• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১, ০৭:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২, ২০২১, ০৭:২৮ পিএম

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে ডেল্টা

দাবানলের মতো ছড়াচ্ছে ডেল্টা

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ে রীতিমত জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ এই সংস্করণ লোকজনকে— বিশেষ করে যারা টিকা পাননি তাদের আগের তুলনায় গুরুতর অসুস্থ করে ফেলছে কি-না সেটি জানার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছেন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া এবং বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দাপিয়ে বেড়ানো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আগের সংস্করণের তুলনায় ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‘সম্ভবত ‌‌‌আরও বেশি গুরুতর’ হয়ে উঠছে। শুক্রবার সিডিসির প্রকাশিত অভ্যন্তরীণ এক নথিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং স্কটল্যান্ডে চালানো এক গবেষণার বরাত দিয়ে সিডিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে— মহামারির শুরুর দিকের রোগীদের তুলনায় বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত লোকজনকে সম্ভবত হাসপাতালে বেশি ভর্তি হতে হচ্ছে।

সংক্রামক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তিনটি গবেষণায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অধিক ঝুঁকির বিষয়ে পরামর্শ এসেছে। তবে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা সীমিত ছিল এবং বাইরের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গবেষণার এই ফল এখনও পর্যালোচনা করা হয়নি।

ডেল্টায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের কোভিড-১৯ উপসর্গ দ্রুত প্রকাশ পায় এবং অনেক অঞ্চলে এই ধরনে আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থতার সংখ্যা মোটাদাগে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের এই ধরন অন্যান্য ধরনের তুলনায় আক্রান্তদের আরও গুরুতর অসুস্থ করে তুলছে কি-না সেবিষয়ে এই ফলের তুলনার জন্য আরও বৃহৎসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে মহামারিবিষয়ক গবেষণা করা দরকার।

ব্রিটেনের ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের ভাইরোলজিস্ট লরেন্স ইয়ং বলেছেন, ডেল্টার তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া কঠিন। তবে ডেল্টার সংক্রমণের অস্বাভাবিক হার হাসপাতালে বেশিসংখ্যক গুরুতর রোগী আসার ক্ষেত্রে অবদান রাখছে বলে মনে করে ব্রিটিশ এই বিশেষজ্ঞ।

সিডিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট জলবসন্তের মতো সংক্রামক। এমনকি এটি সাধারণ সর্দি জ্বর অথবা ফ্লুর চেয়েও অতি-সংক্রামক। যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ডিয়েগোর লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজির ভাইরোলজিস্ট শেইন ক্রোটি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যে গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে, তা স্কটল্যান্ডের গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে। স্কটিশ গবেষণায় দেখা যায়, আগের সংস্করণের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর বেশিরভাগই এমন লোকদের মধ্যে ঘটছে; যাদের টিকা দেওয়া হয়নি। তবে এমন প্রমাণও আছে যে, বয়স্করাসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে করোনা টিকার কার্যকারিতা কম।

অন্যদিকে, যারা টিকা নিয়েছেন এবং সুস্থ-সবল; করোনায় আক্রান্ত হলেও তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাসিম্পটোমেটিক থাকছেন এবং মৃদু অসুস্থতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন মাইও ক্লিনিকের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. গ্রেগরি পোল্যান্ড।
তিনি বলেছেন, কিন্তু তারা এটিকে পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন; যারা সৌভাগ্যবান নন। আমাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং মাস্ক পরতে হবে। অন্যথায় চতুর্থবারের মতো আমাদের আরেকটি ঢেউ সহ্য করতে হবে এবং এর চেয়েও খারাপ ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব ঘটবে।

যেসব অঞ্চলে টিকাদানের হার নিম্ন সেসব অঞ্চলে গুরুতর অসুস্থতার হার বেশি। আর এসব এলাকায় মহামারি সামাল দিতে গিয়ে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ইউসিহেলথের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ মেডিক্যাল পরিচালক ডা. মিশেল ব্যারন বলেছেন, ‘এটি একটি দাবানলের মতো। এটি জ্বলন্ত ক্যাম্পফায়ার নয়। এটি এখন পুরোপুরি আগুনের শিখা।’

ব্যারন বলেছেন, চীনের গবেষণায় বলা হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অনেক দ্রুত প্রতিলিপি তৈরি করে এবং শরীরে ভাইরাসটির মূল প্রজাতির তুলনায় এক হাজারেরও বেশি গুণ ভাইরাস তৈরি করে। চীনা এই গবেষণা করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির বিষয়টিকে তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে রোগীরা বেশি অসুস্থ কি-না তা বলা কঠিন। 

অন্যান্য চিকিৎসকরা বলেছেন, ডেল্টায় আক্রান্ত রোগীদের অতিদ্রুত অসুস্থ হতে দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, যা মহামারির শুরুর দিকে তারা করোনা আক্রান্তদের যে চিকিৎসা দিয়েছিলেন তার তুলনায় বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ২৮টি রাজ্যে জরুরি চিকিৎসাসেবাদাতা ক্লিনিক চেইন আমেরিকান ফ্যামিলি কেয়ারের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. বেঞ্জামিন বারলো বলেছেন, আমরা এমন অনেক রোগী পাচ্ছি; যাদের অতিদ্রুত অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

আলাবামার বার্মিংহামের ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করছেন বারলো। তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে করোনা শনাক্তের হার ২-৩ শতাংশ থাকলেও বর্তমানে সেটি প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছেছে। সেই সময় রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি এবং অক্সিজেন সহায়তার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়।

ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের এইডস ভ্যাকসিন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ল্যাবরেটরি পরিচালক ডেভিড মনটেফিওরি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অতি-সংক্রামক এবং অতি-দ্রুত অসুস্থতার দিকে ধাবিত করে; বিশেষ করে যারা টিকা নেননি।

তিনি বলেছেন, সত্যিকার অর্থে এই ভ্যারিয়েন্টের তীব্রতা রয়েছে; যা একটু বেশি গুরুতর। এটি কেবল সহজেই ছড়িয়ে পড়ে না, বরং আপনাকে অসুস্থও করে তোলে।

জাগরণ/এসকে