• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২১, ০৮:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১৫, ২০২১, ০২:২৫ পিএম

‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নেই বলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে’

‘অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নেই বলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে’

রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার ভেঙে চীনা নাগরিকসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। রোববার (১৪ মার্চ) সকালে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণকালে তিনটি গার্ডার পড়ে ১৫ জন নিহত হন। আহত হন আরো অনেকে। ২০১৭ সালের ১২ মার্চ রাজধানীর মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে নিহত হন একজন। পা হারান আরো দুইজন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ফ্লাইওভার থেকে নির্মাণ সামগ্রী পড়ে পথচারীদের হতাহত হতে দেখা গেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা কেন হচ্ছে তা নিয়ে জাগরণ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুব্রত চন্দ।


জাগরণ: রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের গার্ডার ভেঙে চারজন আহত হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটে বলে আপনি মনে করেন?
ইকবাল হাবিব:
 নির্মাণ শ্রমিকের সুরক্ষায় সুস্পষ্ট এবং কার্যকর আইন না থাকাতে এই খাতে এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে। দ্বিতীয়ত শ্রম আইন ও পরিবেশ আইন অনুযায়ী কিছু ছোট-খাটো প্রতিরোধক আইন রয়েছে বা বিধি-বিধান রয়েছে, সেগুলোকে কার্যকর করার জন্য দায়িত্বশীল কোনো সংগঠন এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না। শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শকরা নির্মাণ কার্যক্রমকে তাদের শিল্পের সাথে একইভাবে দেখে না। কারণ নির্মাণ শিল্পকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শ্রম বিভাগ এটাকে তাদের অঙ্গীভূত করেনি। একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন বা পরিবেশ অধিদফতর অথবা রাজউক কেউ-ই এই নির্মাণ শ্রমিক এবং নির্মাণকালীন প্রতিবেশ সুরক্ষায় কোনো ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। অতএব এর পুনরাবৃত্তির মূল কারণ হচ্ছে এটি। সেই মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে সরকারি প্রকল্পগুলোতেও এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা দেখেছি। যেখানে শ্রমিকরা অবহেলাজনিত অথবা এই ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকার কারণে মারা গেছে। তারও কোনো প্রতিবিধান করা যায়নি। মূলত জাহাজভাঙা শিল্পে দীর্ঘদিন আন্দোলন করার ফলে কিছুটা আইনি অনুশাসন তৈরি করা গেছে। কিন্তু অন্যান্য নির্মাণ শিল্পে এটির অনুপস্থিতি আজকের অবস্থা তৈরি করেছে।

জাগরণ: শুধু আজকের ঘটনাই না। এর আগেও ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরপরও থামছে না এমন দুর্ঘটনা। এটা আমাদের অবহেলা না অজ্ঞতা?
ইকবাল হাবিব:
এটা একেবারেই অবহেলা। এই অবহেলার কোনো শাস্তি নেই বলে বা অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ডের বিচার নেই বলে এর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

জাগরণ: এই ধরনের বড় বড় স্থাপনা নির্মাণে শ্রমিক ও জনসাধারণের নিরাপত্তার যে প্রস্তুতি নিতে হয়, তা কতখানি আছে বলে আপনি মনে করেন?
ইকবাল হাবিব:
প্রস্তুতি নেই, কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার সামর্থ আছে। তাহলে লাভ কী? সামর্থ আছে, কিন্তু সেটা করলাম না। তার মানে এটার তাগিদটা আমাদের নেই। যদি মেট্রোরেল এবং অন্যান্য কন্সট্রাকশন দেখেন, তাহলে বুঝবেন। মেট্রোরেলের কোনো শ্রমিক বা কোনো কর্মীকে আপনি যথাযথ পোশাক ও সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে দেখবেন না। কিন্তু অন্যান্য নিমার্ণে এটার ব্যত্যয় দেখতে পাই। তার মানে, সামর্থ্যটা গুরুত্বপূর্ণ না, আন্তরিক ইচ্ছা এবং বাধ্যবাধকতা- এই দুটোর অনুপস্থিতি এর জন্য দায়ী।

জাগরণ : ঢাকা শহরের ফ্লাইওভারগুলো কতখানি পরিকল্পিতভাবে নির্মিত হচ্ছে?
ইকবাল হাবিব:
অবশ্যই একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার জট এখানে রয়েছে। অর্থাৎ, সামগ্রিক পরিকল্পনাহীনতায় এই ফ্লাইওভারগুলো তৈরি হচ্ছে বলে ইতোমধ্যে সরকারি দালিলিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। এই ব্যাপারে ইতোমধ্যে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল অথোরিটি (বিটিসিএ) হতাশা ব্যক্ত করেছে। আমরা আশা করছি যে, তাদের হতাশা সুপরিকল্পিতভাবে একটি যোগ্যতর জায়গার শুরু হবে। কিন্তু সেটাও হয়নি। শুধু হতাশাই ব্যক্ত করা হয়েছে। এর কারণ একেকটা ফ্লাইওভার প্রকল্প একেক সংস্থার দ্বারা তৈরি হয়েছে। প্রথমটা তৈরি করেছে সড়ক ও জনপথ ‘মহাখালী ফ্লাইওভার’। দ্বিতীয়টা তৈরি করেছে রাজউক ‘কুড়িল ফ্লাইওভার’। তৃতীয়টা তৈরি করেছে এলজিইডি ‘খিলগাঁও ফ্লাইওভার’ এবং চতুর্থটা তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন ‘হানিফ ফ্লাইওভার’। এই যে একেকটা একেকজন একেক সময় তৈরি করছে, এর ফলে সমন্বিতভাবে যে পুরো শহরের জন্য করিডোরভিত্তিক একটি পরিকল্পিত ফ্লাইওভার নেটওয়ার্ক তৈরি হচ্ছে না। ফলে মহাখালী ফ্লাইওভারের সঙ্গে বনানী ফ্লাইওভারের যেখানে যুক্ত হতে হয়, এই যে নিচের ট্রাফিকটাকে পুনরুদ্ধার করা যেত, সেটা অল্পের জন্য আমরা করতে পারিনি। আবার মগবাজার ফ্লাইওভারের সঙ্গে মহাখালী ফ্লাইওভারের যুক্ত হতে হয়, আমরা যে তেঁজগাও এলাকা ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের ট্রাফিকটাকে ঠিক করতে পারতাম, সেটা করতে পারিনি। তার মানে শুধু সমন্বয়হীন এবং পরিকল্পনাহীন অর্থের অপচয় হয়েছে।