• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০১৯, ১০:০৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৮, ২০১৯, ১০:০৫ এএম

ভুল চিকিৎসায় রামেক হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ

ভুল চিকিৎসায় রামেক হাসপাতালে গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ

 

ভুল চিকিৎসায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে বীণা রাণী (২৮) নামের এক গৃহবধূর মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধী অবস্থায় তিনি মারা যান।

বীণা রাণী জেলার তানোর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর বিষূ চন্দ্রের স্ত্রী। তিন সন্তানের জননী বীণার ছোট সন্তানের বয়স একমাস। স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বিষু।

প্রতিকার পেতে শনিবার  হাসপাতালের পরিচালকের কাছে অভিযোগ করেছেন মৃত বীণা রাণীর স্বজনরা।

বীণা রাণীর স্বামী বিষু চন্দ্র জানান, মলদ্বারে অনবরত রক্তপাত হওয়ায় ২২ এপ্রিল দুপুরে স্ত্রীকে রামেক হাসপাতালে নেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি জন্য পাঠায়। কিন্তু  ট্রলিম্যান রোগীকে রেখে যান ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে। টানা ২ দিন ওই ওয়ার্ডেই ভুল চিকিৎসা চলে বীণা রাণীর। 

২৪ এপ্রিল রাউন্ড দিতে এসে ওয়ার্ডের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক রোগীকে ভুল ওয়ার্ডে নেয়া বিষয়টি নিশ্চিত হন। ওই  চিকিৎসকের নির্দেশে  সেদিনই ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়া হয় বীণা রাণীকে।

বিষু চন্দ্র আরো জানান, এক ভুলের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আরেক ভুলের ফাঁদে আটকা পড়েন বীণা। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়ার পর নতুন করে চিকিৎসা শুরু হয় রোগীর। চিকিৎসক ক্লোনস্কপিসহ আরো কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে এসব পরীক্ষা না হওয়ায় নগরীর লক্ষ্মীপুরে পপুলরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়া হয় রোগীকে।

একদিন পর ২৫ এপ্রিল সকালে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বীণা রাণীর পরিবর্তে রাজেশ নামের আরেক রোগীর কোলোনস্কপি রিপোর্ট দেয়া হয়। ওই পরীক্ষা রিপোর্ট দেখেই দ্বিতীয় দফা ভুল চিকিৎসা শুরু হয় গৃহবধূর।

পরদিন ওই ওয়ার্ডের আরেকজন চিকিৎসক এসে ভুল রিপোর্ট শনাক্ত করেন। ওই দিনই আবারো নতুন করে কোলোনস্কপি রিপোর্ট আনতে পপুলারে যান বিষু। কিন্তু সেই রিপোর্ট পাবার আগেই ওইদিন দিবাগত রাত ৩টার দিকে মারা যান বীণা রাণী।

রোগীর স্বজন ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি রাজ কুমার জানান, রামেক হাসপাতাল ও পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা এবং অবহেলায় ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন ওই নারী। আর নিরক্ষর হওয়ায় ওই নারীর স্বামী বিষয়টি টের পাননি। খবর পেয়ে তিনি নিজে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। পরে পরিচালকের কাছে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে ভুল রিপোর্ট দেয়ার বিষয়টি জানা নেই বলে জানান পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক ফরিদ শামীম। তিনি বলেন, কেউ আমাকে এ নিয়ে অভিযোগ করেননি। তারপরেও বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

তবে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান বাদশা পপুলার থেকে অন্য রোগীর রিপোর্ট পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তিনি বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পরে শুক্রবার রাতেই সেটি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। একই সাথে বীণা রাণীর পরীক্ষার রিপোর্ট চাওয়া হয়। কিন্তু তারা সেদিন ওই রিপোর্ট দিতে পারেনি। ওই রাতে রোগীটি মারা যান।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, এ নিয়ে মৌখিক অভিযোগ এসেছে। বিষযটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

টিএফ