• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২০, ০৮:৫০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০২০, ১২:২৩ পিএম

করোনার টিকা আগে পাবেন যারা

করোনার টিকা আগে পাবেন যারা

‘করোনার টিকাদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত কিছু কমিটি কাজ শুরু করেছে। এ কমিটির কাজই হবে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার জনগোষ্ঠীর তালিকা তৈরি করা।

প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ অর্থাৎ ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জন টিকা পাবেন।

প্রথম পর্যায়
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে যারা কোভিড-১৯ ইউনিটের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের প্রথম পর্যায়ে টিকা দেওয়া হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফারি কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যকর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারসহ স্বাস্থ্যসেবায় যারা করেন তারা এই ধাপের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই ধাপে ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৭ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ধাপে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি সাহায্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়
এই পর্যায়ের একই সঙ্গে দেশের বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে যারা কোভিড-১৯ ইউনিটের চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত, তাদের টিকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন এনজিও এই ধাপে যুক্ত হবে। এই ধাপে বেসরকারিভাবে কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসায় জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়া হবে, যার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ।

তৃতীয় পর্যায়
টিকা দেওয়া হবে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের, যারা কোভিড-১৯ চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত নয়, তারা টিকা পাবেন। টিকা বিতরণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য খাতকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও এই ধাপে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মী, অফিস সহায়ক, লন্ড্রি, কিচেন স্টাফ, গাড়িচালক ও হাসপাতালের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। এই সেক্টরের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

চতুর্থ পর্যায়
দেশের ২ লাখ ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে এই পর্যায়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটা বড় অংশের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন সব সময়। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পরে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে তাদের।

পঞ্চম পর্যায়
পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি দেশের জন্য দায়িত্ব পালনে সংক্রমণের ঝুঁকির মুখে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টিকা দেওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ১২ হাজার জন পুলিশ, ২ হাজার ৬১৩ জন নিয়মিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী, প্রায় ১৪ হাজার ব্যাটালিয়ান আনসার, ১৮ হাজার আনসার, ৩ লাখ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এই ধাপে ৪৩ লাখ ভিডিপি সদস্যকে টিকা দেওয়ার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

ষষ্ঠ পর্যায়
এই পর্যায়ে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব), কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ড সদস্যকে টিকা দেওয়া হবে। এই ধাপে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯১৩ জন সেনাবাহিনী, ২২ হাজার নৌবাহিনী, ১৪ হাজার বিমানবাহিনী, ৫০ হাজার বিজিবি সদস্যদের টিকা দেওয়া হবে। দেশে র‌্যাবের নিয়োগ সাধারণত পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী থেকে হয়ে থাকে। তাই এই বাহিনীর কর্মকর্তারা স্ব স্ব বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা আর্মড ফোর্স বাহিনীর আওতায় টিকা পাবেন।

সপ্তম পর্যায়
পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সচিবালয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে টিকা দেওয়া হবে।

অষ্টম পর্যায়
এই ধাপে দেশের ৫০ হাজার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। এই ক্ষেত্রে শুধু তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

নবম পর্যায়
এরপর দেশের ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন জনপ্রতিনিধিকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। টিকা বিতরণ কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ও নিজ নিজ এলাকার জনগণের সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের এই ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দশম পর্যায়
পরিকল্পনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার বিভিন্ন রকমের সেবাকর্মীরা যারা সরাসরি মানুষকে সেবা দিয়ে থাকেন, তারা টিকা পাবেন। ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী টিকা পাবেন এই পরিকল্পনার আওতায়।

একাদশ পর্যায়
এ পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ৫ লাখ ৮৬ হাজার পেশাজীবী টিকা পাবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে এই ব্যক্তিরা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। এ জন্য বিভিন্ন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, চার্চ, বৌদ্ধমন্দির ও অন্যান্য উপাসনালয়ের পেশাজীবীরা এই টিকা পাবেন।

দ্বাদশ পর্যায়
একই সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন কবরস্থানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের কবর দেওয়ার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা টিকা পাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী দাফন ও সৎকারে যুক্ত ৭৫ হাজার কর্মী এই টিকা পাবেন।

ত্রয়োদশ পর্যায়
গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ওয়াসা, ডেসকো, তিতাস, পল্লীবিদ্যুৎ, ডেসার কর্মীদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও এই পর্যায়ে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে খসড়া অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে চার লাখ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনা হবে।

চতুর্দশ পর্যায়
দেশের বিভিন্ন জল, স্থল ও বিমানবন্দরে কাজ করা ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে এই পর্যায়ে। এ ছাড়া ১ লাখ ২০ হাজার অদক্ষ প্রবাসী শ্রমিক যারা কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ফিরে যাবেন, তাদের টিকা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষ শ্রমিক অথবা যদি কোনো ভ্রমণকারী আলাদাভাবে টিকা পেতে চায়, তবে সেটি অতিরিক্ত খাত থেকে দেওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া পরিকল্পনায়।

পঞ্চদশ পর্যায়
এর বাইরে দেশের জেলা ও উপজেলায় সরাসরি মানুষের সংস্পর্শে এসে কাজ করতে হয়, এমন ৪ লাখ সরকারি কর্মচারীদের টিকা দেওয়া হবে।

ষোড়শ পর্যায়
এ ছাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন ব্যাংক কর্মচারীকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সপ্তদশ পর্যায়
এইচআইভি, যক্ষ্মা, ক্যানসার আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীসহ যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম ও বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে আছে, এমন ৬ লাখ ২৫ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে রোগ অনুযায়ী ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি কার্যকর না হয়ে থাকে তবে যথার্থ ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অষ্টাদশ পর্যায়
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৭৮ হাজার জনকে দেওয়ার মতো টিকা বাফার রিজার্ভ হিসেবে রাখা হবে জরুরি ও মহামারি সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য।

খসড়া পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে ৬০ বছর ও এর চেয়ে বেশি বয়স্ক জনগণকে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৬০ বছর অথবা এই বয়সসীমার অধিক বয়সের জনসংখ্যা হবে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৩৬৯ জন। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার মধ্যে প্রথম ৭ শতাংশ এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ। বাকি ১ দশমিক ২ শতাংশ অন্যান্য ক্যাটাগরিতে টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে খসড়া পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

যারা বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন ও চিকিৎসায় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রয়োজন হতে পারে, এমন জনগোষ্ঠীকেও খসড়া পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য রোগের আক্রান্ত ও বয়স্কদের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার এখন পর্যন্ত বেশি।একই সঙ্গে দেশে টিকা আনার পরিকল্পনা চলছে বেসরকারিভাবেও। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডোজ টিকার দাম ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো হতে পারে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ।