• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২০, ০৩:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২, ২০২০, ০৩:৫৯ পিএম

নিহত মেজর (অব.) সিনহা ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঘটনা তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, অগ্রিম মন্তব্য নয়

ঘটনা তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ,  অগ্রিম মন্তব্য নয়

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর নিহতের ঘটনা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

রোববার (২ আগস্ট) ধানমণ্ডিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের আগে কিছু বলা সমীচীন নয়। একটি নিরপেক্ষ তদন্তের পরই এ নিয়ে বলা হবে।

এসময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাবেক এই সেনা সদস্য নিহতের ঘটনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি, পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি একং সামরিক বাহিনীর একজন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাদের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি আমরা। তারা বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত প্রকাশের পরই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো যাবে। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করলে তা তদন্তের ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।

মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, দুর্ঘটনা হোক বা যাই বলেন ঘটনা তো একটা ঘটেছে। এটা অস্বীকারের কিছু নেই। সরকার এর সঠিক কারণ খুঁজে সামনে এনে দোষীকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর। আপনারা সাংবাদিকরা যতদূর শুনেছেন তা আপনাদের মধ্যে থাক। আমি যা শুনেছি তা আমার মধ্যেই থাকুক। তদন্তের আগে এ নিয়ে একটি কথাও বলতে চাচ্ছি না। 

অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা - সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি যতদূর জানি, এখনও তাকে বরখাস্ত করা হয়নি। তবে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়টিও তদন্ত কমিটির ওপর নির্ভর। বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের পর যা বেরিয়ে আসবে তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সে কতোখানি সঠিক বা ভুল করেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে।

এরপর দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশংসা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তারা কাজ করছেন বলেই দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর এবং সাবেক এসএসএফ সদস্য সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬) নিহত হন। 

এ ঘটনা প্রসঙ্গে পুলিশের দাবি, নিরাপত্তা চৌকিতে দায়িত্বরত পুলিশ মেজর (অব.) সিনহার গাড়ি তল্লাশি করতে চাই তিনি তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে মেজর সিনহা তার সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করে গুলি চালানোর চেষ্টা করে। এ সময় 'আত্মরক্ষার্থে' তার ওপর গুলি চালান বাহারছড়া ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর লিয়াকত। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাজলে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা সদস্যের ব্যবহৃত গাড়ি তল্লাশি করে ৫০ পিস ইয়াবা, বিদেশি মদের বোতল, অল্প পরিমাণ গাঁজা, একটি বিদেশি পিস্তল ও ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে পুলিশ।  সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিহত এই সেনা সদস্যের দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে এই গুলির ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় সেনাবাহিনীর একটি দল। স্থানীয় বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী তখন তাদের দেখে এগিয়ে আসেন। এ সময় সেনা সদস্যদের কাছে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত তুলে ধরেন ঐ ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। যাদের মধ্যে স্থানীয় এক মসজিদের মোয়াজ্জিম এবং একজন ফেরিওয়ালা রয়েছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, একজন পুলিশের তাক করা অস্ত্রের মুখে দুই হাত ওপরে তুলে ধরে গাড়ি থেকে দুইজন লোক নেমে আসেন। তাদের একজন গাড়ির পেছন দিকে এসে দাঁড়ান। আরেকজন চালকের আসন থেকে  হাত উঁচু অবস্থায় নেমে এসে অস্ত্রধারী ঐ পুলিশের সামনে দাঁড়ান। তিনি পুলিশদের কিছু একটা বলে বোঝাতে চাইছিলেন ঠিক তখনই পিস্তল হাতে থাকা ঐ পুলিশ 'অফিসার কুত্তার বাচ্চা' বলেই তার বুকে গুলি চালিয়ে দেন। এতে ঐ ব্যমতি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয় সূত্রের বরাতে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

তবে তার আগেই অপ্রত্যাশিত এই ঘটনার সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নেয় সরকার। দ্রুততম সময়ে বিশেষ কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিষয়টি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্তের বিস্তারিত প্রতিবেদন আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

এসকে