• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০১৮, ১২:৩৫ পিএম

ইশতেহারে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সামনে রাখুন

ইশতেহারে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সামনে রাখুন
ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

 

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তিনি  পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান। তিনি মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার ভবিষ্যতের দিকে
বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন। দৈনিক জাগরণের পক্ষে তার সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন এম এ খালেক ।

জাগরণ : আপনি বিভিন্ন সময় গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়ে বলেছেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট থেকে গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কেমন কেমন ম্যানিফেস্টো বা কর্মসূচি আশা করছেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি এবং সামাজিক ব্যবস্থায় এক ধরনের রূপান্তর প্রক্রিয়া চলছে অনেক দিন ধরেই। বিশেষ করে বর্তমান সরকার আমলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক রূপান্তর প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রথম দিকে বাংলাদেশ গড়ে ৬ শতাংশ এবং পরে ৭শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত অর্থ বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে এই সাফল্যের মূল ভিত্তি হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। কাজেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আগের মতো চিন্তা করলে চলবে না। এখন আমাদের উন্নয়ন চিন্তা হতে হবে গ্রাম কেন্দ্রিক। ইতোমধ্যেই গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থায় যান্ত্রিকায়ন শুরু হয়েছে। তবে একে আরো জোরদার করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা করে আমাদের জমির মান রক্ষা করতে হবে। কৃষক,কৃষি শ্রমিক এবং কৃষি ব্যবস্থাকে সমন্বিতভাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, কৃষককে বাদ দিয়ে কৃষির উন্নয়ন চিন্তা করলে চলবে না। কৃষি পণ্য উৎপাদিত হলে কৃষক যাতে তার সঠিক মূল্য পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি শ্রমিকের স্বার্থও আমাদের দেখতে হবে। কৃষি যান্ত্রিকায়নের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি যাতে গ্রামে পৌঁছে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে দ্রুত কৃষি যান্ত্রিকায়ন  হলে কিছু মানুষ,যারা এই খাতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে তারা বেকার হয়ে যেতে পারে। এই সম্ভাব্য বেকার কৃষি শ্রমিকদের ব্যাপারেও আমাদের পরিকল্পনা থাকতে হবে। একই সঙ্গে কৃষি খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। কৃষি খাতের পরিধি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এখন কৃষি বলতে শুধু ধান চাষকে বুঝায় না। এর সঙ্গে মাছ চাষ,হাঁস-মুরগি পালন,গবাদি পশু পালন ইত্যাদিকেও বুঝায়। কাজেই কৃষি খাতকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করলে চলবে না। আমাদের দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে আমরা চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছি। সেই অবস্থায় কৃষির গুরুত্ব আরো বাড়বে। কাজেই আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোকে গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে অনুধাবন করে সে অনুযায়ী বিভিন্ন কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মেনিফেস্টোতে গ্রামীণ উন্নয়নের ইস্যুটি বিশেষ গুরুত্ব পাওয়া উচিত।

জাগরণ : আপনি বিভিন্ন সময় গ্রামীণ ক্ষুদ্র উদ্যোগের কথা বলেছেন। আগামীতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসএমই খাতে কিভাবে অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন? 
 
ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: আমি গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছি এটা শুধু কৃষি নির্ভর উন্নয়ন নয়। এর সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোগও সম্পৃক্ত। গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে উঠছে। অনেকেই এখন কৃষির পাশাপাশি ছোট ছোট মাছের খামার,হাঁস-মুরগি পালন,রিক্সা ভ্যান তৈরি, চায়ের দোকান ইত্যাদি উদ্যোগ গড়ে তুলছেন। আমরা পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে এসব কাজকে প্রমোট করছি। গ্রামে অনেকগুলো গুচ্ছ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এগুলো তৈরি হচ্ছে,যদিও সরকার সাধ্য মতো সহায়তা দিচ্ছে। আগামীতে এসব উদ্যোগে রাষ্ট্রীয় সহায়তা আরো বাড়ানো যেতে পারে। গ্রাম এলাকায় যে সব পণ্য উৎপদিত হয় তা সাধারণত দু’ভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত,এলাকার লোকজন এগুলো ব্যবহার বা ভোগ করে। দ্বিতীয়ত,এসব কৃষি পণ্য ফিনিশড গুডস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যারা ফিনিশড গুডস তৈরি করে তারা যদি বৃহৎ আকারের হয় তাহলে প্রাথমিক উৎপাদনকারিরা নানাভাবে বঞ্চিত হয়। গ্রামীণ এলাকায় যারা প্রাথমিক পণ্য উৎপাদন করে তারা যেনো সঠিক মূল্য পেতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। 

জাগরণ : গ্রামীণ কৃষি ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব কেমন বলে মনে করেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: যে কোনো উৎপাদন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন ঘটে। আধুনিক প্রযুক্তি শুধু গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছালেই চলবে না এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাম এবং শহর নির্বিশেষে আমাদের দক্ষ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরী গ্রামীণ অর্থনীতিতে পুঁজি প্রবাহ বাড়াতে হবে। গ্রামের সাধারণ মানুষ সব সময়ই পুঁজি স্বল্পতায় ভোগে। এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে তাদের নিকট পুঁজি সহজলভ্য হয়। একই সঙ্গে বাজারজাতকরণ সম্পর্কে তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাজারজাতকরণ সম্পর্কে ধারনা থাকলে উৎপাদক শ্রেণি জানতে পারবে কোথায় বিক্রি করলে লাভবান  হওয়া যাবে। কি ভাবে বাজারজাত করতে হবে ইত্যাদি। এখানে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। আমরা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের সীমিত সামর্থ দিয়ে এসব বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। এই কাজগুলো ব্যাপক আকারে করতে হলে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

জাগরণ : বর্তমানে যে পদ্ধতিতে এসএমই ঋণ প্রদান করা হচ্ছে তা কি সঠিক বলে মনে করেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: এসএমই নামে অর্থায়নের যে ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিন্তু এটা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। কাজেই এ ব্যাপারে কথা বলা যেতে পারে। ক্ষুদ্র শিল্পে সবচেয়ে কম অর্থায়নের পরিমাণ হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু গ্রামে ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার মানুষের স্বল্পতা রয়েছে। গ্রামে দরকার হলো,৫ লাখ,১০লাখ বা ২০ লাখ টাকা। অর্থায়নের ক্ষেত্রে গ্রামীণ মানুষের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রাথমিক অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হলে পরবর্তীতে তারা নিজেরাই এগিয়ে যেতে পারবে। অর্থায়নের কাজটি সরকারি ভাবে করা যেতে পারে। এমন কি এনজিওদের মাধ্যমেও হতে পারে। এনজিওরা ঋণ দিলে তার সুদের হার বেশি হবে। তাই এ ক্ষেত্রে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের অবদানটাই বেশি বলে আমি মনে করি। অর্থায়নের ক্ষেত্রে গ্রামীণ মানুষের প্রয়োজন এবং সামর্থ্যরে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং জটিল পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটা সহজ করতে হবে। কোনোভাবেই ঋণ আবেদন এবং মঞ্জুরি প্রক্রিয়া কঠিন করা যাবে না। আমরা পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে জামানত ছাড়াই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছি। আমরা সীমিত পরিসওে ঋণ প্রদান করি। ঋণ প্রদানের সময় দেখা হয়,যারা ঋণ নিচ্ছে তারা ঋণ গ্রহণ করে আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য তৈরি কিনা? তারা যে কাজ করবে সে জন্য তারা প্রস্তুত কিনা, এ ব্যাপারে তাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ আছে কিনা ইত্যাদি। এসব যাচাই করার পরই ঋণ প্রদান করা হয়। এসব
গুনাবলি থাকলেই বেশি করে ঋণ প্রদান করা হয়। যাদের এসব গুনাবলি নেই তাদের প্রশিক্ষিত করে ঋণ প্রদান করা হয়। 

জাগরণ : গ্রামীণ অর্থনীতিতে যে সব পণ্য উৎপাদিত হয় তা সাধারণত শিল্প উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শিল্পায়িত করার সম্ভাবনা কতটুকু বলে মনে করেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ:বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সেখানে খুব সহজেই ছোট ছোট শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের যে জনশক্তি বিদেশে কর্মসংস্থান করছে তাদের বেশির ভাগই গ্রাম থেকে আগত। তারা যে রেমিটেন্স প্রেরণ করে তা দিয়ে শিল্পের পুঁজি যোগানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। গ্রামের মানুষের যথেষ্ঠ উদ্দীপনা রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই যে কোনো অসাধ্য সাধন করতে পারে। গ্রামে যাতে উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে উঠতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা মানসম্পন্ন পণ্য তৈরি করবে। সেই পণ্য যাতে তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে বিক্রি করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছেন। এগুলো যাতে অকৃষি জমিতে তৈরি করা হয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থাৎ ভালো ফসল উৎপাদিত হয় এমন জমি বাদ দিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে হবে। আশার কথা এই যে,বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারি খাস জমি এবং পরিত্যাক্ত জমিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কোনো কারণেই আবাদি কৃষি জমি নষ্ট না হয়  সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৮/১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেক উন্নত হবে। এখানে বিদেশি উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগকারিদের নানা ধরনের সুযোগ-সবিধা দিচ্ছে।                         

জাগরণ : জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবদান কি ভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ:বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলায় নানাভাবে কাজ করে চলেছে। বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। জাতীয় দৃষ্টিতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলায় অনেক কাজ করছি। আমরা নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করে কাজ করছি। গত ৫/৬ বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। গ্রাম-গঞ্জে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। শুধু যে সরকার এ ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করছে তা নয় সিভিল সোসাইটি,এনজিওরাও এ ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। তবে এ ক্ষেত্রে অর্থের সঙ্কট রয়েছে। আমরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করছি। কিন্তু তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। 

জাগরণ : একাদশ জাতীয় নির্বাচন আসছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা সম্ভবত একজন নতুন অর্থমন্ত্রী পেতে যাচ্ছি। কারণ বর্তমান অর্থমন্ত্রী আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছেন না। এই অবস্থায় সম্ভাব্য নতুন অর্থমন্ত্রীকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন?     

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: একটি দেশের অর্থনীতি যখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায় তখন কিছু চ্যালেঞ্জ থেকে যায় বা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কিছু চ্যালেঞ্জ সব সময়ই একটি অর্থনীতিতে থাকে। তারপরও অর্থনীতি এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে তাই বলে এর যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে না তা নয়। আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে বা হচ্ছে। বিশ্বের সবদেশের অর্থনীতিই কিছু না কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়েই এগিয়ে যায়। অর্থনীতিতে যে সব চ্যালেঞ্জ আছে তার সবই রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তারপরও অর্থনীতি এগিয়ে যাবে এটাই রীতি। কিন্তু আমাদের সব সময়ই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আগামীতে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিদ্যমান সমস্যাগুলো ছাড়াও আরো কিছু নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। আগামীতে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা যতটা এগিয়ে গেছি তাকে সুসংহত করতে হবে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে হবে। একই সঙ্গে উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।  এসডিজি’র একটি প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সবাইকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না। আগামীতে এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গেলেই দক্ষতা উন্নয়নের প্রশ্নটি এসে যাবে। দক্ষতা উন্নয়ন ব্যতীত সবাইকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা সম্ভব হবে না। কাজেই আমাদের এখনই দক্ষতা উন্নয়নের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সব খাতেই উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। যেটা একমাত্র সম্ভব দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই। গ্রামীণ খাতে তদারকির খুব অভাব লক্ষ্য করা যায়। তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা না গেলে ছোট ছোট উদ্যোগগুলো কাঙ্খিত মাত্রায় ফল দিতে পারবে না। আগামীতে এ ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক শ্রেণির উদ্যোক্তা গড়ে উঠছে ঠিকই কিন্তু তাদের জন্য কর্তৃপক্ষীয় সহায়তা আরো বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কিভাবে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বাজারজাত করতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের সহায়তা দিতে হবে। অনেকেই ভালো ভালো পণ্য উৎপাদন করলেও সঠিক বাজারজাতকরণের অভাবে মার খেয়ে যাচ্ছে। আগামীতে জাতীয় অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা হলো, উন্নয়ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ হয় তা সঠিকভাবে নির্ধারিত সময়ে ব্যয় করতে পারা। আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ হয় তার পুরোটা ব্যয় করা প্রায়শই সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে হয় না। আবার যে অর্থ ব্যয় হয় তাও সঠিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয়িত হয় না। দুর্নীতি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু অর্থ চলে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পে যে ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় তা বাস্তবায়নের হার ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। আগামীতে নতুন সরকারের
জন্য এই সমস্যা কাটিয়ে উঠাটা বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। সময় মতো প্রকল্প বাস্তবায়িত না হবার ফলে দেখা যায় আমরা যত দূর যেতে পারতাম তা যেতে পারছি না। সময় মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত না হবার কারণে প্রকল্প ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশেষ করে বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। আগামীতে এসব বিষয়ে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর করতে হবে। একই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় যাতে দুর্নীতি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি। কিন্তু দুর্নীতি তো কমে না। এদিকে নজর না দিলে উন্নয়নের সুফল সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে না। 

জাগরণ : আপনি দুর্নীতির কথা বললেন। আপনি বলবেন কি দেশের করপোরেট গুড গভর্নেন্সের অবস্থা কেমন, বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরের?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের প্রচন্ড অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যাংকিং সেক্টরের মতো আর্থিক খাতে এমন সব কাজ কারবার চলছে যা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। যেমন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করা। ঋণ নিয়ে যথা সময়ে ফেরৎ না দেয়া বা ঋণের অর্থ একেবারেই ফেরৎ না দেয়া ইত্যাদি। এগুলো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ব্যাংক পরিচালনায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারাও এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। যে ধরনের করপোরেট কালচার থাকা প্রয়োজন তা গড়ে উঠছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের যেভাবে তদারকি করার কথা তারা সেটা সঠিকভাবে করতে পারছে বলে মনে হয় না। ব্যাংকিং খাতে করপোরেট গভর্নেন্স খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগামী সরকার,বিশেষ ভাবে সুনির্দিষ্টভাবে বললে বলতে হয় নতুন অর্থমন্ত্রীর  জন্য এটা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।

জাগরণ : ঋণ মান নির্ধারণকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস বলেছে,বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি অত্যন্ত ভালো হলেও ব্যাংকিং সেক্টর ভালো করতে পারছে না। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থতার কারণে ঋণ ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে মুডিস নেতিবাচক মন্তব্য কললেও তারা বাংলাদেশের ঋণ মান কিন্তু ঠিকই রেখেছে। তারা বাংলাদেশের ঋণ মান ঠিক রাখলেও এখানে এক ধরনের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যে এখানে তোমাদের উন্নতি করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে। আমি মনে করি,এটা আমাদের জন্য ভালো। তাদের মন্তব্যের কারণে আমরা সতর্ক হবার সুযোগ পাবো। আমরা অনেক দিন ধরেই এ ব্যাপারে কথা বলে আসছিলাম। এখন মুডিস একই কথা বললো। যারা ব্যবস্থাপনায় আছেন তারা আমি আশা করবো এখন সতর্ক হবেন। তারা আগামীতে এই খাতকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসবেন। ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে বলে মুডিস যে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছে এটা তো আমরাও অনেক দিন ধরেই বলে আসছিলাম। আমাদের মতো একটি অর্থনীতিতে এত সংখ্যক ব্যাংকের আবশ্যকতা নেই। এর আগে যে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তখনও আমি বলেছিলাম দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আরো কয়েকটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হলো। ব্যাংকগুলো আমানত নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। ব্যাংকগুলো এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যা না বাড়িয়ে যদি শাখা বাড়ানো হতো সেটাই হতো যৌক্তিক। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়ে গেছে। এদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে হবে তা ঠিক নয়। বরং বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর শাখা বৃদ্ধি করে এই প্রয়োজন মেটানো যেতো। অনেক ব্যাংক আছে গ্রামে যাদের কোনো শাখা নেই। এদের গ্রামে শাখা খোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। ব্যাংকিং সেক্টরে যেসব নীতি প্রণীত হয় তার সঠিক বাস্তবায়ন আগামীতে একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। 

জাগরণ : বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের পল্লি এলাকার সাধারণ কৃষকের উন্নয়ন বিশেষ করে তাদের কৃষির বাইরে ছোট ছোট শিল্প উদ্যোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়তা করার জন্য কৃষি ও পল্লি ঋণ নামে এক ধরনের বিশেষ ঋণদান কার্যক্রম চালু করেছে। গত অর্থ বছরে এ খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই উদ্যোগ পল্লি এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোগ গড়ে উঠার ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হচ্ছে বলে মনে করেন?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি ও পল্লি ঋণ নামে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের জন্য যে বিশেষ ঋণদান কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা অত্যন্ত ভালো এবং কার্যকর একটি উদ্যোগ বলেই আমি মনে করি। যদিও উদ্যোগটি খুব একটা বড় নয়। কিন্তু তারপরও এর তাৎপর্য কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। কৃষি ও পল্লি ঋণের সুদের হার প্রচলিত ব্যাংক ঋণের সুদের হারের চেয়ে কম। কৃষক এবং সাধারণ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নানাভাবে অবদান রাখতে সক্ষম তাদের জন্য এই ঋণদান কার্যক্রম বিশেষ সহায়ক হচ্ছে। আমি মনে করি এই ঋণদান কার্যক্রম আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। কারণ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সব সময়ই পুঁজি স্বল্পতা থাকে। পুঁজির অভাবে অনেকেই ইচ্ছে এবং সামর্থ থাকা সত্বেও কোনো বিশেষ উদ্যোগ গড়ে তুলতে পারেন না। গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সামর্থ সম্পর্কে আমার কোনো সন্দেহ নেই। তারা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট পেলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। আমরা ব্যাপক ভিত্তিক কর্মসংস্থানের কথা বলছি। কারণ প্রত্যেক সামর্থবান মানুষের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ব্যতীত কোনো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারে না। আর উন্নয়ন হলেও তা টেকসই হয় না। তাই আমাদের যে কোনো মূল্যেই হোক কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আর এটা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে শুধু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদানের মাধ্যমে কোনো দিনই বেকার সমস্যা নিরসন করা যাবে না। এ জন্য স্ব-উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর জোর দিতে হবে। একজন উদ্যোক্তা নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যাতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যেতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাস্তবায়ন করছি। এসডিজি’র একটি বড় শর্ত হচ্ছে কাউকে পিছনে ফেলে রাখা যাবে না। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। কাজেই সমাজে বেকার সমস্যা বিদ্যমান রেখে কখনোই সত্যিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের আরো গুরুত্বের সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় স্ব-উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে যেখানে উদ্যোক্তা নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণের পাশাপাশি অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে। ইতোমধ্যেই এ ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একে আরো বেগবান করার জন্য রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে হবে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন থেকে আমরা পল্লি এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে সফলতাও উল্লেখ করার মতো। গ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। অল্প পুঁজিতেই এ ধরনের ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সিডিউল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে পল্লি এলাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোগ গড়ে তোলার জন্য যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা খুবই আশাব্যাঞ্জক। এই উদ্যোগকে আরো সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে,গ্রামকে পিছনে ফেলে রেখে কখনোই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে পারে না। প্রত্যেকটি গ্রামকে এক একটি উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষকে কর্মসংস্থানের জন্য শহরে আসতে না হয়। তারা গ্রামেই কর্মসংস্থানের পর্যাপ্ত সুযোগ পাবে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন,বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোগ সৃষ্টির জন্য শুধু অর্থ বা পুঁজি প্রদান করলেই চলবে না সেই অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কারণ তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে প্রদত্ত অর্থ বা পুঁজি অন্য খাতে প্রবাহিত হতে পারে। এ ছাড়া উৎপাদক শ্রেণি যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করছে তা কতটা মানসম্পন্ন হচ্ছে সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। অন্যথায় এই উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।

জাগরণ : নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে কি?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ:নির্বাচনের আগে আনেক সময় মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। আবার অনেক সময় মূল্যস্ফীতি না বেড়ে বরং স্বাভাবিক থাকে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নাও বাড়তে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির মতো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন উপলক্ষে বাজারে কিছু বাড়তি টাকা চলে আসতে পারে। কিন্তু তা সত্বেও সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতি খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না। কারণ বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। 

জাগরণ : নির্বাচনের প্রাক্কালে অথবা পরে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা আছে কি?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: নির্বাচনের সময় প্রতি বছরই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি ঘটে। কারণ এ সময় আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা নির্বাচন নিয়ে অতিমাত্রায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে এই সুযোগে সমাজ বিরোধিরা তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। তবে এবার দেশের সব প্রধান রাজনৈতিক দল যেহেতু অংশ গ্রহণ করছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির খুব একটা অবনতি ঘটার আশঙ্কা নেই বলেই আমি মনে করি। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই তা ২০১৫ সালের মতো  হবে না। 

জাগরণ : অনেক দিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব একটা চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে নতুন মাত্রায় গতিশীলতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন কি?

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদযদি নির্বাচন সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশের ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়বে বলে আমি মনে করি। যদিও আমাদের দেশের একটি কালচার হচ্ছে নির্বাচনে যে দল হেরে যায় তারা বলেন,নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নি। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তা এমনিতেই বুঝা যায়। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এবার সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে আমি ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ব্যাপারে আশাবাদি। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করাই আছে। আগামীতে বিদেশি বিনিয়োগকারিরাও বাংলাদেশে বর্ধিত মাত্রায় আসবে বলে আমি মনে করি। কিন্তু আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা। জ্বালানি, বিদ্যুৎ,গ্যাস ইত্যাদির সমস্যা। এগুলো সমাধানের জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। গত কয়েক বছর দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল না। কিন্তু এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। আগামী নির্বাচনের পর সেই অবস্থা কেটে যাবে বলে আমি মনে করি। 

জাগরণ : আপনাকে জাগরণের পক্ষ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: জাগরণকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।