• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০, ১২:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০, ১২:৫৪ পিএম

ট্রাম্প-বাইডেন প্রথম নির্বাচনী বিতর্ক 

কটাক্ষ, বিশৃঙ্খলা, বিবাদে হতবাক বিশ্ব

কটাক্ষ, বিশৃঙ্খলা, বিবাদে হতবাক বিশ্ব

কারও কারও ভাষায় 'যাচ্ছে তাই ব্যাপার'। কেউ বলছেন 'কুরুচিপূর্ণ মানহীন বিতর্ক'। ৩রা নভেম্বরে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম দফা বিতর্কে মুখোমুখি হওয়া দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের আলোচনাকে ঠিক এভাবেই মূল্যায়ণ করছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। আর বোদ্ধারা বলছেন, জন কেনেডি-কোনার থেকে শুরু করে ট্রাম্প-বাইডেনের আগ পর্যন্ত আজ অবদি  মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে এমন বিব্রতকর এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রার্থী বিতর্কের মঞ্চায়ণ আর কখনও হয়নি।

শুধু তাই নয় আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করোতে যাওয়া রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যকার প্রথম পর্বের এমন অপ্রাসঙ্গিক বিতর্ক দেখে হতবাক পুরো বিশ্বও।

মঙ্গলবার এই দুই প্রার্থী নির্ধারিত তিনটি বিতর্কের প্রথমটিতে অংশ নেন ওহাইওর ক্লিভল্যান্ডে। ফক্স নিউজের ক্রিস ওয়ালেস এই বিতর্কের সঞ্চালনা করেন। বিতর্কের আলোচিত বিষয়গুলো ছিল সুপ্রিম কোর্ট, করনা মহামারি, অর্থনীতি এবং জাতি। ক্লিভল্যান্ডের কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিতর্কের অন্যান্য পরিকল্পিত বিষয়বস্তু ছিল নির্বাচনের অখণ্ডতা এবং ট্রাম্প ও বাইডেনের পূর্বের কার্যক্রমে আলোকপাত করা।

শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের এবং সামরিক দলের নিন্দা করতে ইচ্ছুক কিনা সঞ্চালক ক্রিস ওয়ালেস প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।ট্রাম্প বলেন, "আমি প্রায় সবকিছুই বামপন্থী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, ডানপন্থী নয়। আমি যে কোন কিছু করতে রাজি আছি। আমি শান্তি চাই।"

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মন জয় করার জন্য তাদের বক্তব্য তৈরি করেছেন। এক্ষেত্রে ট্রাম্পকে বাইডেন ঠাট্টা করে প্রশ্ন তোলেন: "এই লোকটি আফ্রিকান আমেরিকানদের রক্ষাকর্তা? এই লোকটি কার্যত কিছুই করেনি।"

চলমান মহামারি প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন যে, প্রতি ১০০০ আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে ১ জন করোনাভাইরাসের কারণে মারা গেছেন, এবং যদি ট্রাম্প দ্রুত কিছু না করেন, তাহলে তা হবে ৫০০ জনের মধ্যে ১ জন।

তবে অপ্রত্যাশিতভাবেই ট্রাম্প করোনাভাইরাসের থেকে আলোচনা ঘুরিয়ে দিয়ে পাল্টা হামলা হানতে ১৯৯৪ সালের পাস করা একটি বিতর্কিত অপরাধ বিলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন, যা বাইডেনের অনুমোদনক্রমে পাস হয়েছিল।

কৃষ্ণাঙ্গ ইস্যুতে ট্রাম্প বলেন, তিনি জোর দিয়ে বলেন যে বাইডেন কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতি এ দেশের অন্যান্যদের চাইতে অনেক খারাপ আচরণ করেছেন।

বাইডেন বিতর্কের সময় চীনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা তুললে, বাইডেন পুত্র হান্টারের চীনসহ বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আতাতের মাধ্যমে লাখ লাখ ডলার মুনাফা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনেন।

তিন বলেন, হান্টার ও বাইডেন চীন এবং অন্যান্য বিদেশী স্বার্থ থেকে লক্ষ লক্ষ মুনাফা অর্জন করেছে, যে অভিযোগ বারবার অস্বীকার করা হয়েছে। 

তবে এধরনের অভিযযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বাইডেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কবে তার ব্যক্তিগত কর প্রদানের বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন এই বিষয়টি এদিনের আলোচনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলেও সে প্রসঙ্গ আমলেই নেননি ট্রাম্প।

এর আগে নিউয়র্ক টাইমসেরএকটি প্রতিবেদন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যে তিনি প্রতি বছর ব্যক্তিগত আয়কর মাত্র ৭৫০ ডলারপ্রদান করেছেন। ২০১৬ সাল থেকে ট্রাম্প ছাড়া সকল প্রেসিডেন্ট তাদের কর প্রকাশ্যে প্রকাশ করেছে। ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রার্থী জো বাইডেন দ্রুত এই বিষয়টিকে আক্রমণের একটি কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহার করে বলেন যে ট্রাম্প "ট্যাক্স কোডের সুযোগ নেন" এবং "একজন স্কুল শিক্ষকের চেয়ে কমকর প্রদান করেন"। 
ট্রাম্প এর জবাবে বলেন যে সকল ব্যবসায়ী নেতারা একই কাজ করেন "যদি না তারা নির্বোধ হয়"। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ক্লিভল্যান্ডে তাদের প্রথম প্রেসিডেন্ট বিতর্কের সময় ব্যাপকভাবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করেছেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন তাঁর প্রচারণার র‍্যালিতে উপস্থিত সমর্থকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় না করার জন্য তাঁর ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।

মঙ্গলবার রাতের বিতর্কের সময় ট্রাম্প বলেন যে তিনি মনে করেন মাস্কে কোন সমস্যা নেই। পকেট থেকে একটি মাস্ক বের করে বলেন,"যখন প্রয়োজন হয় তখন আমি মাস্ক পরি"।

ট্রাম্প তার প্রচারণার র‍্যালিতে "৩৫ থেকে ৪০,০০০ লোকের উপস্থিতি সম্পর্কে বলেন, "মানুষ আমার কথা শুনতে চায়"।সাবেক রিপাবলিকান হারমান কেইন, যিনি মাস্ক বা সামাজিক দূরত্ব বজায় ছাড়াই জুন মাসে ট্রাম্পের একটি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, তার নয় দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং এক মাস পর মারা যান।

এরপর ট্রাম্পকে সঞ্চালক জিজ্ঞেস করেন যে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা আইন প্রতিস্থাপনের কোন পরিকল্পনা তার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।

সামগ্রিক এই আলোচনার প্রেক্ষিতে দেখা যায়, প্রতিটি বিষয়ে প্রাসঙ্গিক, তথ্যবহুল ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো উত্তর না দিয়ে সেগুলোকে কেন্দ্র করে এই দুই প্রার্থী কেবল মাত্র একে অন্যকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করে গেছেন। 

একইভাবে দেশটির সুপ্রীট কোর্টে বিতর্কিতভাবে নতুন আইনজীবী নিয়োগ, বর্ণবিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল ইস্যুকেই হাস্যকর ভাবে ব্যক্তিগত বচসার বিষয়ে পরিণত করেন তারা।

বিবিসি'র উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্থনি জারখারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী এই 'বিতর্ক' ঠিক কীরকম হতে যাচ্ছে তা আগে থেকেই অনেকটা পরিষ্কার ছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ছিল বাইডেনকে বিব্রত করা, যা নিশ্চিত করতে তিনি ক্রমাগত বাইডেনের কথার মধ্যে তাকে বাধা দিয়েছেন। এর ফলে ৯০ মিনিটের বিতর্কের মধ্যে বেশ কয়েকবার দু'জনের মধ্যে বচসা হয়েছে। ট্রাম্প যেমন প্রশ্ন তুলেছেন বাইডেনের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে, তেমনি বাইডেনও ট্রাম্পকে 'ক্লাউন' বলে কটাক্ষ করেছেন। বাক-বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনকে ধমকে দিয়ে বলেন, "তুমি কি চুপ করবে?"

বিতর্কের মধ্যে বাইডেনের কথা থামিয়ে দিয়ে বারবার তাকে বাধা দিয়েছেন ট্রাম্প প্রতিট ক্ষেত্রেই আলোচনার সাবলীলতা নষ্ট করেছেন তিনি এবং তাঁর কথার প্রবাহে এক পর্যায়ে একই পথে পা বাড়ান বাইডেনও।

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সারা বিশ্ব ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে এই দুই প্রার্থীর নির্বাচনী বিতর্ক ব্যাপকভাবে হতাশ করেছে মার্কিনিদের। এমনটাই দাবি করছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো। সাধারণ মার্কিনিদের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে তারা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের মত পরাশক্তির নেতৃত্ব দেয়ার মানসিকতায় একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যে দৃঢ়তা ও বলিষ্ঠতা থাকা প্রয়োজন তা তাদের মাঝে অনেকাংশেই ঘাটতি রয়েছে। তবে সর্বোপরী বাইডনের আলোচনাকে 'সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে যৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপনে' তুলোনামূলক সফল বলে দাবি করলেও ট্রাম্পের আচরণে রীতিমত হতাশ সেদেশের মানুষ।

ফক্স নিউজ/বিবিসি/দ্য গার্ডিয়ান/রয়টার্স

এসকে