• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০১৮, ০৪:৪৮ পিএম

বাংলাদেশে আর খাদ্যাভাব হবে না 

বাংলাদেশে আর খাদ্যাভাব হবে না 

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা একজন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল(বার্ক)এর সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি পাকিস্তান কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন দেশ স্বাধীনের আগে। তিনিই প্রথম কাজি পেয়ারার উদ্ভাবন করেছেন। দৈনিক জাগরণের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি বাংলাদেশের কৃষির পরিস্থিতি নিয়ে আদ্যপান্ত জানান। সাক্ষাতকারটি জাগরণের পক্ষে গ্রহণ করেছেন এম এ খালেক  

জাগরণ : আপনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান কৃষি বিজ্ঞানী। আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের কৃষি খাতের সম্ভাবনা কেমন বলে মনে করেন?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা: বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি খাতের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে কৃষি খাতের সম্ভাবনা অফুরন্ত। আপনাদের নিশ্চয়ই স্মরণ আছে, ১৯৭৪ সালে তৎকালিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বটম লেস বাস্কেট বা তলাবিহীন ঝুঁড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। তখনও মানুষ খাদ্যাভাবের মধ্যে ছিল। মানুষ না খেয়ে মারা যেতো। আজ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। সময়ের ব্যাপ্তিতে দেশে কৃষি বা আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে আশাব্যাঞ্জকভাবে। বাংলাদেশ আজ আর বটম লেস বাস্কেট নয়। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার পথে। বাংলাদেশে এখন আর কোনো খাদ্যাভাব নেই। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশে আর কখনো খাদ্যাভাব দেখা দেবার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। আগে মানুষ খাদ্য বলতে শুধু ভাত-মাছকেই বুঝতো। এখন তারা ভাত-মাছের পাশাপাশি অনেক ধরনের সহায়ক খাদ্যও গ্রহণ করছে। অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণে বৈচিত্র এসেছে। বাংলাদেশ আগামীতে সীমিত পরিসরে খাদ্য শষ্য রপ্তানির স্বপ্ন দেখছে।

জাগরণ : বার্ক গঠনের ইতিহাস সংক্ষেপে বলবেন কি?
ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : আমি পাকিস্তান কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ছিলাম। স্বাধীন বাংলাদেশে আমি যখন ফিরে এলাম তখন দেখি এখানে আমাকে পদায়ন করার মতো কোনো পোষ্ট খালি নেই। এখানে একটি মাত্র নির্বাহী পরিচালকের পদ ছিল তা আমার এক সিনিয়র সহকর্মীকে দেয়া হয়েছে। আমাকে দেয়ার মতো কোনো পদ খালি ছিল না। আমাকে বলা হলো কিছু দিন অপেক্ষা করার জন্য। আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। আজকে যেখানে আমরা বসে আছি এখানে তখন একটি ফাইভ স্টার হোটেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। সিলেটের মানুষ আব্দুস সামাদ আজাদ তখন কৃষি মন্ত্রী। আমি আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুকে চিনতাম। আমি সরাসরি বঙ্গবন্ধুর নিকট গেলাম। আমি বঙ্গবন্ধুকে বললাম ,বাংলাদেশ হচ্ছে একটি কৃষি প্রধান দেশ। আমরা কথায় কথায় বাংলাদেশের কৃষি খাতের সম্ভাবনা নিয়ে গর্ব করি। কিন্তু এখানে কৃষির উন্নয়নে কাজ করার পরিবর্তে ফাইভ স্টার হোটেল বানানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এটা কেমন কথা? বঙ্গবন্ধু আমার কথা সমর্থন করে বললেন, আপনি তো ঠিকই বলেছেন। তিনি জানতে চান এই হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ কিভাবে বন্ধ করা যায়? আমি তখন বললাম, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী আপনিই পথ বের করুন কিভাবে এই হোটেল নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধ করা যায়। এটা তো আমি বলতে পারবো না। বঙ্গবন্ধু আরো জানতে চান তাহলে এখানে কি করা যায়? আমি তাঁকে বলি এখানে হোটেলের পরিবর্তে বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু হোটেল বন্ধ করে এখানে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল স্থাপনের আদেশ দিলেন। আর এভাবেই এখানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল স্থাপিত হলো। কিছু লোক আমার সমালোচনা শুরু করেন এই বলে যে, উনি এমন একটি ভবন তৈরি করেছেন যা ঢাকায় দেখা যায় না। আমি এর উত্তরে বলি, ঢাকায় দেখা যায় না বলেই আমি এমন একটি ভবন তৈরি করেছি। এভাবেই চমৎকার একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল গড়ে উঠে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে। আমার সখ হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। আমি এভাবে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে এখানে কৃষি বিষয়ক তেমন কিছুই ছিল না। সব কিছুই গড়ে উঠেছিল তৎকালিন পশ্চিম পাকিস্তানে। যদিও বাংলাদেশই ছিল কৃষি প্রধান একটি অঞ্চল। পাকিস্তানে থাকাকালিন সময়ে আমি সে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রচুর কাজ করেছি। তারা আমাকে ‘ফাদার অব এগ্রিকালচার ইন পাকিস্তান’ বলে সম্বোধন করতো। পাকিস্তানিরা আমাকে যথেষ্ট সম্মান করতো। তারা আমাকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করতো। আমি যখন বাংলাদেশে আসার জন্য অপশন দিলাম যখন সে দেশের কৃষি সচিব বললেন, সবাইকে যেতে দিতে পারি কিন্তু কাজী বদরুদোজ্জাকে যেতে দেবো না। বলা হলো, পাকিস্তানের কৃষির উন্নয়নের জন্য আপনার দরকার আছে। আমি তখন বললাম, দেখুন বাংলাদেশ আমার নিজের দেশ। সেখানেও কৃষির উন্নয়নে কাজ করার প্রয়োজন আছে। আমি আমার নিজ দেশে চলে যেতে চাই। বাংলাদেশে এসে সবকিছুই নতুন করে শুরু করতে হলো। আস্তে আস্তে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে সাধ্য মতো অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ আজকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। এর পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। 

জাগরণ : সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের হাওর এলাকায় অকাল বন্যায় ফসলের যে ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : যে কোনো গবেষণার ফলাফল রাতারাতি পাওয়া যায় না। এটা পেতে হলে অনেক দিন সময় প্রয়োজন হয়। সিলেটে যে অকাল বন্যা হয়েছে এ জন্য আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার ছিল। আগামীতেও এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে। সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার। আমাদের স্বভাব হচ্ছে যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন কিছু দিন হৈ চৈ করি। কিন্তু তারপর সব ভুলে যাই। আমাদের যে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আগামী ৫০ বছরকে বিবেচনায় রাখতে হবে। অর্থাৎ আগামী ৫০ বছর পর কি ঘটতে পারে বা কি হতে পারে সেটা বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সিলেটে হাওর অঞ্চলে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে এটা যদি আমরা আগে থেকেই বিবেচনায় রাখতাম তাহলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সহজ হতো। এবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক আগেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু আমরা সেই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ফলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধগুলো মেরামত করা বা সঠিকভাবে মনিটরিং করা হয় নি। এটা করা হলে হয়তো ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা সীমিত রাখা যেতো। কিছু কিছু সমস্যা আছে যা আমরা চাইলেই বা চেষ্টা করলেই কিছুটা হলেও সমাধান করা যায়। আর কিছু সমস্যা আছে যা আমরা চাইলেও সমাধান করতে পারবো না। যেমন তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা। আমরা চাইলেই তিস্তা থেকে চাহিদা মতো পানি আনতে পারবো না। কিন্তু দেশের ভিতরে প্রবাহমান নদীর পানি তো চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আমরা যদি সত্যি দেশকে ভালোবাসি তাহলে আগামী ৫০ হতে ১০০ বছরের দূরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। হঠাৎ সৃষ্ট সমস্যা চাইলেই তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা যাবে না। এ জন্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। 

জাগরণ : বর্তমান সরকার কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নের জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এ রকম একটি পদক্ষেপ হচ্ছে চলতি অর্থ বছরে কৃষি ও পল্লি ঋণ খাতে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দকরণ। এই ঋণ ১০ শতাংশ সুদে কৃষককে দেবার কথা। কিন্তু ব্যাংকগুলো যদি সরাসরি কৃষককে এই ঋণ প্রদান না করে এনজিও’র মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করে তাহলে এনজিও’র নিকট থেকেও ১০ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। এনজিও’রা সেই ঋণ কৃষকের নিকট সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ সুদে বিতরণ করতে পারবে। এতে ব্যাংক এবং এনজিও’রা লাভবান হলেও টার্গেট গ্রুপ যে কৃষক তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : কৃষি ও পল্লি ঋণের ব্যবস্থাটা এমন হওয়া উচিৎ যাতে প্রকৃত কৃষকরা উপকৃত হয়। কিন্তু আপনি যেভাবে কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের কথা বললেন এটা যদি সত্যি হয় তাহলে কৃষক তো কোনোভাবেই লাভবান হবে না। এতে ব্যাংক এবং এনজিও’রা লাভবান হবে। কারণ ব্যাংকগুলো কোনো ধরনের কষ্ট না করেই মুনাফা অর্জন করতে পারবে। আর এনজিও’রা তাদের যেহেতু নেটওয়ার্ক তৈরি করাই আছে তারা স্বল্প পরিশ্রমে প্রচুর লাভবান হতে পারবে। এই অবস্থায় কৃষক কোনোভাবেই লাভবান হবে না। বরং তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কারণ কৃষক যদি প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ করতো তাহলেও তুলনামূলক কম সুদে ঋণ পেতে পারতো। এমন মেকানিজম তৈরি করা দরকার যাতে কৃষক তুলনামূলক কম সুদে সহজ শর্তে কৃষি ঋণ পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ঋণের সুদের আপার সিলিং বেধে দেয়া যেতে পারে। 

জাগরণ : আমরা প্রায়শই শুনে আসছি ফসলের বহুমুখিকরণের বিষয়টি। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ফসলের বহুমুখিকরণের সম্ভবনা কতটুকু বলে মনে করেন?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখনো সীমিত সংখ্যক ফসলের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। অথচ এখানে ফসলের বহুমুখিকরণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু একটি বা দু’টি ফসলের উপর নির্ভর করে একটি দেশ কখনোই তার কৃষি সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে না। কাজেই আমাদের যে কোনো মূল্যেই হোক ফসলের বহুমুখিকরণের দিকে জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই অনেক রকম বৈচিত্র এসেছে। আরো অনেক কিছু করার আছে। এমন কিছু ফসল আছে যা প্রচলিত ফসলের চেয়ে অধিকতর লাভজনক। আমাদেরকে সেই ফসলের দিকে যেতে হবে। ১৯৭৩ সালে আমি বাংলাদেশে আসার পর প্রথমেই যে কাজটি করি তাহলো, ফসলের বৈচিত্র আনায়ণ করা। আমি সবাইকে এটা বুঝাতে চেষ্টা করি যে, শুধু চালের উপর নির্ভর করলে চলবে না। আমাদের চালের বিকল্প বের করতে হবে। আমি অনেক ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে ভুট্টা এবং গমের চাষ সম্প্রসারণের কাজ শুরু করি। অনেক স্থানে এমনও হয়েছে যে, নদীতে বন্যার পানি সরে যাবার পর সেখানে ভুট্টার বীজ বপন করেছি। মানুষ আস্তে আস্তে এটা বুঝতে পারে যে বাংলাদেশে ভুট্টা চাষ করা সম্ভব। এবং ভুট্টার চাষ করা বেশ লাভজনক। শুধু মানুষের খাবার জন্যই ভুট্টার চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করিনি। ভুট্টার দ্বারা অন্যান্য প্রাণির খাবারও তৈরি করা যায়। বর্তমানে ভুট্টার মাধ্যমে পোল্ট্রি ফিড তৈরি হচ্ছে। দেশের বর্তমানে ভুট্টার আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। আমি প্রথম যখন ভুট্টা এবং গমের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করি তখন অনেকেই ঠাট্টা করতো। কিন্তু এখন প্রতীয়মান হয়েছে যে সেদিনের আমার সেই উদ্যোগ মোটেও ভুল ছিল না। ভুট্টা এবং গমের আবাদ হবার ফলে আমাদের শুধু চালের উপর নির্ভরতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। আমি মনে করি, ডাইভার্সিফিকেশন অব ক্রপস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। 

জাগরণ : অনেকেই বলে থাকেন, বাংলাদেশ শিল্পায়নের প্রতি অত্যন্ত গরুত্বারোপ করছে। এই শিল্পায়নের ভিত্তি হওয়া উচিৎ কৃষি অথাৎ তারা বলতে চাইছেন, শিল্পের কাঁচামাল আসতে হবে কৃষি খাত থেকে। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ আগামীতে একটি শিল্পায়িত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। কিন্তু এই শিল্পায়নের ভিত্তি হওয়া উচিৎ কৃষি খাত। কৃষির সঙ্গে শিল্পের কোনো বিরোধ নেই। শিল্পের কাঁচামাল যদি কৃষি খাত থেকে আসে তাহলে কৃষক লাভবান হবে। বর্তমান মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অনেকে এটা নাও চাইতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি এটা করা দরকার। অন্যথায় কৃষক লাভবান হবে না। কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে উঠলে শিল্প খাত আমদানি নির্ভর কাঁচামাল থেকে মুক্তি পাবে। বাংলাদেশের কৃষির সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। এই সম্ভাবনাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে। পাকিস্তানে তেলের প্রচন্ড অভাব ছিল। আমি ভুট্টা আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না। মাত্র ৪/৫ বছরের মধ্যে পাকিস্তান কর্ণওয়েলে ভরে যায়। আমার সুবিধা ছিল এটাই যে, আমি যা বলতাম সরকার তা শুনতো। 

জাগরণ : আপনি কৃষি ক্ষেত্রে অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে কাজী পেয়ারা অন্যতম। আপনি কাজী পেয়ারা উদ্ভাবনের বিষয়ে কিছু বলবেন কি?

ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা : কথাটি আপনি কিভাবে নেবেন জানি না। মানুষ যখন কাজী পেয়ারা নিয়ে আলোচনা করে আমার তা শুনতে ভালো লাগে না। কারণ আমি আরো অনেক কিছু করেছি। কিন্তু মানুষ সে সম্পর্কে তেমন একটা জানে না বা জানতে চায় না। আমার অন্যান্য উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু তা না করে কাজী পেয়ারার মতো সামান্য একটি বিষয় নিয়ে মানুষ আলোচনা করে। কাজী পেয়ারা একটি সাধারণ টেকনিক অবলম্বন করে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। কাজী পেয়ারা নামকরণ করেছে আমার কিছু সুহৃদ, যারা আমাকে ভালোবাসে। আমার সঙ্গে অনেক বিদেশি এক্সপার্ট চাকরি করতেন। এর মধ্যে কয়েকজন ছিলেন জাপানি। তাদের হবি হলো, বিভিন্ন দেশ থেকে ফলের গাছ সংগ্রহ করে তার আবাদ করা। জপানি টিম থাইল্যান্ড থেকে বড় আকারের পেয়ারা নিয়ে আসে। আমি তখন সেই থাই পেয়ারায় বাংলাদেশি জার্ম প্লাজম ঢুকানোর চেষ্টা করি। আমি এ জন্য বরিশালের পেয়ারার সঙ্গে থাইল্যান্ডের পেয়ারার ক্রস করি। এভাবে যে নতুন ফল পাওয়া গেলো তা একটি হাইব্রিড জাতীয় পেয়ারা। ফুড ভ্যালু বিশ্লেষণ করে ভালো ফলাফল পাওয়া গেলো। একটি আপেল খেলে যে পুষ্টি পাওয়া যায় কাজী পেয়ারা খেলে ঠিক ততটাই পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। কাজী পেয়ারা পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এবং দামেও কম। খেতে সুস্বাদু। মূলত এসব কারণেই কাজী পেয়ারা জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ৭/৮ বছর পর কাজী পেয়ারার জেনেটিক কোয়ালিটি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে বারি-২ বলে একটি ভ্যারাইটি বের হয়েছে। এটা কাজী পেয়ারার তুলনায় ভালো। কিন্তু বারি-২ সম্পর্কে মানুষ তেমন একটা জানে না। কাজী পেয়ারা নিয়ে গবেষণা করা দরকার। কাজী পেয়ারা নিয়ে ব্যাপক প্রচার হবার কারণেই এটা এত জনপ্রিয় হয়েছে। 

জাগরণ: জাগরণের পক্ষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
ড. কাজী এম বদরুদোজ্জা: আপনাদেরও ধন্যবাদ। জাগরণের জন্য শুভ কামনা রইল।