• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২০, ০৭:১৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২০, ২০২০, ০৭:৩৫ পিএম

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড

ভারতীয় বিশেষ সংস্থার হাতে আটক খুনি মোসলেহ উদ্দিন!

ভারতীয় বিশেষ সংস্থার হাতে আটক খুনি মোসলেহ উদ্দিন!
আগের ছবি (ডান) ও বর্তমানের ছবি

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী বনগাঁও এলাকা থেকে একজন বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তিকে আটক করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। আটক এই ব্যক্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের সময় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন নিজ হাতে জাতির পিতার বুকে গুলি চালায়। এই হত্যাকাণ্ড জাতির পিতার প্রায় পুরো পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

ভিডিও:ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাতে মোসলেহ উদ্দিন সন্দেহে আটক সেই ব্যক্তি- দ্য ইস্টার্ন লিংক

ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার দেয়া তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যক্তি বনগাঁওয়ের নিবিড় একটি এলাকায় ইউনানী দাওয়াখানা পরিচালনা করে আসছেন। তার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টির পর থেকেই নজর রেখে আসছিল বিশেষ সংস্থার সদস্যরা।

নিরাপত্তা বিভাগের এই কর্মকর্তা জানান, এই ব্যক্তির শারীরিক গঠন ও চেহারার প্রতিটি ইঞ্চি সেই খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। আমরা তার ছবিসহ যাবতীয় তথ্য একাট্টা করে বাংলাদেশের বিশেষ সংস্থার কাছে যাচাই-বাছাই করার জন্য এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। তথ্যের নিশ্চয়তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।

বিশেষ সূত্র মতে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের মাঝে যারাই পলাতক রয়েছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে এখনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর। এছাড়া তাদের চলাফেরার প্রতিটি ক্ষেত্রে আইএসআই প্রত্যক্ষ সহযোগিতাও অব্যাহত রয়েছে।

মূলত গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত একটি ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে মোসলেহ উদ্দিন হিসেবে সন্দেহভাজন এই ব্যক্তিকে শনাক্ত করে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা।

সংস্থাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, লকডাউনের কারণে এই কার্যক্রম কষ্টসাধ্য হলেও মিত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য অপারেশনটি পরিচালনা করা হয় যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে। সার্বিক বিষয় নিশ্চিত হওয়া মাত্র তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত। একবার তথ্য নিশ্চিত হওয়া মাত্র আমরা তাকে গ্রেফতার করে ফেলবো। কোনও সুযোগই দেয়া হবে না সেক্ষেত্রে।

এর আগে সম্প্রতি আবদুল মাজেদ নামে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেক আসামিকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় আটকের পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম এই ব্যক্তির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গেই তারা তথ্য যাচাই-বাছাই করছেন। যাতে ভুলবশত সংখ্যালঘু কোনও নির্দোষ মুসলিম ব্যক্তি আটকের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে। সেটা হলে সংস্থার কার্যক্রম বিরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। সেজন্য এই ব্যক্তি সম্পর্কে সর্বোচ্চ তৎপরতার সঙ্গে তথ্য যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তারা।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম মেয়াদকালে (১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালীন) বিশেষ অনুরোধে মোসলেহ উদ্দিনসহ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামীদের খোঁজে মাঠে নামে ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা।

তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে মোসলেহ উদ্দিন সন্দেহে এক ব্যাক্তিকে আটক করে বিএসএফ। কিন্তু যাচাই বাছাইয়ের পর সেই ব্যক্তি মোসলেহ উদ্দিন নয় বলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এর আগে ১৯৯৭ সালে নজরুল-শরৎ স্মৃতি সংঘের আবদুল জব্বার নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের আঁতাত থাকার তথ্য পায় বাংলাদেশ ও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সে সময় তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এক পর্যায়ে কাঁপাসডাঙায় অবস্থিত আবদুল জব্বারের ডেরায় হানা দেয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি যৌথ দল। কিন্তু সেই অপারেশনে জব্বারকে আটক করা গেলেও পালিয়ে যেতে সফল হয় মোসলেহ উদ্দিন।

২০১৯ সালে নেপালের একমাত্র মুসলিম সংসদ সদস্য মির্জা দিলশাদ বেগের সঙ্গে থাকাকালে এক হামলায় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন নিহত হওয়ার তথ্য ছড়িয়ে পড়লেও পরবর্তীতে সে তথ্য ভুয়া বলে জানা যায়।

ধারণা করা হয় নিজেকে আড়াল করতেই এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মোসলেহ উদ্দিন। আর সে কাজে একটি বিশেষ সংস্থা যে তাকে সহায়তা প্রদান করে তাও কারও বুঝতে বাকি থাকে না।

একাধিকবার মোসলেহ উদ্দিনের ব্যাপারে পানি ঘোলা হওয়ার কারণে ধূর্ত এই খুনি রিসালদারের ব্যাপারে এবার শতভাগ নিশ্চিত হয়েই তাকে আটক করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে চায় ভারতের শীর্ষ এই নিরাপত্তা সংস্থা।

এসকে/এসএমএম

আরও পড়ুন