• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৯:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৩:৫৪ পিএম

‘মুসলিম উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’-এ ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব

‘মুসলিম উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’-এ ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব
‘উত্তরাধিকার.বাংলা’ অ্যাপস -ছবি

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া জুডিশিয়াল পোর্টালে (বিচার বিভাগীয় বাতায়ন) ‘উত্তরাধিকার.বাংলা’তে এক ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব করা যায়। এই অ্যাপে ঢুকে বাংলা বা ইংরেজী যেকোনো ভাষায় একটি ফর্ম পূরণ করে জানা যাবে উত্তরাধিকারের সম্পত্তির হিসাব।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে জুডিসিয়াল পোর্টালে ঢুকে ‘মুসলিম উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর’-এ ক্লিক করলেই ই-সেবার ফর্মটি পর্দায় ভেসে উঠবে। তারপর একে একে সংশ্লিষ্ট ঘরগুলো পূরণ করে ফলাফলের ঘরে ক্লিক করলেই চলে আসবে ফলাফল। এতে জানা যাবে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির কী পরিমাণ কোন উত্তরাধিকার পাবেন। এতে শুধু জমির হিসাব নয়, জানা যাবে অর্থ বা স্বর্ণালঙ্কারের হিসাবও। ফর্মের শুরুতেই আত্মীয়-স্বজনের তালিকা দেয়া আছে। তালিকা অনুসারে ২৯ ধরনের আত্মীয়-স্বজন হচ্ছে- স্বামী, স্ত্রী, পুত্র, মৃত পুত্র, কন্যা, মৃত কন্যা, পিতা, মাতা, দাদা, দাদি, নানি, সহোদর ভাই, সহোদর বোন, সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়), সৎ বোন (বৈমাত্রেয়), সৎ ভাই (বৈপিত্রেয়), সৎ বোন (বৈপিত্রেয়), সহোদর ভাইয়ের পুত্র, সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়)- এর পুত্র, সহোদর ভাইয়ের পুত্রের পুত্র, সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়)- এর পুত্রের পুত্র, চাচা, চাচা (বৈমাত্রেয়), চাচাতো ভাই, চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়), চাচাতো ভাইয়ের পুত্র, চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়) এর পুত্র এবং চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়) এর পুত্রের পুত্র।

ফর্মে কোন আত্মীয়ের বাঁ পাশের খালি ঘরে ক্লিক করলেই ডান পাশে আরেকটি ঘর আসে। ওই ঘরে সংখ্যা লিখতে হয়। তবে কোনো কোনো ঘরে তা আসে না। যেমন- পিতা, মাতা, দাদা, দাদি ও স্বামী। আবার একই ফর্মে স্বামী ও স্ত্রীর ঘরে ক্লিক করা যায় না। এই দুটির একটিতে ক্লিক করার পর অন্যটিতে ক্লিক করলে একটি লেখা ভেসে ওঠে। যাতে বোঝানো হয়, একই ব্যক্তির স্বামী ও স্ত্রী থাকতে পারে না। আবার মৃত পুত্র বা কন্যাতে ক্লিক করলে নতুন ঘর আসবে। যাতে নতুন আত্মীয়-স্বজনের তালিকা আসবে। যাতে মৃত পুত্র বা কন্যার সংখ্যা অনুসারে লেখা থাকে মৃত পুত্র বা কন্যার (১/২/৩ ইত্যাদি) সংখ্যা। অথ্যাৎ মৃত পুত্র বা কন্যাদের সন্তানদের আলাদা আলাদা ঘরে উল্লেখ করা যাবে। সম্পদের বিবরণের ঘরে জমি (শতাংশ), স্বর্ণ (ভরি), রৌপ্য (ভরি) ও মুদ্রা (টাকা) উল্লেখ করা যাবে। তারপর ফলাফলের ঘরে ক্লিক করলেই উল্লেখ করা আত্মীয়-স্বজনের কে কত অংশ পাবেন তার হিস্যা চলে আসবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই-এর মাধ্যমে এই আ্যপটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

যেসব বিধিতে এই সম্পত্তির বাটোয়ারা হয়, অ্যাপে ওই বিধিগুলো উল্লেখ করা আছে। এতে মোট ৩১ ধরনের আত্মীয়-স্বজনের কে কোন বিধিতে সম্পত্তির অংশ পাবেন, তা-ও উল্লেখ করা আছে। বিধিতে বলা হয়েছে, ‘জবিউল ফুরুজঃ

এদের অংশ পবিত্র কোরআন শরীফে নির্ধারণ করে দেয়া আছে। জবিউল ফুরুজ হল ১২ জন। এদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং বাকি ৮ জন মহিলা। ৪ জন পুরুষ হল - (১) স্বামী, (২) পিতা, (৩) দাদা, (৪) সৎ ভাই (বৈপিত্রেয়)। নির্ধারিত অংশের পরিমান নিম্নরূপঃ - (১) স্ত্রী, (২) কন্যা, (৩) পুত্রের কন্যা, (৪) মাতা, (৫) দাদি এবং নানি, (৬) সহোদর বোন, (৭) সৎ বোন (বৈমাত্রেয়), (৮) সৎ বোন (বৈপিত্রেয়)। 

নির্ধারিত অংশের পরিমাণ নিম্নরূপঃ

(১) স্বামী ১/৪ অংশ পাবে যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে।

(২) স্বামী ১/২ অংশ পাবে যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকে।

(৩) স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে।

(৪) স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান না থাকে।

(৫) কন্যা ১/২ অংশ পাবে যখন একজন মাত্র কন্যা থাকে এবং পুত্র না থাকে।

(৬) কন্যা ২/৩ অংশ পাবে যখন দুই বা ততোধিক কন্যা থাকে এবং পুত্র না থাকে।

(৭) কন্যা অবশিষ্ট অংশীদার হিসাবে পাবেন যখন এক বা একের অধিক পুত্র থাকে।

(৮) পুত্রের কন্যা পাবে ১/২ অংশ। যখন একজন মাত্র পুত্রের কন্যা থাকে এবং যদি কোন পুত্র, পুত্রের পুত্র বা একের অধিক কন্যা ও পুত্রের কন্যা না থাকে।

(৯) পুত্রের কন্যা ২/৩ ভাগ পাবে যখন দুই বা ততোধিক পুত্রের কন্যা থাকে এবং পুত্র ও পুত্রের পুত্র এবং একের অধিক কন্যা না থাকে।

(১০) পুত্রের কন্যা অবশিষ্ট অংশীদার হিসেবে পাবেন। পুত্রের পুত্র না থাকলে সমান অংশ আইন অনুযায়ী।

(১১) পিতা ১/৬ অংশ পাবে যদি পুত্র বা পুত্রের পুত্র থাকে।

(১২) পিতা ১/৬ অবশিষ্ট অংশ ভোগী হিসেবে পাবে যখন এক বা একরে অধিক কন্যা, পুত্রের কন্যা এবং পুত্রের পুত্র না থাকে।

(১৩) পিতা অবশিষ্ট অংশ পাবে যখন পুত্র বা পুত্রের পুত্র থাকে।

(১৪) মাতা ১/৬ অংশ পাবে যখন পুত্র ও পুত্রের পুত্র এবং দুই বা ততোধিক ভাই বোন এবং পিতা থাকে।

(১৫) মাতা ১/৩ অংশ পাবে যখন পুত্র অথবা পুত্রের পুত্র এবং একের অধিক ভাই-বোন না থাকে।

(১৬) মা ১/৩ অংশ পাবে যখন স্ত্রী, স্বামী এবং বাবা থাকে।

(১৭) দাদা ১/৬ অংশ পাবে যখন সন্তান এবং পুত্রের সন্তান থাকে এবং পিতা বা নিকটতম পিতামহ না থাকে।

(১৮) দাদা অবশিষ্ট অংশ হিসেবে পাবে ১/৬ অংশ পাবেন যখন কন্যা অথবা পুত্রের কন্যা থাকে।

(১৯) দাদার অবশিষ্ট অংশ হিসেবে পাবে যদি দূরবর্তী কোন অংশীদার বা অবশিষ্ট অংশীদার না থাকে।

(২০) দাদি ১/৬ অংশ পাবেন যদি কোন মাতা বা মায়ের দিকে দাদি না থাকে।

(২১) পূর্ণ বোন ১/২ অংশ পাবেন যখন একজন মাত্র বোন থাকে এবং যদি কোন সন্তান, পুত্রের সন্তান, পিতা অথবা ভাই না থাকে।

(২২) পূর্ণ বোন ২/৩ পাবে যখন দুই বা ততোধিক বোন থাকে এবং সন্তান, পুত্রের সন্তান, পিতা ও ভাই না থাকে।

(২৩) বোন অবশিষ্ট অংশীদার হিসেবে পাবে যখন পূর্ণ ভাই থাকে বা এক বা একাধিক পুত্রের কন্যা থাকে এবং বোনকে বঞ্চিত করার মত কোন অংশীদার না থাকে এবং এক বা একাধিক কন্যাদের সহিত অবশিষ্ট অংশীদার থাকে তারা কন্যাদের অংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ পাবে।

(২৪) বৈমাত্রীক বোন পাবে ১/২ অংশ যখন একজন মাত্র বোন থাকে এবং সন্তান, সন্তানের সন্তান এবং পিতা ও পূর্ণ ভাই বোন না থাকে।

(২৫) বোন পাবে ২/৩ অংশ যখন দুই বা ততোধিক বৈমাত্রীক বোন থাকে এবং সন্তান, সন্তানের সন্তান এবং পিতা ও পূর্ণ ভাই বোন না থাকে।

(২৬) বৈমাত্রীয় বোন পাবে ১/৬ ভাগ যখন একজন পূর্ণ বোন থাকে (বোন পাবে ১/২ এবং বৈমাত্রী বোন পাবে ২/৩, ১/২, ১/৬)।

(২৭) বৈমাত্রীয় বোন অবশিষ্ট অংশ ভোগী হিসেবে পাবে যখন কোন বৈমাত্রীয় ভাই, এক বা একাধিক কন্যা এবং পুত্রের কন্যা এবং বঞ্চিত করার মত কোন অংশীদার না থাকে।

(২৮) বৈমাত্রীয় ভাই ১/৬ অংশ পাবে যখন শুধু মাত্র একজন বৈমাত্রীয় ভাই থাকে এবং সন্তান, পুত্রের সন্তান ও পিতা না থাকে।

(২৯) বৈপিত্রীয় ভাই ১/৩ অংশ পাবে যখন সেখানে দুই বা ততোধিক বৈপিত্রীয় ভাই থাকে এবং সন্তান, সন্তানের সন্তান এবং পিতা না থাকে।

(৩০) বৈপিত্রীয় বোন ১/৬ অংশ পাবে সেখানে একমাত্র বৈপিত্রীয় বোন থাকে এবং সন্তান, সন্তানের সন্তান এবং পিতা না থাকে।

(৩১) বৈপিত্রীয় বোন ১/৩ অংশ পাবে যখন সেখানে দুই বা ততোধিক বৈপিত্রীয় বোন থাকে এবং সন্তান, সন্তানের সন্তান এবং পিতা না থাকে।

আসাবা বা অবশিষ্ট অংশীদার :

আসবা গণের চারটি শ্রেণি আছে।

শ্রেণী (১): পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র, পুত্রের কন্যা

শ্রেণী (২): পিতা, দাদা

শ্রেণী (৩): সহোদর ভাই, সহোদর বোন, সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়), সৎ বোন (বৈমাত্রেয়), সহোদর ভাইয়ের পুত্র, সৎ ভাই(বৈমাত্রেয়)-এর পুত্র, সহোদর ভাইয়ের পুত্রের পুত্র , সৎ ভাই (বৈমাত্রেয়)-এর পুত্রের পুত্র।

শ্রেণী (৪): চাচা, চাচা (বৈমাত্রেয়), চাচাতো ভাই, চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়), চাচাতো ভাইয়ের পুত্র, চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়) এর পুত্র, চাচাতো ভাইয়ের পুত্রের পুত্র, চাচাতো ভাই (বৈমাত্রেয়)এর পুত্রের পুত্র।

শুধুমাত্র পুরুষ অথবা মহিলা আসাবা হিসাবে থাকলে, অবশিষ্টাংশের সম্পূর্ণ অংশ পুরুষ অথবা মহিলা পাবেন, কিন্তু একই শ্রেণির পুরুষ ও মহিলা একত্রে আসাবা হিসাবে থাকলে, পুরুষ ও মহিলাগণ ২:১ অনুপাতে অবশিষ্ট অংশীদার হবেন।

সম্পত্তি বণ্টন প্রক্রিয়া :

ধাপ (১) - প্রথমে সম্পত্তি জবিউল ফুরুজদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে।

ধাপ (২) - জবিউল ফুরুজদের অংশ সমূহ যোগ এর পরে সম্পূর্ণ অংশটি ১ এর চেয়ে বেশি হলে, সকল অংশ আনুপাতিক হারে কমে আসবে যাতে সম্পূর্ণ অংশটি ১ হয়।

ধাপ (৩) - যদি কোন আসাবা না থাকেন এবং সম্পূর্ণ অংশ ১ এর চেয়ে কম হলে স্বামী,স্ত্রী এর অংশ ছাড়া জবিউল ফুরুজ অংশ সমূহ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে যাতে মোট অংশটি ১ হয়। স্বামী/স্ত্রী এর অংশ কঠিনভাবে সুনির্দিষ্ট করা।

ধাপ (৪) - আসাবা থাকলে অবশিষ্ট অংশ আসাবাগণ পাবেন নিম্নের ক্রম অনুযায়ী পাবেনঃ

ধাপ (১) >ধাপঃ (২)>ধাপঃ (৩)>ধাপঃ (৪)

(শ্রেণি ১ থাকলে পরের শ্রেণির আসাবাগণ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। শ্রেণি ২ থাকলে পরের শ্রেণির আসাবাগণ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। এভাবে চলতে থাকবে)।’ বিধিগুলোও বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতে দেয়া আছে।

উত্তরাধিকার ক্যালকুলেটর পাবেন এই লিংকে – http://উত্তরাধিকার.বাংলা/

এমএ/টিএফ