• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২০, ০৪:৫২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৭, ২০২০, ০৫:০২ এএম

পাহাড় ডিঙিয়েছে ভালোবাসার নৌকা

চীনের প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসা পৌঁছে দিলো ছোট্ট নাবিহা

চীনের প্রতি বাংলাদেশের ভালোবাসা পৌঁছে দিলো ছোট্ট নাবিহা
বাবা মোরশেদ হাসিবের সঙ্গে ওয়ারিসা হাসান নাবিহা- ফেসবুক সূত্রে সংগৃহিত

মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সারা বিশ্ব মানবতা। এশিয়ার দেশ চীনের বুকে মৃত্যু প্রলয়ের সূচনা করলেও বর্তমানে এই করোনাভাইরাসের আগ্রাসন পৌঁছে গেছে বাংলাদেশেও। শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ এই প্রলয়ের বিরুদ্ধে মানুষের সকল প্রতিরোধ প্রচেষ্টাই মুখথুবড়ে পড়ছে। তবুও হার না মেনে সমন্বিতভাবে এই সংকট মোকাবিলায় লড়াই অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো।

চলমান এই পরিস্থিতির মাঝে বাংলাদেশের সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। নব্য উন্নয়নশীল একটি রাষ্ট্র হয়েও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সৃষ্টির সূচনাকালেই চীনের মানুষের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমিত সাধ্যের মাঝে থেকেও সহযোগিতা আর ভালবাসার হাত বাড়িয়ে ছিলেন তিনি। বিপর্যয় ঠেকানোর ক্ষেত্রে হয়তো সেই সহযোগিতার পরিমান চীনের জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না। কিন্তু বাংলাদেশের এই মানবিক উদারতা ও ভালবাসার প্রকাশ হৃদয় ছুঁয়ে যায় চীনাদের। সে সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি চীন সরকারের ধন্যবাদ জানানোর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই ভালবাসার বিনিময়। চরম সংকটের মাঝেও বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি নিজেদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতার কথা জানান দেয় দেশটির সাধারণ জনগণ।

এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের খবর পেয়েই যেকোনো পরিস্থিতিতে কোটি বাংলাদেশির পাশে থাকার কথা জানায় চীন সরকার। যার প্রেক্ষিতে দেশটির পক্ষ থেকে দুই দফায় করোনা শনাক্তকারী কিট ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। তবে এক্ষেত্রে চীন সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা প্রকাশ সম্পন্ন হলেও দেশটির মানুষের প্রতি কোটি বাংলাদেশির পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানানোর কাজটি বাদ থেকে যায়।

চীনের পক্ষ থেকে আসা মানবিক সহযোগিতা, যার গায়ে লেখা সেই বার্তা, 'ভালোবাসার নৌকা পাহাড় বাইয়া চলে'

অবশেষে বাঙালি জাতি যে ভালবাসার বিনিময়ে ভালবাসতে জানে, চীনের সরকার ও সাধারণ মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যদিয়ে কোটি বাংলাদেশির প্রতিনিধি হিসেবে তা জানান দিল নাবিহা নামের এক ছোট্ট শিশু।

দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাজারো পোস্টের ভিড় জমালেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মানবিক সৌজন্যতা প্রকাশে নিজেদের যে সচেতন মানসিকতার প্রকাশ দিতে পারেনি দেশের কোটি মানুষ। সেই কাজটি করে এই ছোট্ট নাবিহা জানিয়ে দিল বৈশ্বিক মিত্রতা গঠনে কূটনীতির মত জটিল প্রক্রিয়ারও দরকার হবে না যদি শুধুমাত্র মানুষ মানুষকে ভালবাসতে জানে আর আন্তরিকভাবে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়ে ছুঁইয়ে দিতে পারে অন্যের হৃদয়।

নাবিহা কিন্তু শুধুমাত্র চীনের প্রতি ভালবাসা জানানোর শিশুসূলোভ অভিব্যক্তি প্রকাশে কোটি বাংলাদেশির কথিত প্রতিনিধি হয়নি। বরং চীনের পক্ষ থেকে সেই ভালবাসার স্বীকৃতিও অর্জন করে নিয়েছে। সেই  সঙ্গে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের প্রতি চীনের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসার বার্তাও বয়ে এনেছে নাবিহা।

নাবিহার পরিচয় না হয় বিস্তারিত নাই বলি। নিজ গুনেই একদিন সারাদেশকে তা জানিয়া দেবে সে। বাবার ফেইসবুক ওয়ালে একটুকরো কাগজের মাঝে ছোট্ট নাবিহার কাচা হাতে লেখা সেই অপরিপক্ক ভালবাসার চিরকুটের একটি ছবি চোখে পড়ে। দেখা যায়, একবার নয় একাধিকবার এই ভালবাসার খোলা চিঠি বাবা মোরশেদ হাসিবের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করে নিজের দেশ ও দেশের মানুষকে সহযোগিতা পাঠানোয় চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে শিশু নাবিহা।

ফেসবুকের বরাতে তার এই নিষ্পাপ কৃতজ্ঞতা বার্তা এক পর্যায়ে চোখে পড়ে বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা হাইকমিশনের মিনিস্টার কাউন্সিলর ও বাংলাদেশের চীনা মিশন অ্যাম্বাসির ডেপুটি চীফ হুয়ালং ইয়েনের। নাবিহার চিঠির ছবি সংযোজিত সেই পোস্টেই তার জবাবে বাংলাদেশ ও তার ‘মহান’ নাগরিকদের ধন্যবাদ জানানোর পাশপাশি চীনের সংকটকালে সেদেশের মানুষের পাশে দাড়ানোয় বাংলাদেশিদের উদার মানসিকতার প্রশংসা করেন ইয়েন।

চীনা হাইকমিশনের মিনিস্টার কাউন্সিলর ও বাংলাদেশের চীনা মিশন অ্যাম্বাসির ডেপুটি চীফ হুয়ালং ইয়েনের প্রত্ত্যুতর

একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তি নিঃসন্দেহে সে রাষ্ট্রের একজন সম্মানিত প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচ্য। সে অর্থে ছোট্ট নাবিহার ভালোবাসার উত্তরে হুয়ালং ইয়েনের উদারতা ও ঊষ্ণ আন্তরিকতা প্রকাশে সত্যিই পাহাড় ডিঙিয়ে গেছে ভালোবাসার নৌকা। আর সেটি বাংলাদেশের কোটি মানুষের জন্যে বয়ে এনেছে সম্মান।

বিপর্যয়ের মাঝে চীনের কোটি মানুষের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার ভালবাসা প্রকাশের মানবিক বিনিময় দিতে আজ বাংলাদেশের কোটি মানুষের সংকট উত্তরণে চীনের মত মিত্র পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন বাংলাদেশের আগামী প্রজন্মের একজন সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে, কোটি বাংলাদেশির পক্ষ থেকে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভালবাসার সেই ক্রমবর্ধমান বিনিময় চক্র সুসমৃদ্ধ করলো শিশু নাবিহা।

এই নাবিহাদের চোখেই স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। একদিন বিশ্বের বুকে এই সোনার বাংলার স্বর্ণালী প্রজন্ম হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবে নাবিহারা। ওদের কীর্তিতে সার্থক হবে লাখো শহীদের আত্মদান। সোনার দেশের সোনার মানুষ হয়ে ওঠুক ছোট্ট সোনামণি নাবিহা। শুভকামনা।