গ্রিন লাইন বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে বেলা তিনটার মধ্যে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা পরিশোধ করতে ওই পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত। আদালত বলেছেন, ৩টার মধ্যে রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকার কিছু অংশ না দিলে আমাদের (আদালত) মতো আমরা ব্যবস্থা নেব।
বুধবার ( ১০ এপ্রিল) আদালত থেকে বের হবার পর রাসেল সরকার এ তথ্য জানান। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। গ্রিন লাইনের মালিক মো. আলাউদ্দিন ও তার আইনজীবীর উদ্দেশে এ কথা বলেন আদালত।
আজ বুধবার শুনানির শুরুতে রিটকারী ও সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি বলেন, আমাদের সাথে এখনো গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেনি। এ সময় গ্রিন লাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের জন্য আবারো সময় চান।
তখন আদালত গ্রিন লাইনের মালিক ও আইনজীবীকে বলেন, প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকার পা হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন, আপনারা কোনো খোঁজ নিলেন না। একটা টাকাও দিলেন না। রাসেলের একটা পা কেটে ফেলা হয়েছে। আরেকটি পা-ও যাওয়ার পথে। আপনাদের ব্যবসা তো ঠিকই চলছে। মানবাধিকার বলেও তো একটা ব্যাপার আছে।
এ সময় গ্রিন লাইনের আইনজীবী মো. অজিউল্লাহ আদালতকে বলেন, রাসেল সরকারের চাকরির ব্যবস্থা করবে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।
তখন আদালত বলেন, আপনারা আগে বেলা ৩টার মধ্যে আদালত যে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছি সেটার কিছু অংশ পরিশোধ করে আসেন। তাহলে আমরা বুঝবো, আপনারা আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন। অন্যথায় আমাদের মতো করে আমরা ব্যবস্থা নেব।
এরপর আদালত বিষয়টি শুনানির সময় বেলা ৩টা নির্ধারণ করেন।
গত ৪ এপ্রিল বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় হাইকোর্ট।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার শামসুল হক রেজা। গ্রিন লাইনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. অজিউল্লাহ।
এর আগে গত ৩১ মার্চ গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে রোববার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।
আইনজীবী শামসুল হক রেজা জানান, রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেট কার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে গত বছরের ১৪ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেছিলেন।
এরপর হাইকোর্ট রুলের শুনানি নিয়ে ভিন্ন একটি বেঞ্চ রাসেলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।
এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।
এমএ/আরআই