• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০২০, ০৬:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০২০, ০৬:২৬ পিএম

মুক্তচিন্তার আবহাওয়া তৈরি করতে হবে : হাসান আজিজুল হক

মুক্তচিন্তার আবহাওয়া তৈরি করতে হবে : হাসান আজিজুল হক

বাংলাদেশের আধুনিক ছোটগল্পের রাজপুত্র নামে পরিচিত তিনি, কথাসাহিত্যে পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নানা সম্মানজনক পুরস্কার, তিনি হাসান আজিজুল হক। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাট চুকিয়ে এখন পুরোটা সময় কাটাচ্ছেন পড়াশোনা ও লেখালেখিতে। দৈনিক জাগরণ-এর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বর্তমান সময় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তারই চুম্বক অংশ এখানে দেওয়া হলো।


জাগরণ : সম্প্রতি একদল উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার উসকানি দিচ্ছে। এমনকি কয়েক দিন আগে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও ভাঙে সেই মতাদর্শের লোকেরা। তাদের দাবি মানতে গেলে তো অপরাজেয় বাংলা, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, জাগ্রত চৌরঙ্গী, বিজয় ‘৭১, রাজু ভাস্কর্যের মতো ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলতে হবে, যা আমাদের স্বাধীনতা স্মৃতিচিহ্ন, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?

হাসান আজিজুল হক :
এরা মৌলবাদী এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক। এ জন্য তারা মূর্তি, ভাস্কর্য এগুলো সব ধ্বংস করে ফেলতে চায়। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে, যা চরম রাষ্ট্রবিরোধী কাজ এবং তাদের মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। ভাস্কর্য বিষয়ে তারা কিছুই জানে না। ভাস্কর্য আর মূর্তি তো এক জিনিস নয়। ভাস্কর্য হলো আলাদা একটি জিনিস। যারা ভাস্কর্য ভাঙার কথা বলে, এটা তাদের ধর্মান্ধ মূর্খতা।

জাগরণ : দীর্ঘদিন ধরে আপনি মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে আসছেন। এ সময় এসে আপনার কাছে জিজ্ঞাসা, কতখানি এগিয়েছে আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশ?

হাসান আজিজুল হক :
যে জিনিস স্বপ্নের, সেটা পরিষ্কার বাস্তবায়িত হবে, তা কেউ আশা করে না। স্বপ্ন দেখেছি ঠিকই, তবে সেটা বাস্তবে পরিণত হতে আরো সময় লাগবে। বাংলাদেশকে নিয়ে আমি যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, শিল্প, সংস্কৃতি, সংগীত সমস্ত জায়গাটা একটু পরিপূর্ণতা পাবে এবং পুরোটাই পরিচিতি পাবে বাংলা ও বাঙালি নামে।  সেটা তো এখনো পূরণ হয়নি। তাই ওই স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে।

জাগরণ : দেশের উগ্র মৌলবাদী অপশক্তি নির্মূলে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন?

হাসান আজিজুল হক : মৌলবাদ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান যেকোনো ধর্মের হতে পারে। যেকোনো মৌলবাদ আমি বিরোধিতা করি। এটি মানুষের মুক্তচিন্তাকে আটকে ফেলে। মৌলবাদ যদি উগ্র হয়ে ওঠে, তখন তাকে জোর করে থামাতে হবে। নইলে উগ্র মৌলবাদীরা ধীরে ধীরে নরহত্যার দিকে যাবে, গণহত্যার দিকে যাবে। তাই তাদের সেভাবে উচিত জবাব দিতে হবে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে যে ভালো বোধগুলো এখনো কাজ করছে, সেগুলোকে আরো তীক্ষ্ণ করা, এগুলোকে আরো চর্চা করা প্রয়োজন। নিজের স্বার্থের থেকে অন্যের স্বার্থকে বড় করে দেখা। নিজের অসহায়ত্বে অন্যকে ডাকা, অন্যের অসহায়ত্বে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, তাকে সাহায্য করা প্রয়োজন। ধর্মচিন্তাকে যদি একটি মুক্তচিন্তায় নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে এসব কুসংস্কার, আচ্ছন্নতা কাটবে না।

জাগরণ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?

হাসান আজিজুল হক : এ বিষয়ে মন্তব্য করা খুব কঠিন। কারণ প্রাপ্তি যেমন আছে, তেমনি অপ্রাপ্তিও আছে। কিছু ভালো হয়েছে, কিছু হয়নি। যেমন সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ কি একেবারে গোড়া থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে? না হয়নি। এগুলো মানুষের স্বভাবের মধ্যেই আছে। দেশে এখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হোক, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার নামের এখনো অল্প-বিস্তর মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এটা শুধু যে বাংলাদেশে হচ্ছে তা নয়, পৃথিবীর সব দেশেই হচ্ছে।

জাগরণ : দেশের সার্বিক কল্যাণে উত্তর-প্রজন্মের জন্য আপনার পরামর্শ বা নির্দেশনা কী?

হাসান আজিজুল হক : এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করতে হবে, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে সবাই মুক্তচিন্তা করতে পারে, সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে, সমাজটাকে সুন্দরভাবে গড়তে পারে।