• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ৩১, ২০২০, ০৪:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৩১, ২০২০, ০৪:১৮ পিএম

নতুন করে নিজামউদ্দিনের ৩৫ আক্রান্ত, বাড়ছে উদ্বেগ

নতুন করে নিজামউদ্দিনের ৩৫ আক্রান্ত, বাড়ছে উদ্বেগ
নিজামউদ্দিনের সেই জমায়েত ● পিটিআই

২২ মার্চ (রোববার) দেশজুড়ে ‘জনতা কার্ফু’ পালন হয়েছে। ২৪ তারিখ দেশজুড়ে ঘোষণা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু তার পরেও দিল্লির মারকাজ নিজামউদ্দিন মসজিদে ছিলেন শয়ে শয়ে দেশ-বিদেশি মানুষ। একটি ধর্মীয় জমায়েত উপলক্ষে জড়ো হওয়া মানুষজনের মধ্যে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্ত ছিলেন অন্তত ২০০ জন। 

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) দিল্লি ও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আরও ৩৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এই সম্মেলনের জেরেই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

এর মধ্যেই সোমবার (৩০ মার্চ) দিল্লির লোকনায়ক হাসপাতালে ভর্তি ১০২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার তাদের মধ্যে ২৪ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। নিজামউদ্দিন মসজিদ থেকে এনে রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতালেও অনেককে ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের রিপোর্ট এখনও আসেনি। সেই রিপোর্ট এলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারেই শঙ্কা প্রকাশ করেছে রাজ্য প্রশাসন। অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেও ১১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর মিলেছে।

জানা গেছে, ওই জমায়েত থেকে তেলঙ্গানায় ফেরা ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে আরও এক জনের। আন্দামান নিকোবরে ফিরে যাওয়া ১০ জনের করোনা সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে।

দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি দেশ-বিদেশের কয়েকশো মানুষ। সোমবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ওই মসজিদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও মসজিদ কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে দিল্লিতে এবং পরে গোটা দেশে লকডাউনের জেরে ওই অনুষ্ঠানের পরে গন্তব্যে ফিরতে পারেননি অতিথিরা। তার জন্যেই মসজিদে ছিলেন।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তবলিগি জামাত। তাতে দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার মানুষ ছিলেন।

পুলিশ জানায়, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, তাইল্যান্ড, নেপাল, মায়ানমার, বাংলাদেশ, কিরঘিজস্তান, আফগানিস্তান, আলজিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, কুয়েত থেকে প্রতিনিধিরা এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠান শেষে তারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েছিলেন। যেমন- ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন তেলঙ্গানায়। এখন এই বিপুল সংখ্যক মানুষ কোথায় কোথায় গিয়েছেন, কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের খুঁজে বের করাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকারগুলোর কাছে।

এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই অনুষ্ঠানে অন্তত ১২০০ মানুষ ছিলেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গেলেও ছ’তলা ওই মসজিদে থেকে গিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের অন্তত সাড়ে আটশো প্রতিনিধি। ডরমিটরিতে থাকছিলেন তারা। এর মধ্যেই ওই মসজিদ সিল করে দিয়েছে প্রশাসন। সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বহু মানুষ দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্র খবর, সোমবার তাদের প্রায় ৩০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকের রিপোর্ট পজিটিভ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে তদারকি করা মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, ‘ওই জমায়েতে যোগ দেয়া লোকজনের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন, তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে সেটা বিরাট কঠিন কাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রতিদিন বিষয়টির নির্যাস জানানো হচ্ছে। তিনিও নজর রাখছেন। শ্রীনগর ও হায়দরাবাদ মিলিয়ে এই জমায়েতে যোগ দেয়া কয়েক জনের মৃত্যুর পর সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোকে জরুরি সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, ওই অনুষ্ঠানের শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে ২৫টিরও বেশি বাস ছেড়েছিল। সেই বাসে কারা ছিলেন, তাদের গন্তব্য কোথায়, তারা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন, সেই খোঁজও শুরু হয়েছে কাল থেকে। নিজামুদ্দিন এলাকা জুড়ে চলছে ড্রোন নজরদারিও।

অন্যদিকে নিজামউদ্দিন কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিবৃতিতে সাফাই দেয়া হয়েছে, সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার অনেক আগেই দিল্লিতে লকডাউন জারি হয়েছে। তাই ওই প্রতিনিধিরা আটকে পড়েছিলেন। ট্রেন ও বিমান পরিষেবা আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা ফিরতে পারেননি। সেই কারণেই ওই মসজিদেই থাকছিলেন তারা। আনন্দবাজার।

এসএমএম