• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০১৮, ০৬:২৩ পিএম

ইনাম চৌধুরী দায় মুক্ত, মুক্তাদির ঋণগ্রস্ত

ইনাম চৌধুরী দায় মুক্ত, মুক্তাদির ঋণগ্রস্ত
ইনাম আহমদ চৌধুরী ও মুক্তাদির আহমদ চৌধুরী

 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী।তাদের দু’জনের মনোনয়নপত্রও বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। 

হলফনামায় জমা দেয়া তথ্য অনুযায়ী দু’জনই উচ্চ শিক্ষিত। ইনাম আহমদ এলএলবি আর মুক্তাদির রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এমএসসি। দু’জনেই হলফনামায় নানা তথ্য দিয়েছেন। কিন্তু অলোচনা হচ্ছে ঋণের তথ্য নিয়ে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরীর কোনো ঋণ নেই। কিন্তু খন্দকার মুক্তাদির আহমেদর ঋণে চক্ষু চরক গাছ সবার। একাধিক ব্যাংকে ঋণগ্রস্ত রয়েছেন তিনি। আছেন দায়বদ্ধও। 

ইনাম আহমদ চৌধুরী তার আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার কথা উল্লখে করছেনে। হলফনামা অনুসারে, ইনাম আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা নেই। আগেও কোন  মামলা  ছিলো না তার বিরুদ্ধে। সচবি হিসেবে অবসর নেয়ার পর তিনি সমাজসেবা ও রাজনতৈকি র্কমকাণ্ডে জড়ান। বাড়ি, অ্যার্পাটমন্টে বা দোকান থেকে ভাড়া তিন বছরে ৫ লাখ ৪১ হাজার ৫৬০ টাকা আয় করনে। তার নামে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত আছে ২৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯২০ টাকার।

ইনাম চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ ১১ লাখ টাকা এবং ১৪ হাজার ৯২০ ইউএস ডলার রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৬৭ লাখ ৫৯ হাজার ১৯৭ টাকা। তার স্ত্রীর নামে নগদ ১৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা।

বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভূক্ত ও তালিকাভূক্ত নয় এমন কোম্পানির ২৫ হাজার শেয়ার আছে ইনাম চৌধুরীর। তার স্ত্রীর নামে শেয়ার আছে ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৯ টাকার। পোস্টাল, সেভিংস, বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে ইনামের বিনিয়োগ এক কোটি ৮৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭২ ও দুই কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ (এফডিআর)। তার স্ত্রীর নামে আছে এক কোটি ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকার বিনিয়োগ। তার নিজ নামে রয়েছে ৩১ লাখ টাকার যানবাহন, ইলকেট্রনিক সামগ্রী ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র এক লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ২৫ ভরি র্স্বণ (অর্জনকালীন সময়ের মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা) রয়েছে। ইনাম চৌধুরীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজরে নামে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট আছে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার (অর্জনকালীন সময়ের মূল্য)।


এদিকে বিএনপির অন্য প্রার্থী খন্দকার মুক্তাদিরের হলফনামার তথ্যে সিলেটে অলোচনার ঝড় বইছে। কোটি কোটি টাকার ঋণগ্রস্ত তিনি। বিভন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দায়বদ্ধও রয়েছেন । হলফনামা অনুসারে, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নামে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৭.৯৩ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে ৮৭ লাখ ৩১৪১.৬৭ টাকা এবং সিটি ব্যাংকে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৭.৮৩ টাকার একক ঋণ রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর এবং এক্সিম ও সিটি ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে গেল ২৬ নভেম্বর।  মুক্তাদির ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লি. এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। এর কোনোটির তিনি চেয়ারম্যান, কোনোটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা পরিচালক। এসব পদে থেকে তার নামে ট্রাস্ট ব্যাংকে ১৭২ কোটি ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার ১৬.৫২ টাকা, এক্সিম ব্যাংকে ৪৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬১.২৫ টাকা, ব্র্যাংক ব্যাংকে ৯ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫৬৭ টাকা, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৮৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৯.৪৩ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৫ কোটি এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালে ১৩ কোটি ৫০ লাখ ২৩ হাজার ৬১৫ টাকা ঋণ রয়েছে। এসব ঋণ ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত কয়েক দফায় পুনঃতফসিল হয়েছে। শুধু ঋণই নয়, খন্দকার মুক্তাদিরের নামে বিপুল অঙ্কের দেনা বা দায়ও রয়েছে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানে ‘ব্যবসায়িক ঋণ’ বাবদ তার দুটি প্রতিষ্ঠানের দায় আছে ৪ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫.৭২ টাকা ও ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৮২.২১ টাকা। এছাড়া এক্সিম ব্যাংকে  ‘ব্যবসায়িক ঋণ’ হিসেবে দায় আছে ৮৭ লাখ ৩ হাজার ১৪১.৬৭ টাকার, সিটি ব্যাংকে  ‘গাড়ির জন্য ঋণ’ বাবদ ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৪.৭৯ টাকা এবং  ‘ব্যক্তিগত ঋণ’ বাবাদ ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৩.০৪ টাকার দায় আছে মুক্তাদিরের।

হলফনামার তথ্য বলছে, খন্দকার মুক্তাদিরের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান)। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে ৫টি। এর মধ্যে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় ২টি, জালালাবাদ, শাহপরান ও এয়ারপোর্ট থানায় একটি করে মামলা আছে। সবগুলো মামলাই আদালতে বিচারাধীন। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা ছিলো। উভয় মামলার চার্জশিট থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
খন্দকার মুক্তাদির তিনটি আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তিনি সুতা রং করার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বস্ত্র  প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেমিক্যাল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তার স্ত্রীর আয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার আয় ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৬.৫৬ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে খন্দকার মুক্তাদিরের কাছে নগদ টাকা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৫১০ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে নগদ ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯০ টাকা রয়েছে। সিটি ব্যাংকে তার নামে ৩৬ হাজার ৩১০.৭৩ টাকা, ব্যাংক এশিয়ায় ৬ লাখ ৬৪ হাজার ১২৩.৪৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে এবি ব্যাংকে ৫০ হাজার ১৩১ টাকা জমা আছে। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার হিসেবে খন্দকার মুক্তাদিরের নিজের নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ৮৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং ১১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ টাকার শেয়ার আছে। তার স্ত্রীর নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানে যথাক্রমে তিন কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৩০ টাকা, তিন কোটি ২ লাখ টাকা এবং এক লাখ ১১ হাজার ৫০০ টাকার শেয়ার আছে।  মুক্তাদিরের নিজের নামে দুটি জিপ আছে, যেগুলোর মূল্য ২৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা। নিজের নামে বিয়ের সময়  ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ স্বর্ণ আছে ৫০ ভরি (মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লাখ টাকা), স্ত্রীর নামে বিয়ের সময়  ‘দান হিসেবে প্রাপ্ত’ ৫০ ভরি স্বর্ণ (মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা) আছে। তার নামে ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র এবং স্ত্রীর নামে ৫০ হাজার আসবাবপত্র রয়েছে।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে মুক্তাদিরের নামে  ‘উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত’ ০.১০ একর কৃষি জমি আছে, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ঢাকার কাফরুল থানা এলাকায় তার ৩৭.৫ শতাংশ অকৃষি জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা), সিলেট নগরীর সেনপাড়ায় ৫০ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা), ময়মনিসংহের ধামসুরে ১৯৫.৭৪ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪০০ টাকা), ময়মনিসংহের হাজিরবাজার এলাকায় ৯১.৫ শতাংশ জমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা), গুলশানে ৫ কাটা ভূমি (অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা) এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ০.১১৩৫১২৫ একর জমি রয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য ৪০ লাখ টাকা। মুক্তাদিরের স্ত্রীর নামে ঢাকার গুলশানে প্রতিটি ৩২৭২.২৮ বর্গফুট করে দুটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট আছে। এই দুই অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটির মূল্য  ‘অর্জনকালীন সময়ে’ ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

বিএস