• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০২১, ০৩:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৩, ২০২১, ০৩:৫৬ পিএম

তালেবানের ক্রমাগত বিজয়ে শঙ্কিত জাতিসংঘ

তালেবানের ক্রমাগত বিজয়ে শঙ্কিত জাতিসংঘ

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা-সহ সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই সুযোগে দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করতে সর্বশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিদ্রোহী তালেবান গোষ্ঠী। ইতোমধ্যেই তারা কয়েক ডজন আফগান জেলা নিজেদের দখলে নিয়েছে। আর এতেই চরম শঙ্কিত জাতিসংঘ।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত দেবোরাহ লিয়ন্স মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, দেশটির মোট ৩৭০টি জেলার মধ্যে ৫০টিরও বেশি জেলা ইতোমধ্যেই নিজেদের দখলে নিয়েছে তালেবান। তিনি আফগানিস্তানে ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির’ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘কাছাকাছি সময়ে হোক বা দূর ভবিষ্যতে, সংঘর্ষ যতো বেশি বাড়বে, আরও অনেক বেশি দেশের জন্য সেটা নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করবে।’

এর আগে প্রায় ২০ বছরের আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে উভয়পক্ষ। সেখানে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবানের দোহা মুখপাত্র সোহাইল শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল বিদেশি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। সেই অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে অবস্থান করা বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের কাজ চলছে।

তবে তালেবানের হামলা ও ক্রমাগত বিজয়ের কারণে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারে ধীরগতির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের জানান, সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখের মধ্যে সকল বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, সেটা কার্যকর থাকবে। তবে সেনা প্রত্যাহারের গতি কিছুটা কমিয়ে আনা হতে পারে।

এরপরই মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে দেবোরাহ লিয়ন্স বলেন, তালেবান গোষ্ঠীর এই অগ্রযাত্রাটি আসলে দেশটিতে ইতোপূর্বে হওয়া ‘তীব্র সামরিক অভিযানেরই’ ফলাফল।

তিনি আরও বলেন, ‘তালেবানের দখলে যাওয়া জেলাগুলো আসলে আফগানিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীগুলোর পার্শ্ববর্তী এলাকা। অর্থাৎ তালোবান গোষ্ঠী সেখানে নিজের যোদ্ধাদের মোতায়েন রাখছে এবং বিদেশি সেনারা পুরোপুরি সরে যাওয়ার পরই তারা বাকি এলাকাগুলোও দখল করবে।’

এদিকে প্রতিবেশি তাজিকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রধান সীমান্ত শির খান বন্দর দখল করে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। তালেবানের আক্রমণের মুখে আফগান বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। এমনকি অনেকে সীমান্ত পার হয়েও পালিয়ে যান।

শির খান বন্দর দেশটির কুন্দুজ শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। বিদেশি সেনাদের চলমান প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই এটিকে তালেবানের সর্বোচ্চ অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কুন্দুজ প্রদেশের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য খালিদ্দিন হাকমি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে মাত্র এক ঘণ্টার যুদ্ধে তালেবান শির খান বন্দর, শহর এবং তাজিকিস্তানের সঙ্গে পুরো সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা চৌকিগুলো দখল করে নিয়েছে।’

বার্তাসংস্থা এএফপি’কে আফগান সরকারি বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তালেবানের হামলার কারণে আমরা নিরাপত্তা চৌকিগুলো ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। এমনকি আমাদের বেশ কিছু সেনা সীমানা পেরিয়ে তাজিকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে।’

কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর কন্দুজ এর আগেও দু’বার দখলে নিয়েছিল তালেবান যোদ্ধারা। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের সেই দুই ঘটনার পর ন্যাটো যোদ্ধারা অভিযান চালিয়ে তালেবানের কবল থেকে শহরটি পুনরুদ্ধার করেছিল।

জাগরণ/এসকে