• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২০, ০১:০০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৫, ২০২০, ০১:০০ এএম

ভাইরাস প্রলয়ে আতঙ্কিত বিশ্ব

বাইরে করোনা, ঘরে হান্টাবাহী ইঁদুরের হানা

বাইরে করোনা, ঘরে হান্টাবাহী ইঁদুরের হানা

হা ন্টা ভা রা পা মো না রি সিড্র

মহামারী প্রাদুর্ভাব সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের চলমান ভয়াল পরিস্থিতি না কাটতেই আরেক সংক্রামক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে রীতিমত আতঙ্ক বিরাজ করছে বিশ্বব্যাপী। নতুন এই বিপত্তির নাম 'হান্টাভাইরাস'। আর করোনার মত এর প্রাদুর্ভাবও শুরু হয়েছে চীন থেকেই। এরই মধ্যে দেশটিতে হান্টাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বাহক ঘরের কোনে ঘাঁপটি পেরে থাকা ধূর্ত ইঁদুরের দল।

সোমবার (২৩ মার্চ) চীনের হুনান প্রদেশে এই হান্টাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির৷একটি চ্যাটার্ড বাসে করে শ্যানডং প্রদেশে যাওয়ারর সময় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়৷ এ সময় বাসে থাকা তার ৩২ সহযাত্রীর দেহেও মিলেছে হান্টার উপস্থিতি।

হান্টাভাইরাসের সংক্রমণ  চক্র

চীনের বার্তা সংস্থা গ্লোবাল টাইমসে এই সংবাদ প্রকাশের পরই নতুন করে আতঙ্কের জন্ম নিয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে। যদিও গবেষকরা বলছেন, করোনার মতো এতটা মারাত্মক পরিস্থিতি হয়তো তৈরি হবে না হান্টার প্রভাবে। কারণ এই ভাইরাস করোনার মতো মানুষের শরীরে এতটা ছড়িয়ে পড়ে না। তবে এই ভাইরাস অবশ্যই প্রাণঘাতী বলেও দাবি করেছেন তারা।

এই ভাইরাসটির সম্পর্কে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া তথ্য হচ্ছে, আজ অবদি হান্টার প্রভাবে বড় কোনো বিপর্যয় সৃষ্টির রেকর্ড নেই। আর সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদটি হচ্ছে, করোনার মত হান্টাভাইরাসেরও কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কারে সফল হয়নি বিজ্ঞানীরা।

দৈনিক জাগরণ পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটিতে এই হান্টাভাইরাসের উৎপত্তি, সংক্রমণ, উপসর্গ, পরীক্ষা, চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো

ধারণা করা হয় আনুমানিক ১৯৫০ সালে পৃথিবীতে প্রথমবারের মত হান্টাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সাধারণত রেডেন্ট বা দন্তুর (তীক্ষ্ণ লম্বা দাঁতযুক্ত) বর্গভুক্ত প্রাণী যেমন ইঁদুর, কাঠবিড়ালী বা খরগোশ সমগোত্রীয় প্রাণীর দ্বারা এই ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর সংক্রমণের জন্য দায়ি ডিয়ার রেট নামক এক বিশেষ ধরণের ইঁদুর।

হান্টা সংক্রমণে প্রথম প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত করেছে চীন

আন্তর্জাতিক রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন)-এর তথ্য মতে, হান্টাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রম (এইচপিএস) নামক এক ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় মানুষ। তবে বিশ্বের কোথাও এখনো পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যয় ঘটার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।   

গবেষকরা বলছেন, খুব বেশি দিন হয়নি হান্টাভাইরাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারার। তবে প্রাথমিক ভাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যে উপসর্গ দেখা যায় তা হলো, প্রবল জ্বরের সঙ্গে অসহ্য মাথা যন্ত্রণা এবং গায়ে বিশেষ করে নিচের অংশে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি। একই সঙ্গে ভোগাতে পারে পেট ব্যথাও।

এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বিষয়টি হচ্ছে, হান্টাভাইরাস আক্রান্ত দেহে ঘাপটি মেরে থাকে আর যখন প্রকাশ পায় তখন সেটি শরীরের ভেতর বড় ধরণের ইনফেকশন সৃষ্টির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। যা রোগীর জন্য প্রাণঘাতী হয়ে ওঠতে পারে।

সংক্রমণের প্রাথমিক স্তর সাধারণ ৮ সপ্তাহ নাগাদ স্থায়ী হতে পারে। এরপর এটি রেনাল সিনড্রম লেভেলে উন্নিত হয়। এ সময় রোগের দেহে রপাথমিক লক্ষণগুলো আরো প্রবল আকারে প্রকাশ পেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। হান্টার সংক্রমণে সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভার পড়ে রোগির লিভারে। এমন কি সৃষ্টি হতে পারে ভয়াবহ লিভার সেরোসিস (ঘা)।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, হান্টাভাইরাস বায়ুবাহিত নয় এবং কেবলমাত্র এই ভাইরাসবাহী ইঁদুর বা সমগোত্রীয় প্রাণীর প্রস্রাব, মল, লালা এবং কামড়ের শিকার হন তবেই কোনো ব্যক্তি হান্টাভাইরাস পালমোনারি সিন্ড্রমে আক্রান্ত হতে পারেন।

প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষার মাধ্যমে কারো দেহে হান্টাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণ বেশ কষ্টসাধ্য। সেক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গের ভিত্তিতেই ধারণা করা হয় কোনো ব্যক্তি হান্টা সংক্রমণে আক্রান্ত কি না। এছাড়া করোনাভাইরাসের মত হান্টাভাইরাসেরও নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি। তবে ভাইরাসের সংক্রমণ শরীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই যদি চিকিৎকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়, সেক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাই বেশি। 

বর্তমানে চীনে করোনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। যে শহর থেকে প্রথম করোনাভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সেখানে নতুন করে কোনও রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেখানে। কিন্তু নতুন এই হান্টাভাইরাস চীনের ডাক্তারদের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ভয়াবহ এই হান্টাভাইরাস মূলত ইঁদুর প্রজাতির প্রাণীর মাধ্যমে মানব দেহে ছড়িয়ে পড়ছে। এই মারণ ভাইরাস মূলত প্রসাব থেকেই প্রাণঘাতী ব্যাধির বিস্তার ঘটায় মানবদেহে। এই ভাইরাসকে এখনই আটকানো না গেলে হয়তো এর প্রাদুর্ভাবের ফলে বর্ণনার থেকে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি।

এসকে