• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১২, ২০২২, ০৬:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১২, ২০২২, ০৬:০৮ পিএম

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যা, জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যা, জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যার হিড়িক পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই দেশটির বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের মধ্যে বেড়েছে আত্মহত্যার হার।

মূলত একটি যুগান্তকারী প্রতিবেদনে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার উচ্চ হারের বিষয়টি উঠে আসার পর এটিকে ‘একটি জাতীয় ট্র্যাজেডি’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আট মাস ধরে কয়েকশ লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ সরকারি একটি তদন্ত সংস্থা। রাজকীয় কমিশনের নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, অত্যাধিক জটিল প্রশাসনিক পদ্ধতির কারণে অস্ট্রেলিয়ার চাকরিজীবী নারী ও পুরুষরা কার্যত সংগ্রাম করছেন এবং চাকরি থেকে অব্যাহতির পর নানামুখী সহায়তা-সমর্থনের অভাবে জীবনযাপন করছেন।

এদিকে এই রিপোর্ট প্রকাশের পরপরই ক্ষমা চেয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। একইসঙ্গে রিপোর্টে উল্লেখ করা সুপারিশগুলোর বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা।

অস্ট্রেলিয়ার ভেটেরান্স বিষয়ক মন্ত্রী ম্যাট কিয়োগ বলেছেন, ‘এটি খুবই বিপর্যয়কর যে গত ২০ বছরে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়া যত সেনা হারিয়েছে, তার চেয়ে বেশি সাবেক ও বর্তমান সেনা আমরা হারিয়েছি আত্মহত্যার কারণে।’

বিবিসি বলছে, ২০০১ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীর (এডিএফ) বর্তমান এবং সাবেক সদস্যদের মধ্যে আত্মহত্যার মাধ্যমে এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় প্রবীণদের মধ্যে আত্মহত্যার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

‘দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইড’ তাদের রিপোর্টে আত্মহত্যার এই উচ্চহারের বেশ কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখিত প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- চাকরিরত অবস্থায় শারীরিক এবং মানসিক আঘাতের শিকার হওয়া ও মোকাবিলা করা, (সামরিক জীবন থেকে) বেসামরিক জীবনে স্থানান্তরসহ আরও বেশ কয়েকটি পয়েন্ট।

এই রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় রয়্যাল কমিশন অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ব্যক্তিগত এবং পাবলিক শুনানির আয়োজন করে এবং এতে বহু মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন। অভিজ্ঞতা শেয়ারের এই তালিকায় ছিলেন অস্ট্রেলীয় সিনেটর ও দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক সদস্য জ্যাকুই ল্যাম্বিও।

মূলত কীভাবে তিনি তার ছেলেদের কাছে বিদায়ী চিঠি লিখেছিলেন এবং সেনাবাহিনীতে আহত হওয়ার পরে ও সরকারের সাথে ক্ষতিপূরণের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরে তার জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন; শুনানিতে জ্যাকুই সেটিই তুলে ধরেন।

জ্যাকুই ল্যাম্বি বলেন, ‘বেঁচে থাকার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়াটা আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। এমনকি আমার ছেলেদের জন্যও। (বেঁচে থাকতে) আমার মধ্যে কোনো লড়াই আর বাকি ছিল না।’

অস্ট্রেলিয়ার আরেক সাবেক সৈনিক রয়্যাল কমিশনের শুনানিতে বলেন, আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসার পরে তিনি যা দেখেছিলেন তা সামলাতে না পেরে তার জীবন কীভাবে বিষিয়ে উঠেছিল।

বিবিসি বলছে, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আত্মহত্যার হার নিয়ে দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইড’র অন্তর্বর্তী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। সদ্য প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে, কমিশনাররা প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে ‘সাংস্কৃতিক সমস্যা’ এবং আত্মহত্যার উচ্চ হার মোকাবিলায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তারা বলছেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীতে দায়িত্বপালনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসনের দাবির বিষয়ে জমে থাকা বিশাল কাজ সম্পন্ন করার ওপরই অনেকের ‘জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে’।

অবশ্য সাড়া ফেলে দেওয়া এই রিপোর্ট সামনে আসার পরপরই ক্ষমা চেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী ম্যাট কিয়োগ। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রিপোর্টে কমিশনের উল্লেখিত সুপারিশগুলো তার সরকার ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ সমাধান করবে। আর এ লক্ষ্যে গত মে মাসে ক্ষমতায় আসার এই সরকার ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ৫০০ জন কর্মীও নিয়োগ করেছে।

দ্য রয়্যাল কমিশন ইন ডিফেন্স অ্যান্ড ভেটেরান সুইসাইড’র পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ হবে ২০২৪ সালের জুন মাসে। তবে এর আগে আরও শুনানি করবে রাজকীয় এই কমিশন।

 

এসকেএইচ//