয়াট-আল-হিন্দ ওরফে ভয়েস অব হিন্দ নামে উর্দু ও ইংরেজিতে লেখা একটি দ্বিভাষিক পত্রিকা প্রকাশ করে।

গোয়েন্দাদের দাবি, টেলিগ্রাম, থ্রিমার মতো কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়ার নির্দিষ্ট কিছু চ্যানেলের মাধ্যমে ওই পত্রিকাগুলো পিডিএফ ফরম্যাটে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

আল-কায়দার ওই দু’টি পত্রিকার মধ্যে তারবিয়াহতে মূলত জিহাদের তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে জিহাদের প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিত এবং কীভাবে জিহাদের মাধ্যমে ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরি করা সম্ভব, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করা হয়েছে।

দাওয়াহ ইলাল্লাহ নামের পত্রিকা সরাসরি সাধারণ মানুষকে জিহাদে নামার ডাক দিয়েছে।

এক গোয়েন্দা কর্তার বরাত দিয়ে আনন্দবাজার আনও জানায়, দাওয়াহ ইলাল্লাহ পত্রিকায় বাংলাদেশের দু’টি সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে আল-কায়দার সরাসরি যোগের কথা স্বীকার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সংগঠিত আন্দোলনে যে আল-কায়দার ভূমিকা ছিল তা, ওই পত্রিকাতে স্বীকার করেছে।

আইএস-ও এই প্রথম ভারতকেন্দ্রিক কোনও প্রচার পত্রিকা প্রকাশ করল।

ভয়েস অব হিন্দ সম্পর্কে গোয়েন্দাদের মন্তব্য, গোটা পত্রিকাতেই রামমন্দির নিয়ে আদালতের রায় থেকে সিএএ-এনআরসি এবং ভারতের কাশ্মীর নীতির স্পর্শকাতর ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এক কর্তার কথায়, সেখানে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, ভারতের ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সামনে জিহাদই একমাত্র রাস্তা।

গোটা বিশ্বে ইসলামিক জঙ্গি কার্যকলাপের ওপর গবেষণা করা সাইট ইনটেলিজেন্স গ্রুপও জানায়, আইএসের এই ভারতকেন্দ্রিক প্রচার পত্রিকার কথা। তাদেরও পর্যবেক্ষণ, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংগঠনের বিস্তারের জন্যই আইএস এখন ভারতমুখী।

আইএস এবং আল-কায়দার কর্মপদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা এক গোয়েন্দা আধিকারিক আনন্দবাজারকে বলেন, আল-কায়দার ওই পত্রিকায় যেভাবে বাংলাদেশের কয়েকটি সামাজিক আন্দোলনে তাদের যোগের কথা স্বীকার করা হয়েছে তা ইঙ্গিতবহ।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, একইভাবে এ দেশেও বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে যেতে চাইছে ওই সংগঠন। তারপর সেই আন্দোলনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠে আন্দোলনকে নিজেদের মতো নিয়ন্ত্রণ করার পরিকল্পনা।

গত কয়েক বছরে নিজেদের কর্মপদ্ধতি অনেকটাই বদলে ফেলেছে আইএস এবং আল-কায়দার মতো সংগঠনগুলো। 

ওই গোয়েন্দা কর্তা বলেন, আগে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হামলা চালানোর প্রবণতা ছিল তাদের। কিন্তু বর্তমানে তারা কোনও দেশে সংগঠন তৈরির সময়, সেখানকার সমমনোভাবাপণ্ন সংগঠনগুলোর আড়ালে প্রাথমিক সংগঠন তৈরি করছে। সেখানকার সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোতে যুক্ত হয়ে প্রকাশ্য সংগঠন বা স্লিপার সেল তৈরি করছে। অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে ধর্মীয় ভাবে কট্টরপন্থী সংগঠনগুলিকে।

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট বড় সরকার বিরোধী আন্দোলন তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে অধিকাংশ আন্দোলনেই ধর্মীয় সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সমস্ত আন্দোলনই যে এই দুই সংগঠনের বর্তমানে টার্গেট, তা নিয়ে সংশয় নেই গোয়েন্দাদের।

এসএমএম