• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২১, ০৭:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৭, ২০২১, ০৭:৪২ পিএম

রাশিয়ার টিকা সম্পর্কে যা কিছু জানা প্রয়োজন

রাশিয়ার টিকা সম্পর্কে যা কিছু জানা প্রয়োজন

করোনা প্রতিরোধে এ পর্যন্ত তিনটি টিকা উদ্ভাবন করেছে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। এগুলো হলো: স্পুটনিক ভি, এপিভ্যাক করোনা ও কোভিভ্যাক। যদিও শেষ দুইটি টিকা এখনো মানব দেহে ট্রায়ালের জন্য পরীক্ষাধীন রয়েছে।

রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুমোদন ও ব্যবহার হচ্ছে স্পুটনিক ভি টিকা। বাংলাদেশেও মে মাসে ৪০ লাখ ডোজ স্পুটনিক ভি টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই টিকাকে বিশ্বসেরা মনে করলেও, অনেকে তার সঙ্গে এক মত নন। বেশ কিছু দেশে এটি অনুমোদন পায়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ অধিদপ্তর এটিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত এই টিকার বিরুদ্ধে কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভযোগ নেই। টিকার কার্যকারিতা কম এমন কোন প্রমাণও দিতে পারেনি কোন দেশ। অপরদিকে বিশ্বের ৬০টি দেশ স্পুটনিক-ভি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।

রাশিয়ার সরকারী গবেষণা কেন্দ্র, গ্যামালেয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিলোজি এন্ড মাইক্রোবায়োলজি এই টিকা উদ্ভাবন করে। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মস্কোতে টিকা আবিষ্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় গ্যামালেয়া ইন্সটিটিউট। 

স্পুটনিক ভি কি?
এটি মূলত একটি ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন। অর্থাৎ পরীক্ষাগারে তৈরি একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের প্রতিলিপি সমৃদ্ধ টিকা। এটি দেহে প্রবেশের পর জেনেটিক কোডের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি সক্রিয় করে তোলে। ফলে সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন মানবদেহে প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হয়। সাধারণত ভেক্টর ভ্যাকসিন অল্প তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা যায়। আর তাই এটি পরিবহন সহজ ও ব্যবহারে ঝুঁকি কম।

আলাদা কার্যকারিতা সম্পন্ন দুই ডোজের মাধ্যমে এই টিকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজটি মূলত প্রথমটির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে তা নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন এন্ড জনসনের করোনা টিকাও একইভাবে কাজ করে।

২০২০ সালের আগস্ট বিশ্বের প্রথম করোনা টিকা হিসেবে এটি নিবন্ধন করে রাশিয়া। ১৯৪৭ সালে পৃথিবীর প্রথম উৎক্ষেপিত সোভিয়েত স্যটেলাইট স্পুটনিকের নামানুসারে এই টিকার নামকরণ হয়।

টিকার কার্যকারিতা কতটুকু?
দুই ডোজের এই টিকা মানব দেহে করোনা প্রতিরোধে সর্বোচ্চ ৯১ দশমিক ছয় ৬ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও এটির কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি। কার্যকারিতার দিক থেকে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি টিকা। ফাইজারের টিকা সর্বোচ্চ ৯৫ ভাগ এবং মডার্নার টিকা ৯৪ ভাগ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি, তিন ধাপে ১৮ হাজার মানুষের দেহে টিকার কার্যকারিতা যাচাই করে সফল হয়েছে তারা। এছাড়াও নতুন কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যুক্তরাজ্যের করোনার স্ট্রেইন বি-১-১-৭ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার রুপান্তরিত করোনার ধরণ বি-১-৩৫১ এর বিরুদ্ধেও এই টিকা সমানভাবে কার্যকর।

এ পর্যন্ত টিকা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ করেছেন দশজন। যদিও তাদের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগের সঙ্গে শারীরিক অসুস্থতার কোন যোগাযোগ বা প্রমাণ পাননি বিজ্ঞানীরা।

কোন কোন দেশে এই টিকা ব্যবহার হচ্ছে?

ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মেক্সিকো, ইরান, সার্বিয়া, ফিলিস্তিন ও বসনিয়া হার্জেগোভিসহ কয়েকটি দেশে সরকারী ও বেসরকারিভাবে এই টিকা ব্যবহার হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়াতে এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আগে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা ও ভেনেজুয়েলাতেও এই টিকা ব্যবহার হয়েছে। সাড়ে সাত কোটি ডোজ স্পুটনিক ভি টিকা কেনার ঘোষণা দিয়েছে ব্রাজিল।

এ পর্যন্ত বিশ্বে মোট ৮৮ লাখ মানুষের দেহে এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই টিকা অনুমোদন দেয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, ডয়চে ভেলে ও অন্যান্য

আরও পড়ুন