• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২০, ১০:৪৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৯, ২০২০, ১০:৫১ এএম

স্ক্র্যাপে অস্থির রডের বাজার 

স্ক্র্যাপে অস্থির রডের বাজার 

ইস্পাতের কাঁচামালের (স্ক্র্যাপ) দাম যতোই বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অবকাঠামো নির্মাণ কাজের প্রধান উপাদান রডের দাম। আর্ন্তজাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম রীতিমতো আগুন এখন, যার ফলে দেশের বাজারে সরাসরি প্রভাব পড়ছে।  বর্তমানে স্ক্র্যাপের যা দাম, সেটা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সেই ধারা চলছে তো চলছেই। ৩০০ ডলার থেকে গত এক মাসে স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনপ্রতি ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলার। সেদিক থেকে বেড়েছে ৯০ থেকে ১০০ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার। স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার এই ধারা প্রতিদিনই বদলাচ্ছে একটু একটু করে। এর মধ্যেই ইস্পাতনির্মাতা শিল্পপ্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি আশঙ্কায় ফেলে দিয়েছে— স্ক্র্যাপের ঘাটতি।

দেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মেট্রিক টন রডের চাহিদা রয়েছে। ১৫০টি রি-রোলিং মিল এবং ২৫টি অটো স্টিল মিল রয়েছে দেশে। এসব মিলে বছরে রড উৎপাদিত হয় প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। তবে এই শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে চার শতাধিক কারখানায় তৈরি হচ্ছে রড। এর মধ্যে ৩০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রড তৈরি করে থাকে। গত বছর বাংলাদেশে রডের বাজারের আকার ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

দেশের ইস্পাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, চীনে স্ক্র্যাপ কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল দীর্ঘদিন ধরে। গত দুই সপ্তাহ আগে চীন সরকার এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। নিধেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে বিশ্ববাজার থেকে চীন স্বাভাবিকভাবেই স্ক্র্যাপ কিনবে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই মূলত আর্ন্তজাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এদিকে জাহাজভাঙা শিল্প থেকে পাওয়া স্ক্র্যাপেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কাটার জন্য আগের মতো জাহাজও আর আসছে না।

জানা গেছে, বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ বিক্রেতা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান , মধ্যপ্রাচ্য, নিউজিল্যান্ড ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এসব দেশ থেকে স্ক্র্যাপের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ কেনে তুরস্ক। পাশাপাশি বাংলাদেশ ছাড়াও স্ক্র্যাপের বড় চাহিদা রয়েছে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান ও মিশরে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ও কেএসআরএমের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, বিশ্ববাজারে ইস্পাত স্ক্র্যাপের তীব্র ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে ক্রমাগত বাড়ছে রডের দাম। স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রড়ের দামের উপর প্রভাব পড়ছে। আগে ২৮০ ডলার থেকে ৩০০ ডলারে স্ক্র্যাপ পাওয়া যেত। এখন সেটি বেড়ে গেছে ১০০ ডলারেরও বেশি।

বিশ্ববাজারের পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, চীন ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে তারা তাদের দেশে স্ক্র্যাপ আমদানির অনুমতি দেবে— যা বর্তমান পরিস্থিতিকে আরো সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, চীন স্ক্র্যাপ আমদানি শুরু করলে বাংলাদেশে ইস্পাত উৎপাদনের বর্তমান সক্ষমতা বজায় রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এখনই এই প্রভাব পড়েছে আমাদের স্থানীয় বাজারে।

জিপিএইচ ইস্পাতের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম এফসিএ বলেন, বিশ্ববাজারে আগে কম দামে স্ক্র্যাপ পাওয়া যেত। এখন সেটি ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত বেড়ে গেছে। শীত মৌসুমে স্ক্র্যাপের সরবরাহ কমে যায়। কিন্তু রডের চাহিদা বেড়ে যায়। এর ফলে রডের দাম বাড়ে। তবে এবার স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে রডের দামও বেড়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, চীনে স্ক্র্যাপ আমদানির খবর আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় স্ক্র্যাপের দামে প্রভাব পড়েছে। স্ক্র্যাপের র-ম্যাটেরিয়ালস কমে যাওয়ার ফলে স্ক্র্যাপের সরবরাহ কমে গেছে— এটাও দাম বৃদ্ধির একটি কারণ। স্ক্র্যাপের বড় চাহিদার দেশ হচ্ছে তুরস্ক। তাদের চাহিদা বেড়ে গেলেও স্ক্র্যাপের দাম বাড়ে। তবে এবার চীনের কারণে বাড়ছে স্ক্র্যাপের দাম— এমন কথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শোনা গেলেও আমরা এখনও নিশ্চিত হইনি।

বিএসআরএমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তপন সেন গুপ্ত বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে বিশ্ববাজারে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও রডের দামে সেভাবে প্রভাব পড়েনি। কারণ করোনার আগে আমরা যে দামে রড বিক্রি করেছি, এখনও সেই দামেই বিক্রি করছি। কিন্তু করোনার সময় রডের দাম কমেছিল। এখন সেটি একটু বেড়ে আগের সমান হয়েছে। লকডাউনের আগে যা দাম ছিল, সেটিই এখনও আছে। তবে নতুন স্ক্র্যাপ আসলে দামটা পুননির্ধারণ হবে। 

জাগরণ/এমআর