• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০১৯, ০৮:২৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০১৯, ০৮:২৯ এএম

যে কারণে গ্রামীণফোনে কলড্রপ বেশি

যে কারণে গ্রামীণফোনে কলড্রপ বেশি

কলড্রপ আর ইন্টারনেটের গতি নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই দেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের। প্রতি বছরই মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও ভোগান্তি নিরসনে উদ্যোগ নেই অপারেটরদের।
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) তরফে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সেবার মান অর্থাৎ কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে প্রথম ড্রাইভ টেস্টের ফল অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কলড্রপের সংখ্যা বেশি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে রবি। সংশ্লিষ্টদের মতে, গ্রাহক অনুপাতে কোনো মোবাইল কোম্পানির তরঙ্গ কম থাকলে কলড্রপের যন্ত্রণায় ভুগতে হয় গ্রাহকদের। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি ১০ লাখ মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য বর্তমানে শূন্য দশমিক ৮২ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ রয়েছে, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, শ্রীলংকায় ১০ লাখের জন্য ৬ দশমিক ২১ মেগাহার্টজ, মালয়েশিয়ায় ৫ দশমিক ১৯ মেগাহার্টজ ও আফগানিস্তানে ৬ দশমিক ৮৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্ধ রয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি অপারেটরের তরঙ্গ ঘাটতি থাকলেও গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে এই ঘাটতির পরিমাণ বেশি। 

বিটিআরসির দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের মোট মোবাইল সিম ব্যবহারকারী প্রায় ১৫ কোটি ৭০ লাখের মধ্যে ৭২৭ লাখ গ্রামীণফোনের গ্রাহক এবং ৪৬৯ লাখ রবির গ্রাহক। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের মোট তরঙ্গ রয়েছে ৩৭ মেগাহার্টজ এবং রবির রয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। এই দুই অপারেটরের তরঙ্গের তুলনায় রবির থেকে গ্রামীণফোনের শূন্য দশমিক ৬ মেগাহার্টজ বেশি রয়েছে।
 
খসড়া হিসাবে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের প্রতি ১০ লাখ গ্রাহক পায় শূন্য দশমিক ৫১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অপরদিকে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটকের গ্রাহক পায় যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৭৮ মেগাহার্টজ, শূন্য দশমিক ৯১ মেগাহার্টজ এবং ৬ দশমিক ৫৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। প্রায় সমসংখ্যক তরঙ্গের বিপরীতে রবির থেকে দেড়গুণের বেশি গ্রাহক রয়েছে গ্রামীণফোনের। খাত সংশ্লিষ্টদের দাবি, এত পরিমাণ গ্রাহকের বিপরীতে পর্যাপ্ত তরঙ্গ না থাকায় গ্রাহক সেবায় হিমশিম খেতে হচ্ছে গ্রামীণফোনকে। ফলে কলড্রপসহ অন্যান্য সমস্যায় ভুগছেন এই অপারেটরটির সিম ব্যবহারকারীরা।

বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা শহরে ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, দেশের চার অপারেটরের মধ্যে গ্রামীণফোন কলড্রপে এক বছরের আগের অবস্থানেই রয়েছে। অপারেটরটির কলড্রপের হার (কলড্রপ রেট ৩ দশমিক ৩৮ ভাগ) বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে অপারেটরটির কল কানেক্টিংয়ের সময়, কমেছে ফোরজি ইন্টারনেটের গতি। শুধু গ্রামীণফোন নয়, ফোরজি ইন্টারনেটের গতি কমেছে রবি ও বাংলালিংকেরও। বিটিআরসির ফলাফল অনুযায়ী, বিটিআরসির দেয়া মানদণ্ডে অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে গ্রামীণফোন পিছিয়ে রয়েছে তিনটি ক্ষেত্রেই। এছাড়া রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক পিছিয়ে রয়েছে দুটি ক্ষেত্রে। এক বছরের (২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ওই পরিসংখ্যানে কলড্রপে এগিয়ে ছিল গ্রামীণফোন। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ওই এক বছরে গ্রামীণফোনের কলড্রপের সংখ্যা ছিল ১০৩ কোটি। দ্বিতীয় স্থানে ছিল রবি, অপারেটরটির কলড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি। এছাড়া বাংলালিংকের কলড্রপের সংখ্যা ছিল ৩৬ কোটি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটকের কলড্রপের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি। 

জানা গেছে, মাস দু’য়েক আগে বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে মাসিক কল ড্রপের হার ২ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে বলেছে। সংস্থাটি গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে আরও তিনটি বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানিয়েছে। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিটিআরসি গ্রামীণফোনকে সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) বা তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধর হিসেবে ঘোষণা করে। প্রবিধানমালা অনুযায়ী, কোনো অপারেটরকে এসএমপি ঘোষণা করা হলে তার ক্ষেত্রে করণীয়-বর্জনীয় ঠিক করে দিতে পারে বিটিআরসি। গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে এটিই বিটিআরসির প্রথম বিধিনিষেধ।
 
বিটিআরসির নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে অপারেটর বদলানোর সেবা বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) ‘লক ইন পিরিয়ড’ বেধে দেয়া হয়েছে ৩০ দিন। অর্থাৎ, কোনো গ্রাহক অন্য অপারেটর থেকে গ্রামীণফোনে গেলে তাকে সেখানে ৩০ দিন থাকতে হবে। বাকি অপারেটরগুলোর ক্ষেত্রে এ সময়সীমা ৯০ দিন। নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, গ্রামীণফোন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও একক স্বত্বাধিকার চুক্তি করতে পারবে না। দেশব্যাপী কোনো মাধ্যমে কোনো প্রকার মার্কেট কমিউনিকেশন বা বাজার প্রচারাভিযান করতে পারবে না। 

এর আওতায় বিজ্ঞাপনও পড়ে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) জাকির হোসেন খান দৈনিক জাগরণকে বলেন, মার্কেট কমিউনিকেশন বলতে বিজ্ঞাপনকেই বোঝানো হয়েছে। অপারেটররা বাজার বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে যোগাযোগ করে থাকে, সেটা গ্রামীণফোন পারবে না। এটা হবে নতুন প্যাকেজ বা সেবার ক্ষেত্রে। 

এইচএস/বিএস