• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০, ০৫:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০, ০৫:৫৯ পিএম

মানবঢাল গড়ে মন্দির বাঁচালো দিল্লির মুসলিমরা

মানবঢাল গড়ে মন্দির বাঁচালো দিল্লির মুসলিমরা
৬৭ বছর বয়সী সালীম কুরেশির নেতৃত্বেই রক্ষা করা হোয় চাঁদবাগের মন্দির- বিবিসি/সিয়াসাত নিউজের সৌজন্যে

দিল্লির বুকে জ্বলছে সহিংসতার আগুন। উগ্রবাদি হিন্দুপন্থীদের হামলায় রীতিমত বিপর্যস্ত ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুসলমান সম্প্রদায়। এতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে অন্তত ৩৪ জনের। দেশটিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বেছে বেছে হামলা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির গড়লেন স্থানীয় মুসলিমরা।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) হাতে হাত রেখে মানবশৃঙ্খল করে দিল্লির সবচেয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা হিসেবে প্রসিদ্ধ চাঁদবাগের একটি মন্দির ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছেন সেখানকার মুসলিমরা। এর মাত্র একদিন আগেই শহরের অশোকনগর এলাকার একটি মসজিদে হামলা চালায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু বুধবার চাঁদবাগ মন্দিরে হামলা প্রতিরোধ করে ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির গড়লেন স্থানীয়রা।

এই মানবশৃঙ্খলে অংশ নিয়েছিলেন সালীম কুরেশি। ৬৭ বছর বয়সী এ ব্যক্তি বলেন, মন্দিরটির কোনও ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটি হতো আমাদের জন্য লজ্জাজনক।

শুধু পুরুষেরাই নয়, মন্দির বাঁচাতে দাঁড়িয়েছিলেন মুসলিম নারীরাও। তাবাসসুম নামে ৩০ বছর বয়সী এক নারী বলেন, আমরা নিশ্চিত করেছি মন্দিরটির যেন কিছু না হয়। হিন্দু ভাইদের দোকানগুলোরও যেন কোনও ক্ষতি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখছি। মূলত সংঘাতের এক পর্যায়ে দিল্লির একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের প্রতিশোধ হিসেবে মন্দিরটি ভাঙার গুঞ্জন ওঠে। সে কথা কানে যেতেই এই পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় মুসল্লিরা।

এদিকে, সহিংসতার শিকার অন্যতম এলাকা দিল্লির সীলামপুরের মুসলিম বাসিন্দাদের প্রতি অনন্য ভ্রাতৃত্বের চমৎকার উদাহরণ তৈরি করেছেন সেখানকার স্থানীয় হিন্দুরা। তারা জোর দাবি করেছেন, যে ধর্মেরই হোক বহিরাগত কেউ এসে পাড়ার কাউকে মারবে তা হতে দেয়া যায় না। তাছাড়া এলাকায় মোতায়েন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের খাবার-পানি দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারা।

গৌরব নামে এক যুবক বলেন, আমাদের এলাকায় যারা নিরাপত্তা দিচ্ছেন, তাদের সবার খেয়াল রাখছি। যতক্ষণ তারা এলাকায় থাকবেন, আমরা তাদের পাশে আছি। এছাড়া, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়া মানুষদেরও বাড়ি গিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছে দেয় তারা।

গত রোববার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) সমর্থক-বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারও অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৪ জনে।

বুধবার সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। তিনি শান্তি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার সফরের পরপরই ভজনপুর, মৌজপুর এবং কারাওয়াল নগরে নতুন করে অগ্নিসংযোগ ও অশান্তির ঘটনা ঘটে।

এদিকে, সহিংসতার ঘটনার তিনদিন পর বুধবার এ বিষয়ে প্রথমবার মুখ খুলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

এসকে