• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২০, ০২:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৬, ২০২০, ০২:১৫ পিএম

সহসাই নির্মূল হবে কোভিড-১৯ : নোবেলজয়ী লেভিট

সহসাই নির্মূল হবে কোভিড-১৯ : নোবেলজয়ী লেভিট
জীবপদার্থ বিজ্ঞানী মাইকেল লেভিট

মানব সভ্যতাকে আতঙ্কে ফেলে দেয়া কোভিড-১৯ দুর্বল হয়ে পড়বে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন রসায়নে নোবেলজয়ী জীবপদার্থ বিজ্ঞানী মাইকেল লেভিট। কোভিড মহামারি সমাপ্তি সন্নিকটে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ক্যালকালিস্টে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যেসব দেশ ও অঞ্চল সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে সেখানে বড় প্রভাব ফেলতে পারবে না কোভিড।

মাইকেল লেভিট ইসরায়েলের বাণিজ্যবিষয়ক পত্রিকা ক্যালকালিস্টকে এই সাক্ষাৎকার দেন। ১৩ মার্চ (শুক্রবার) অনলাইনে প্রকাশিত হয়।

লেভিট বর্তমানে ইসরায়েলের তেল-আবিবে বসবাস করছেন। তার ফ্লু জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়ায় ফোনে ওই সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

অবস্থা এখনও অনিশ্চিত তবে তার বিশ্বাস, সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিত করতে পারলে মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। স্বাস্থ্য-নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

মাইকেল লেভিট জানান, চীনের বন্ধুরা যখন তাদের পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করলেন তখন আমি বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখলাম। আশাবাদী হওয়া যায় এমন কিছু খুঁজতে লাগলাম। হুবেই প্রদেশে যখন দিনে ৩০ ভাগ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলে তখন তা ছিল খুব আতঙ্কজনক পরিসংখ্যান। এই হারে চলতে থাকলে ৯০ দিনে গোটা পৃথিবীর মানুষ তাতে আক্রান্ত হতো। আমি একজন ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু আমি সংখ্যা ও তার বৃদ্ধি বিশ্লেষণ করতে পারি।

৭৮টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেন লেভিট। গবেষণার ভিত্তিতেই এসব তথ্য জানানো হয়। উহানে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হলেও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করায় দেশজুড়ে সংক্রমণের হার মাত্র ৩ ভাগ।

লেভিট বলেন, ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে দেখলাম সেখানে ১৮শ নতুন রোগী রয়েছে। ষষ্ঠ দিনে তা ৪ হাজার ৭শ'তে পৌঁছায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে এসে নতুনভাবে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকে এবং তা অব্যাহত ছিল। আরও এক সপ্তাহ পর উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে মৃতের সংখ্যাও। আক্রান্তের পরিসংখ্যানের এই নাটকীয় পরিবর্তনের একটি মধ্যবিন্দু পাওয়া যায় যা থেকে এই মহামারির পরিসমাপ্তির একটা আশা করা যায়।

আমি তখন এই উপসংহারে পৌঁছাই যে, চীনে দু’সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মার্চের শেষ দিকে চীন থেকে এ ভাইরাস নির্মূল হয়ে যাবে।

লেভিট সেময় আরও দাবি করেন, কোভিডে চীনে আক্রান্ত ৮০ হাজার পৌঁছাবে আর মারা যাবে ৩ হাজার ২৫০ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত ৮১ হাজার আর প্রাণহানি হয়েছে ৩ হাজার ২৭৭ জনের। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়ে তার দেয়া আগাম তথ্য মিলে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লেভিট।

লেভিট বলেন, চীনে শুরুতে দিনে দুই দশমিক দুজন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে। এই উচ্চমাত্রার সংক্রমণ বড় বিপর্যয়ের দিকেই নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পরে আক্রান্তের হার কমতে থাকলো এবং এখনও দিনে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি।

লেভিট এর ব্যাখ্যায় বলেন, যদি কোনও ব্যক্তি ব্যাংকে তার জমা দেয়া অর্থের বিপরীতে প্রথম দিন ৩০ শতাংশ সুদ পান আর দ্বিতীয় দিন পান ২৯ শতাংশ তাহলেই বুঝতে পারা যায় যে ওই ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত খুব বেশি পাবেন না।

তিনি ব্যাংকের উদাহরণ টেনে আবারও বলেন, যদি সুদ কমতে থাকে তখনও কিন্তু টাকা উপার্জন অব্যাহত থাকবে। যে আসল জমা ছিল তা কিন্তু কমবে না। এতে সুদের জোগান যোগ হবে খুব ধীরে। রোগের ক্ষেত্রেও এ পরিসংখ্যান আলাপ করা যায় কারণ মানুষ তখন প্রতিদিনের নতুন নতুন আক্রান্তের খবরে খুব আতঙ্কে থাকে। অথচ প্রকৃত চিত্র হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসা মানে এর বিস্তৃতি একদিন নাই হয়ে যাবে।

লেভিট যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ক্রমবর্ধমান মডেল অনুযায়ী আপনি ভেবে থাকেন যে নতুন লোক প্রতিদিনই আক্রান্ত হবে কারণ আপনি প্রতিদিনই নতুন মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। কিন্তু যদি আপনি নিজের সামাজিক পরিসর চিন্তা করে দেখেন আপনার আসলে প্রতিদিন একই মানুষদের সঙ্গে মূলত দেখা হয়। আপনার নতুন মানুষদের সঙ্গে দেখা হয় পরিবহনে। কিন্তু পরিবহনে কিছুদিন পর দেখা যাবে হয় সব যাত্রী আক্রান্ত অথবা তারা সেরে উঠেছেন।

আরও একটি কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, আপনি সবসময় সবাইকে জড়িয়ে ধরেন না। এছাড়া কারও একটু ঠান্ডা লাগলে আপনি তাকে এড়িয়ে চলবেন, যা আমরা এখন করছি। যত অসুস্থতা দেখা যাবে তত সংক্রমণ এড়াতে আপনি সচেতন হবেন। এভাবে প্রতি তিন দিনে একজন ব্যক্তি দেড়জনকে আক্রান্ত করতে পারবে যা ক্রমে আরও কমে আসবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি চীন প্রায় পুরোটাই কোয়ারেন্টাইনে ছিল। মানুষ শুধু জরুরি কেনাকাটা করতে বের হয়েছে এবং অন্যকে এড়িয়ে চলেছে। প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেস এ কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়নি।

ইতালির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতালিতে সামাজিক সম্পর্ক খুব উষ্ণ, তাদের খুব সমৃদ্ধ সামাজিক ইতিহাস আছে। যে কারণে যিনি আক্রান্ত হবেন তাকে সুস্থদের থেকে দূরে রাখতে হবে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অনেক মানুষের শরীরই এই রোগ প্রতিরোধের জন্য উপযুক্ত ছিল।

তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কোভিড সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিসংখ্যান নিয়ে ধারণা দিতেও অস্বীকৃতি জানান লেভিট।

লেভিট বলেন, অতি প্রতিক্রিয়া দেখালে আরেক সমস্যা সৃষ্টি হবে। চাকরি হারানোর পাশাপাশি চারপাশে হতাশার চিত্র ফুটে উঠবে।

লেভিটের এসব বক্তব্য দ্রুতই চীনা ভাষায় তার বন্ধুরা অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেন। তার বক্তব্য তখন চীনের মানুষের মনে আশা জাগায়। তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় রাতারাতি তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সেখানে। চীনের বিভিন্ন মাধ্যমে এরপর তার সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়।

২০১৩ সালে রসায়নে নোবেল পান আমেরিকান-ব্রিটিশ-ইসরায়েলি গবেষক লেভিট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ইন্ডিপেন্ডেন্টটিভি।

এসএমএম