• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২০, ১২:১২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৩০, ২০২০, ০১:১০ এএম

গীর্জায় হত্যাকাণ্ড

ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার, মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ

ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার, মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ
নটরডেম ডি নিস নামক আলোচিত এই গীর্জার ভেতরেরি ঘটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা - আল জাজিরা।

সম্প্রতি মহানবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)-এর বিকৃত কার্টুনচিত্র প্রকাশ এবং ইসলাম বিদ্বেষী বিতর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি ফ্রান্স সরকারের সমর্থন প্রদানকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত এবং সন্ত্রাসবাদ উসকে দেয়ার মত কর্মকাণ্ড বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। আর ঠিক যেন তারই প্রতিফলন হিসেবে দেশটির একটি চার্চে ঘটলো অপ্রত্যাশিত প্রাণহানির ঘটনা।

গীর্জায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সম্পর্কে ফরাসী প্রেসীডেন্ট ম্যাখোঁর বিবৃতি - আল জাজিরা

বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের নিস নগরীর নটরডেম ডি নিস গীর্জায় এক হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে তিন ব্যক্তি নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে একজন ৫৪ বছর বয়সী ভিনসেন্ট নামক ঐ গীর্জার এক তত্ত্ববধায়ক ও দুইজন বৃদ্ধা রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ২১ বছর বয়সী ব্রাহিম আওসসাওই নামক এক তিউনিশিয়ান যুবককে গ্রেফতার করেছে ফ্রান্স পুলিশ। এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা আল জাজিরা।

এই ঘটনার পর পরই দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে ফ্রান্সের বিশেষ পুলিশ ইউনিটের পাশাপাশি অন্তত ৭ হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ।

এছাড়া নিস শহরের মেয়র ক্রিশ্চিয়ান এস্ট্রোসি এক টুইট বার্তায় এই ঘটনাকে 'পরিষ্কার সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, নিহত শিক্ষক স্যেমুয়েল প্যাটির মতই তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।

নটরডেম ডি নিসের সামনে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা প্রাচীর - আল জাজিরা

এদিকে ফরাসী গীর্জায় সংঘটিত এই বর্বর হত্যাকাণ্ডকে আপত্তিকর ও ইসলামপন্থী আচরণ নয় বলে দাবি করেছে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন মুসলিম কমিউনিটি এবং ইসলামিক রাষ্ট্রসমূহ। সৌদি আরব এবং কাতারসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা প্রাণঘাতী এই হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে।

কাতারের রাজধানী দোহাভিত্তিক মুসলিম বিদ্বানদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর মুসলিম স্কলার্স (আইইউএমএস) এক বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে আমাদের সংগঠন। সে সঙ্গে যে বা যারাই এই নির্মম ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

বিবৃতিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, এই ধরণের প্রতিহিংসামূলক আচরণ ইসলামীক মূল্যবোধের চরমপরিপন্থী।

অপরদিকে ফ্রান্সের এই ঘটনা দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে এক টুইট বার্তায় মালয়শিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথীর মুহম্মদ বলেছেন, হত্যাকাণ্ড কখনই ইসলামীক মূল্যাবোধ দ্বারা সমর্থিত নয়। তবে এ ধরনের পরিস্থিতি উসকে না দেয়ার জন্য ফ্রান্সের উচিত অন্যসকল সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তির বিকৃত কার্টুন প্রকাশের মাধ্যমে অবশ্যই সেটা প্রকাশ হয় না বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা উপস্থাপনের কোনো যৌক্তিক উদাহরণও প্রতিষ্ঠিত হয় না।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁ - রয়টার্স

সম্প্রতি ইসলাম সম্পর্কে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাখোঁর বিতর্কিত মন্তব্য এবং মহানবী (সঃ) এর বিকৃত কার্টুনচিত্র প্রদর্শন এর প্রতি ফ্রান্স সরকারের সমর্থন প্রকাশকে কেন্দ্র করে গোটা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী ফরাসী পণ্য বয়কট শুরু হয় ব্যাপকভাবে। এই ঘটনায় অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বিস্ময়করভাবে নিরব থাকলেও সরব প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে তুরস্ক। 

বিশিষ্টজনদের মতে, ইসলামের নবী মুহম্মদ (সঃ)-এর প্রতি আপত্তিকর আচরণ প্রদর্শনের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি উসকে দিয়েছেন খোদ ম্যাখোঁ, যার ভুক্তোভোগী হিসেবে জীবন দিয়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে দেশটির নিরীহ সাধারণ নাগরিকদের।

সূত্র: আল জাজিরা/রয়টার্স

এসকে