• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯, ০৩:০৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:৫৪ পিএম

সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে


ইলিয়াস কাঞ্চন দেশের একজন খ্যাতিমান চিত্রনায়ক। তিনি বহু জনপ্রিয় সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু এখন তিনি সার্বক্ষণিক একজন সামাজিক আন্দোলন কর্মী। বহুদিন ধরেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।  নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তিনি। সড়কের দুর্ঘটনা নিয়ে গত বছর ছাত্ররা আন্দোলনে নেমে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু কোনোক্রমেই আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু থেকে রেহাই মিলছে না। এ নিয়ে তিনি জাগরণের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি দৈনিক জাগরণের পক্ষে গ্রহণ করেছেন এম এ খালেক


দৈনিক জাগরণ : সম্প্রতি আপনি নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেছেন। উপস্থাপিত সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত পরিসংখ্যানের বৈশিষ্ট্য কি?

ইলিয়াস কাঞ্চন : ২০১২ সাল থেকে আমরা নিয়মিতভাবেই বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছি। এবারও তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপদ সড়ক চাই-এর পক্ষ থেকে ২৯ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ১৯৯৩ সালে ২২ অক্টোবর আমার সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চন এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার নির্মমভাবে নিহত হন। জাহানারা কাঞ্চনের সেই অকালমৃত্যুর ভয়াবহ শোককে শক্তিতে পরিণত করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সামাজিক আন্দোলন, যার নাম নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। আজ পর্যন্ত দেশে এবং বিদেশে নিরাপদ সড়ক চাই-এর ১২০টি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব শাখার মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষ, যানবাহন চালক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মহলকে সচেতন করার বিষয়ে কাজ করে চলেছি। ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রণয়ন এবং উপস্থাপনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা, দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের সংখ্যা নির্ণয় করা, দুর্ঘটনার জন্য যানবাহনের দায় নিরূপণ করা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়ন করা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ৬টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্ঘটনাসংক্রান্ত সংবাদ, বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং আমাদের শাখা সংগঠন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ সেকেন্ডারি তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রণীত হয়েছে।

দৈনিক জাগরণ : প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে আপনারা কি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : আমরা নানাভাবে বা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছি, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এতে নিহত হয় ৪ হাজার ৪৩৯ জন। হাসপাতালে ভর্তি এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজ হওয়ার পর মারা যায় ৭৪০ জন। ২০১৮ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় ৭ হাজার ৪২৫ জন। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৩৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৬৪৫ জন নিহত এবং ৭ হাজার ৯০৮ জন আহত হয়। ২০১৬ সালে ২ হাজার ৩১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ১৫২ জন নিহত এবং ৫ হাজার ২২৫ জন আহত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা এবং তাতে নিহত বা আহতের সংখ্যা যে কোনো বিচারেই উদ্বেগজনক। নানাভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমরা সড়ক দুর্ঘটনার হার বা সংখ্যা কাক্সিক্ষত মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারছি না।

২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার মধ্যে ৪৬ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে গাড়িচাপায়। মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে ১৯ শতাংশ। গাড়ি উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে ৮ শতাংশ যানবাহন। খাদে পড়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে ৪ শতাংশ যানবাহন। অন্যান্য নানা উপায়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে ২২ শতাংশ যানবাহন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে বাস, যার সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ট্রাকের মাধ্যমে দুর্ঘটনা হয়েছে ৩০ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২ শতাংশ। অর্থাৎ বাস, ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মাধ্যমে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৮৫ শতাংশ। বাকি দুর্ঘটনা ঘটেছে অন্যান্য যানবাহনের মাধ্যমে। ২০১৮ সালে যে সব সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, তাতে বিভিন্ন যানবাহনের চালক নিহত হয় ৫৬৬ জন। এর মধ্যে ১৬০ জন বা ২৪ শতাংশ চালক মারা যান মোটরসাইকেলের। বাসচালক মারা যান ৬৪ জন বা ১৪ শতাংশ। মৃত চালকের মধ্যে ৫৯ জন বা ১১ শতাংশ ছিলেন ট্রাকচালক। দেশে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, তা উদ্বেগজনক। আমাদের প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করা যায় না। কারণ পত্রিকায় সড়ক দুর্ঘটনার যে খবর প্রকাশিত হয় তার বাইরেও অনেক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, যা আমাদের অগোচরেই থেকে যায়। তাই বলা যেতে পারে যে, দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার হার আরও অনেক বেশি।
 
দৈনিক জাগরণ : সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনা কোথায় বেশি হয় বলে আপনারা জানতে পেরেছেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : ২০১৮ সালে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে আমাদের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে, বেশির ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বড় বড় শহর এবং হাইওয়েগুলোতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন-ভ্যানগাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা, নসিমন, করিমন ইত্যাদি দুর্ঘটনার জন্য বিশেষভাবে দায়ী। আইন অমান্য করে ধীরগতির বাহন এখনো মহাসড়কে চলাচল করে, যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্নতা সৃষ্টি করে। এসব ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে এ ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যায় না। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া এসব ধীরগতির গাড়ির হেডলাইট না থাকায় ঘন কুয়াশা এবং বৃষ্টিতে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ঘন কুয়াশার কারণে লঞ্চ, স্টিমার নৌকা, এমনকি উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার বিধান হয়েছে। ঘন কুয়াশায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করে দেয়া হলেও তা মানা হয় না।  
      
দৈনিক জাগরণ : মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে সড়ক দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : মোটরসাইকেল চালকদের কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। তবে ঢাকাসহ অন্যান্য মেট্রোপলিটন শহরে মোটরসাইকেল চালকদের মাঝে হেলমেট পরিধানের অভ্যাস গড়ে ওঠা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু জেলা বা উপজেলা শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় মোটরসাইকেল চালক এবং আরোহীদের মাঝে হেলমেট  ব্যবহার না করার প্রবণতা, দুইয়ের অধিক আরোহী বহন, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালনা এবং চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি নানা কারণে এখনো মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কাঙিক্ষত মাত্রায় কমে আসছে না। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞাত করানো এবং আইন পরিপালনে উদ্বুদ্ধ করা গেলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা অনেকটাই কমানো যেত বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের প্রশিক্ষিত করতে হবে।

দৈনিক জাগরণ : জেলা শহর এবং অন্যান্য শহরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি বলে মনে করেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : নানা কারণেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সড়কে চলাচল করার বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, অপর্যাপ্ত রাস্তাঘাট এবং সংস্কারবিহীন রাস্তা, মোটরসাইকেল এবং রিকশার জন্য আলাদা লেন না থাকা, শহরের মধ্যে কলকারখানা স্থাপন ইত্যাদিকে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। পথচারীদের মাঝে আইন না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। প্রায়শই দেখা যায়, জেব্রা ক্রসিং, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও তারা এগুলো ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হন। যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বলা, ফুটপাথ ব্যবহার না করা ইত্যাদি কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেকেই উল্টো পথে চলাচল করে থাকেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা মাঝে মাঝে উল্টো পথে চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা করলেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের অভাবে এ প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না।  

দৈনিক জাগরণ : জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজিতে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। এটা বাস্তবায়নে আমরা কতটা সমর্থ হয়েছি বলে মনে করেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষ্য হচ্ছে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার অন্তত ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা। বাংলাদেশ ২০১৮ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ শতাংশ অর্জন করেছে। এ অর্জন আরও ত্বরান্বিত করা সম্ভব হতো যদি ২০১৭ সালে আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে না যেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ১২টি দেশের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। তারপরও আমরা আশাবাদী যে, ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারব যদি ইস্যুটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা করণীয় নির্ধারণ করতে পারি।

দৈনিক জাগরণ : আপনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করছেন প্রায় ২৫ বছর ধরে। এ আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে কিছু বলবেন কি?

ইলিয়াস কাঞ্চন : আমি অনেক দিন ধরেই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করছি। আমি মনে করি, এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এক ধরনের সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছি। বর্তমানে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। গত বছর জুলাই মাসের ২৯ তারিখে যখন রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় এবং পরবর্তীতে তার প্রেক্ষিতে যে আন্দোলন হয় তাতেই মানুষ বুঝতে পারে ইলিয়াস কাঞ্চন ২৫ বছর আগে নিরাপদ সড়ক চাই নামে যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন তা কতটা প্রাসঙ্গিক। বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই নিরাপদ সড়ক চাই কথাটি উচ্চারিত হয়। কোনো এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষের অবচেতন মনে ইলিয়াস কাঞ্চনের চেহারাটা ভেসে ওঠে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন; নির্দেশনা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। পরিবহন মালিকরাও দুর্ঘটনা রোধে কাজ করছেন। চালকরাও আগের তুলনায় অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি গার্লস গাইড, বয় স্কাউটরাও রাস্তায় নেমে পুলিশের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করছে। আজকে অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি, এসবই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের একটি ফসল। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে আমাদের অনেকগুলো সুপারিশ স্থান পেয়েছে। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই-এর পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি আইন পাস করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম।

দৈনিক জাগরণ : এ মুহূর্তে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আমাদের করণীয় কি বলে মনে করেন?

ইলিয়াস কাঞ্চন : প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা ও তার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কিত সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয়সমূহ স্কুলের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে যানবাহন চালক এবং যাত্রীদের সচেতন করে তুলতে হবে। পথচারীদের রাস্তা চলাচলের ব্যাপারে আইন মানার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যানবাহন চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষিণ দিতে হবে। দেশে বর্তমানে ১৬ লাখ চালকের চাহিদা রয়েছে। শিক্ষিত বেকার যুবকদের বিনা খরচে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ চালকে পরিণত করা যেতে পারে। এতে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি দেশ দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত চালক পেতে পারে। সরকারি উদ্যোগে সকল জেলায় একটি করে ড্রাইভিং ও মেকানিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। পথচারীদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। মহাসড়কের ত্রুটিগুলো দূরীকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত রাস্তা পারাপারের জন্য বেশি বেশি করে আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই-এর নিজস্ব উদ্যোগ এবং ব্যয়ে দেশের ৬৬টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণরত শিক্ষকদের সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা যেতে পারে।          
    

জিএম