• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২, ০৬:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১১, ২০২২, ০৬:১৫ পিএম

মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.)কে নিয়ে মন্তব্য

বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি গ্রেপ্তার

বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ, বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি গ্রেপ্তার

বরখাস্ত হওয়া বিজেপি নেতা নুপুর শর্মার মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভে প্রতিবাদ হয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে। 

শনিবার বিক্ষোভ-সহিংসতায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে প্রদেশের হাওড়া জেলা। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে হাওড়া জেলার সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত পাঞ্চাল এলাকার স্থানীয় একটি ক্লাবে হামলা ও লুটপাটের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি-চার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে পুলিশ।

এদিকে, হাওড়ায় সহিংসতার ঘটনা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ-সহিংসতায় কোনও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

তিনি বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল দাঙ্গা বাধাতে চায়। তার প্রশ্ন, বিজেপির ‌‌‘পাপের’ জন্য জনগণকে কষ্ট পেতে হবে কেন?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মমতা বলেছেন, আগেও বলেছি, দুদিন ধরে হাওড়ার জনজীবন স্তব্ধ করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এর পেছনে কিছু রাজনৈতিক দল আছে এবং তারা দাঙ্গা করাতে চায়। কিন্তু এসব বরদাস্ত করা হবে না এবং এ সবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা হবে। পাপ করল বিজেপি, কষ্ট করবে জনগণ?

এর আগে, বিজেপি নেতা নুপুর শর্মার মহানবীকে (সা.) নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে শুক্রবার কলকাতার কাছের শহর হাওড়ায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। শনিবার সকালের দিকে একই এলাকায় আবারও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

দেশটির বার্তাসংস্থা এএনআই বলছে, বিক্ষোভ থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়। পরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বুধবার পর্যন্ত হাওড়ায় কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া আগামী সোমবার পর্যন্ত পুরো জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার হাওড়ার কয়েকটি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে আন্দোলন প্রত্যাহার করে বিক্ষোভকারীদের নয়াদিল্লিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে ভারতের অন্তত ৯টি প্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রতিবাদ করেছেন দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা। মহানবীকে অবমাননার প্রতিবাদে সংখ্যালঘু মুসলিমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন।

ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।

তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

অবশ্য এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি গত রোববার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করা করে। এমনকি বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।

কিন্তু এরপরও বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়েছে ভারত। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় দেড় ডজন দেশ ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এসব দেশ ভারত ও বিজেপি সরকারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।