• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২১, ০৫:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২০, ২০২১, ০৫:৫৩ পিএম

করোনায় বিপর্যস্ত আফগানিস্তান

করোনায় বিপর্যস্ত আফগানিস্তান

করোনায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে আফগানিস্তানে। রাজধানী কাবুলসহ বিভিন্ন এলাকায় একদিকে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্বল করে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দেশটিকে।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আফগানিস্তানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৯০৬ জন এবং এ রোগে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ৪ হাজার ১২২ জন; কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। কারণ, যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে টেস্ট করাতে এসে পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন, সরকারি হিসেবে শুধু তাদেরকেই ধরা হয়েছে।

এদিকে, মে মাস থেকে দেশটিতে বাড়তে শুরু করেছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত সপ্তাহে আফগানিস্তানজুড়ে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০০ জন। এই পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোলাম দস্তগীর নাজারি মার্কিন বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আফগানিস্তানে করোনা পরিস্থতির অবনতি হচ্ছে। দেশের কোনো কোনো এলাকায় মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত- এমন তথ্যও এসেছে আমাদের কাছে।

এদিকে সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি করোনা রোগীদের চিকিৎসাতেও দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। হাসপাতালগুলোতে শয্যা- মেডিকেল অক্সিজেন-স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি থাকার কারণে অনেক রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কিন্তু সেখানেও দেখা দিয়েছে বিড়ম্বনা। করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন জোগাড় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে স্বজনদের।

আফগানিস্তানের খোলা বাজারে ৪৫ লিটারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ৪ হাজার আফগানি(আফগাস্তিানের মুদ্রার নাম) বা ৫০ ডলার। অন্যদিকে অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোতে এই পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ আফগানিতে। দারিদ্রপীড়িত আফগানিস্তানে অধিকাংশ মানুষ তাই অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলোতে ছুটছেন।

কিন্তু প্ল্যান্টে গেলেই যে অক্সিজেন পাওয়া যাবে, এমন নয়। এক সিলিন্ডার অক্সিজেনের জন্য বেশিরভাগ মানুষকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

কাবুলের নজিব সিদ্দিকি অক্সিজেন প্ল্যান্টে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করতে আসা আব্দুল ওয়াসি নামের এমন একজনের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন এপির প্রতিনিধি। ওয়াসি জানিয়েছেন, তার স্ত্রী গত ১০ দিন ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আছেন। গত চার দিন ধরে প্ল্যান্টের সামনে ধর্না দিয়ে বসে থাকার পর অবশেষে মিলেছে অক্সিজেন।

তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রীর অক্সিজেন মাত্রা (লেভেল) বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। হাসপাতালে শয্যার অভাব থাকায় মেঝেতে থাকতে হচ্ছে তাকে। হাসপাতাল থেকে যে অক্সিজেন দেওয়া তা যথেষ্ট নয় বলেই চার দিন ধরে প্ল্যান্টের সামনে অপেক্ষা করছেন তিনি। এপিকে ওয়াসি বলেন, আমার আর কী করার আছে! তবু সৌভাগ্য চার দিন পর অক্সিজেন পাওয়া গেল।

নজিব সিদ্দিকি প্ল্যান্টে অক্সিজেন নিতে আসা বারাত আলী নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এই দেশে সবচেয়ে বিপদে আছে গরিব মানুষরা। গত আট ঘণ্টা ধরে এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, জানি না কখন অক্সিজেন পওয়া যাবে।
অক্সিজেন নিতে আসা লোকজনদের কেন এত দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে- প্রশ্নের উত্তরে প্ল্যান্টের মালিক নজিব সিদ্দিকি এপিকে বলেন, আমি নিরুপায়। কারণ আমার প্ল্যান্টে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪৫০ থেকে ৫০০ টি সিলিন্ডার রিফিল করার সুযোগ আছে। এর মধ্যে হাসপাতালগুলোকেও অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।

আফগানিস্তানের চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড মাইনস জানিয়েছে, পুরো আফগানিস্তানে অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে ৩০ টি, এর মধ্যে কাবুলে আছে ৯ টি। কিন্তু বর্তমানে প্রতিটি প্ল্যান্ট তার সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষমতা দিয়েও দেশের অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।

আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির আফগানিস্তান শাখার প্রধান নেসেফোর এমঘেন্দি এপিকে বলেন, আমাদের ৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫০ সিলিন্ডার অক্সিজেনের প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমরা যোজাড় করতে পারছি চাহিদার অর্ধেকের মোত। আফগানিস্তানের করোনা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।

অবশ্য আফগানিস্তান চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান শাখি আহমেদ পায়মান দেশের বর্তমান সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। এপিকে তিনি বলেন, তারা জানে যে আমরা এখন চরম সংকটকাল পার করছি কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যখন তাদের টনক নড়বে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।   সূত্র: এপি, হিন্দুস্তান টাইমস

জাগরণ/এসকে