• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:৩৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:৩৫ এএম

মমতার প্রত্যাশা পূরণ হলো না দিল্লিতে

মমতার প্রত্যাশা পূরণ হলো না দিল্লিতে
ফাইল ফটো।

প্রত্যাশা ছিল দিল্লি সফরে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে বিরোধী জোট গঠনের বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সেই প্রত্যাশা এবার পূরণ হলো না।

গত ২১ জুলাই শহীদ দিবসের ভাষণে কলকাতায় বসে মমতা জানিয়েছিলেন, দিল্লি সফরে তিনি শরদ পাওয়ারসহ অন্য জাতীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। সেদিন দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে তৃণমূলের অনুষ্ঠানে শরদ পাওয়ার, রামগোপাল যাদব ও পি চিদম্বরমরা ছিলেন।

তৃণমূল কংগ্রেস পালিত ভার্চুয়াল ওই অনুষ্ঠানে তারা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মমতা তাদের অনুরোধ করেছিলেন, তারা যেন দিল্লিতে বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে একটা বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতাও থাকতে চেয়েছিলেন।

দিল্লিতে মমতা চার দিন থাকলেন। কিন্তু বিরোধীদের বৈঠক হয়নি। এমনকি শরদ পাওয়ারের সঙ্গেও মমতার কোনো বৈঠক হয়নি। মমতা যখন দিল্লিতে, তখন শরদর দিল্লিতে। তিনি মুম্বাইয়ে বলে এসেছিলেন, মমতার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ হয়নি। 

তার মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেও দিল্লিতে ছিলেন। একুশে জুলাইয়ের অনুষ্ঠানে সুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়েই গেছিলেন শরদ। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে বলা হয়েছিল, সোনিয়া গান্ধী ও শরদ পাওয়ারের বাড়িতে তিনি নিজে যাবেন। বাকিদের সঙ্গে ভাইপো অভিষেকের ফ্ল্যাটে বৈঠক হবে।

দিল্লি গেলে ভাইপো ও তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের সরকারি বাসভবনেই ওঠেন মমতা। সোনিয়া গান্ধীর বাড়িতে মমতা গিয়েছিলেন। বৈঠকও হয়েছে। সোনিয়া গান্ধী সেখানে রাহুলকেও রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে কথাবর্তা হয়েছে। 

দিল্লিতে অভিষেকের ফ্ল্যাটে গিয়ে মমতার সঙ্গে দেখা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ডিএমকে নেত্রী কানিমোরি, তিন কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা, অভিষেক মণু সিংভি এবং কমল নাথ। এছাড়া জাভেদ আখতার ও শাবানা আজমিও দেখা করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি ও সোনিয়া গান্ধীর কাছে মমতা গিয়েছিলেন। কিন্তু শরদ ছাড়া শিবসেনা, সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি, টিআরএস, আরজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক প্রভাবশালী দলের কারও সঙ্গে মমতা দেখা করেননি।

মমতা নিজে যাই বলুন না কেন, তৃণমূল সংসদীয় দলের বৈঠকের পর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, দল তাকেই প্রধানমন্ত্রী দেখতে চায়। কারণ, তিনিই একমাত্র নরেন্দ্র মোদিকে হারাতে সক্ষম। দলও চায়, তিনিই বিজেপিবিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিন।

সেটাকে হিসেবে ধরনে প্রশ্ন ওঠে, মমতার এবারের সফর দিল্লি কি সফল হলো? বিশেষ করে আঞ্চলিক দলগুলোর মনোভাবের নিরিখে?

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলছেন, ‘অন্য কেউ এখন বিরোধী ঐক্যের চেষ্টা করছেন না। সেখানেই দাঁড়িয়ে মমতা একটা চেষ্টা করলেন। কিন্তু যে সাড়া তিনি পেলেন তা যথেষ্ট নয়। বিরোধী নেতারা মমতার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখলেন।’

মমতা নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, ‘আমার সফর সফল হয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিরোধী দলগুলো সকলে মিলে যদি একসঙ্গে লড়াই করি, তার থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না। সব নেতার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। কারণ, অনেকেই সংসদে ব্যস্ত ছিলেন। করোনার জন্য সেন্ট্রাল হলেও যেতে পারিনি। আমাদের আগে দেশকে বাঁচাতে হবে।’ 

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরীর মতে, ‘মমতা যে চেষ্টা করছেন তাকে বলা যায় প্রিম্যাচিওর। আরও তিন বছর পর ভোট। এতদিন আগে থেকে পুরো কৌশল ঠিক করার ব্যাপারে অন্যরা কেন এতটা উৎসাহ দেখাবে।’

তিনি বলেছেন, ‘মমতা পশ্চিমবঙ্গে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে জিতেছেন, সেটা নিঃসন্দেহেই বড় ব্যাপার। কিন্তু সেটা একটা রাজ্যে জয়। অন্য আঞ্চলিক দলের নেতারা তাদের রাজ্য নিয়ে ব্যস্ত। মমতা সেখানে তাদের জেতাতে সাহায্য করতে পারবেন না।’

দীপ্তেন্দ্র মনে করেন, ‘আসন্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কী হবে তার দিকে সকলের নজর থাকবে। তাই মমতার চেষ্টা সময়োচিত নয়।’ ফলে মুখ্যমন্ত্রী মমতার দিল্লি সফর তৃণমূলের প্রত্যাশাপূরণে সফল হলো না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

জাগরণ/এসকেএইচ