• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২১, ১১:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৩, ২০২১, ১১:০৫ পিএম

কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন:

এবারও অর্থায়নের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না দরিদ্র দেশগুলো

এবারও অর্থায়নের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না দরিদ্র দেশগুলো
ফাইল ফটো।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ঝুঁকি প্রশমন ও অভিযোজনের জরুরি অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবারও পাচ্ছে না। আশা-নিরাশার দোলাচলে শেষপর্যন্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য টানা ১৩ দিনের সম্মেলন শনিবার অতিরিক্ত সময়ে গড়ালেও এ বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। 

দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এবারের সম্মেলনও কার্যত ফল শূন্য একটি আয়োজন। তবে ‘মন্দের ভালো’ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি এসেছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাসে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি ধনী দেশ উল্লেখযোগ্য ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসংঘের উদ্যোগে ও যুক্তরাজ্যের আয়োজনে ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে শুরু হওয়া এবারের জলবায়ু সম্মেলন ১২ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন দুই শতাধিক দেশ ও অঞ্চল এবং তাদের পক্ষে কাজ করা মধ্যস্থতাকারী, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রায় ৫০ হাজার প্রতিনিধি। শুরু থেকে আশা করা হচ্ছিল, ধনী দেশগুলোর আরাম-আয়েশের কারণে কার্বন নিঃসরণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ঝড়, বন্যা, ক্ষরার প্রভাব কাটিয়ে ওঠা এবং উপকূলীয় জীবনে অভিযোজন ঘটনানোর জন্য তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে।

শনিবার পর্যন্ত যে খসড়া চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি হয়েছে, তাতে বিষয়টি সেভাবে নেই। এই অর্থ পাওয়ার বিষয়টি কপ২৭ সম্মেলনে আলোচনার জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ধনী দেশগুলো বছরে যে ১০০ বিলিয়ন অর্থায়ন করতে চেয়েছিল, তা ২০২৩ সালের আগে পাওয়া যাবে না বলে সম্মেলন থেকে পরিষ্কার বার্তা পাওয়া গেছে। এ অর্থ পেতে ২০২৫ সাল পর্যন্তও লেগে যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতা ও আদিবাসী প্রতিনিধিরা শুক্রবার স্লোগান দিয়ে সম্মেলন স্থল ত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এরই মধ্যে কপ২৬-কে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বিশ্বনেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছে।

এ ছাড়া উন্নত দেশের মধ্যস্থতাকারীরা জলবায়ু তহবিলের অর্থ সরাসরি সরকারগুলোর হাতে দিতে চায় না। তারা উন্নয়ন ঋণ হিসেবে বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সহায়তা দিতে চায়। তবে দরিদ্র দেশগুলোর প্রতিনিধিরা বিষয়টিকে নতুন ঋণের বোঝা চাপানোর কৌশল হিসেবে অভিহিত করে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, বিনাশর্তে ধনীদের কাছ থেকে তাদের এই অর্থ প্রাপ্য। এক দশক আগেই ধনী দেশগুলো এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কপ২৬ সম্মেলনের সভাপতি যুক্তাজ্যের মন্ত্রী অলোক শর্মা একটি বহুপক্ষীয় কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রকাশিত খসড়া চুক্তিকে ‘ভারসাম্যমূলক’ অভিহিত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘সব কিছু সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে এটি এমন কিছু, যা সামগ্রিকভাবে সবার উদ্দেশ্যকে এগিয়ে নেবে।’

এবারের জলবায়ু সম্মেলন অনেক বেশি প্রত্যাশা নিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা কিছু প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাসের মধ্যেই আকটা পড়ে যাচ্ছে। তবে এবার কয়েকটি পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে পরিবেশবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন।

সকালে সম্মেলনে প্রকাশিত তৃতীয় খসড়ায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতিবছর সব দেশকে বিস্তারিত পরিকল্পনা জাতিসংঘকে জানাতে হবে। আগে যেখানে পাঁচ বছর অন্তর এই পরিকল্পনা প্রকাশ করা হতো, সেখানে এটি এক বছর অন্তর করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন আইসিসিসিএডির পরিচালক সালিমুল হক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য যুক্তরাজ্যের এসব কথা নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হবে না।

জলবায়ু সম্মেলনের ঘোষণা বা চুক্তির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো- এসব শর্ত ভাঙলে কোনো দেশকে শাস্তি পেতে হবে না। এই চুক্তি পালন নির্ভর করবে সরকারগুলোর ইচ্ছার ওপর। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিশ্রুতি করায় সরকারগুলো এক ধরনের রাজনৈতিক চাপের মধ্যে থাকবে। সেই সঙ্গে জলবায়ু তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিশ্রুতিগুলো মেনে চলতে হবে। যে কারণে কিছু সাফল্য আসবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি ও চীনের দূত জিয়ে জেনহুয়া শেষমুহূর্তের মধ্যস্থতায় প্রভাব বিস্তার করেছেন। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও মধ্যস্থতাকারী এবং জাতিসংঘ ও সম্মেলনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেছেন তারা। তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মা বলেছেন, ‘পৃথিবী বাঁচাতে আমরা এখন সত্যের মুখোমুখি। বিশ্ববাসী চায়, আমরা সাহসী পদক্ষেপ নিই।’

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধনী দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে তৃতীয় খসড়ায়। আরও যে বিষয়গুলোকে সম্মেলনে সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির নিচে রাখতে আগামী দশকজুড়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ ঘোষণা, ২০৩০ সালের মধ্যে বন ধ্বংস বন্ধ করা নিয়ে ১০০টি দেশের নেতার ঘোষণা, ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমাতে ১০০টি দেশের ঘোষণা এবং কয়লা ব্যবহার বন্ধে ৪০টি দেশের ঘোষণা। 

সম্মেলনের সভাপতি অলোক শর্মা  দুপুরে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শনিবারই সম্মেলনের শেষ টানতে চান তিনি। এখন চূড়ান্ত চুক্তি বা ঘোষণার দিকে তাকিয়ে সবাই। সূত্র :বিবিসি, এএফপি, দ্য গার্ডিয়ান ও আলজাজিরার।

 

জাগরণ/এসকেএইচ