• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২১, ০৯:০৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ৮, ২০২১, ১১:৫৯ এএম

যে গ্রাম কেবলই নারীদের

যে গ্রাম কেবলই নারীদের

পুরুষতান্ত্রিক সমাজেও খুঁজে পাওয়া যাবে এমন কতগুলো গ্রাম, যেখানে কেবলই বাস করেন নারী। আসা-যাওয়া নেই কোনো পুরুষের। এমনকি প্রবেশাধিকারও রীতিমতো নিষিদ্ধ। শুনতে অবাক লাগলেও এমনও গ্রাম রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

যেখানে নিষিদ্ধ পুরুষ

মিশরের উত্তরাঞ্চলে কায়রো থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে ‘সামাহা’ নামে যে গ্রামটি আছে, যেখানে কেবল বিধবা এবং বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া নারীরাই থাকতে পারেন। এমনকি পুরুষ ও বিবাহিত নারীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ আছে গ্রামটিতে।

৩০৩টি পরিবারের বাস সেখানে। গ্রামের চারপাশে রয়েছে কৃষিজমি। ওই গ্রামের নারীরা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে কোদাল হাতে বেড়িয়ে পড়েন। সারাদিন ফসলের ক্ষেতে কাজ করে বিকেলের পর ফিরে আসেন নিজেদের সন্তানদের কাছে। তাদের জীবনে নিয়মানুবর্তিতাই সব।

মিশরের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এ যেন এক অন্য প্রতিচ্ছবি। এমনকি দেশটির কৃষিমন্ত্রী ওই গ্রামের নারীদের জন্য চাষাবাদের জমিও দিয়েছেন। তবে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন একটা, জমির মালিক হতে হলে সেই নারীকে ওই গ্রামে বাস করতে হবে অন্তত ১৫ বছরের বেশি সময়।

‘সামাহা’ গ্রামে নারীদের বেঁচে থাকতে হয় কঠোর সংগ্রাম করে। দিতে হয় অসীম সাহসিকতার পরিচয়। শিক্ষার কোনো ভালো ব্যবস্থা সেখানে গড়ে উঠেনি এখনো। এমনকি স্বাস্থ্যের মতো জরুরি বিষয়েও নেই কোনো সহায়তা। লেখাপড়ার জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে দীর্ঘ মাইল পথ। এমনকি গ্রামটি বন্যা কবলিত গ্রাম হিসেবও পরিচিত।

চাষাবাদ থেকে শুরু করে এ গ্রামের নারীরা নিজেদের নিয়োজিত করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসাতে।

নারীদের স্বপ্নরাজ্য

নারীর আরেকটি নিরাপদ স্বর্গ হচ্ছে ‘উমোজা’। দক্ষিণ কেনিয়ার একটি ছোট জনপদ এই উমোজা গ্রামটি। ১৯৯০ সালে ব্রিটিশদের হাতে গণর্ধষণের শিকার হোন ১৫ জন নারী। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের জন্য একটা নিরাপদ জনপদ গড়ে তুলবেন। গ্রামের এক প্রান্তে তারা সেটি গড়ে তোলেন। ১৫ জন নারী দিয়ে শুরু করা ওই গ্রামের বর্তমান নারী সংখ্যা আড়াইশ।

বাল্যবিবাহের শিকার, পারিবারিক নির্যাতনে বাড়ি থেকে হয়ে যাওয়া কিংবা ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের ঠাঁই হয়েছে ওই গ্রামে। সেখানকার নারীরা মনে করেন, তাদের সব চেয়ে নিরাপদ আশ্রয় ‘উমোজা’ গ্রাম। তাই অসহায় নারীদের জন্য গ্রামের প্রবেশ পথটি সবসময় খুলে রেখেছেন বাকি নারীরা।

নিজেদের গ্রামেই নারীরা তৈরি করেছেন স্কুল, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সুদৃশ্য উদ্যান। শুনে অবাক হতে হয়, তাদের রয়েছে নিজস্ব একটি ওয়েব সাইটও। নিজেদের হাতে বানানো গয়না, ঘরসজ্জার উপকরণ তৈরি করে তারা বিক্রি করেন অনলাইনে। অসংখ্য পর্যটক আসেন গ্রামটিতে ঘুরতে। পর্যটকদের সাফারি পার্ক, জাদুঘর ঘুরে দেখানোর দায়িত্বেও থাকে নারীরা। আসার আগে অনলাইনে বুকিং করতে হয় প্রবেশকারীদের।

উমোজায় প্রবেশ করতে কাটতে হবে টিকেট এবং সেই টিকেটের প্রবেশমূল্য জমা দিলেই অনুমতি পাওয়া যাবে গ্রামের ভেতরে ঢোকার। সেখানে গেলে দেখা মিলবে, ওই গ্রামের নারীরা গড়ে তুলেছেন নিজেদের স্বপ্নের রাজ্য।

সুন্দরীদের গ্রাম

নোইভা ডো করডেরিয়ো। এমন একটি গ্রামের নাম, যেখানে শুধু বাস করেন নারীরা। ব্রাজিলের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই গ্রামটি। তফাৎ কেবল এক জায়গায়, সেখানে শুধু সুন্দরী নারীরাই বাস করে থাকেন।

১৮৯০ সালে মারিয়া সেনহোরিনা ডে লিমাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া হলে তিনি চলে আসেন নোইভা ডো করডেরিয়ো গ্রামে। ১৮৯১ সালে লিমা-ই ওই গ্রামের পত্তন করেন।

এমন একটি গ্রামের খোঁজ পাওয়ার পর অনেক নারী সেখানে এসে বাস করতে শুরু করেন। শুরুতে গ্রামটিতে শুধু একটি মাত্র গির্জা ছিল। পরে গির্জার মানুষদের সঙ্গে মিলে ঘর-বাড়িও তৈরি করেন তারা। তাদের প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষিকাজ।

গ্রামের বাসিন্দা ৬শরও বেশি নারী ও তরুণী। তারা সবাই সুন্দরী। এর মধ্যে কয়েকজন শুধু বিবাহিত। সপ্তাহ শেষে মাত্র দুই দিনের জন্য শুধু তাদের স্বামীরা গ্রামে আসতে পারেন। সম্প্রতি ৩শ তরুণীর জন্য যোগ্য পুরুষদের বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। শর্ত একটাই, যে পুরুষ ওই গ্রামে তাদের সঙ্গে থাকতে রাজি থাকবেন, তাদেরকেই বিয়ে করবেন সুন্দরী নারীরা।