• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৮, ২০১৯, ০৯:২১ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৮, ২০১৯, ০৩:২২ পিএম

রাজধানীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা

রাজধানীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা
রাজধানীতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা

ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, ডেসাসহ কয়েকটি সেবাসংস্থার সম্মনয়হীনতার কারণে নগরীর ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন নতুন স্থাপন ও সংস্কারের কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। 

কেন এই জলাবদ্ধতা লেগেইে থাকছে, এর মূল কারণ অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসছে নানা তথ্য। বিশেষ করে নগরীতে মেট্রোরেল, ডেসার পাইপ লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান ও ঢাকা ওয়াসার অধিকাংশ খাল দখলদারদের হাতে চলে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে দুর্ভোগের ঘানি টানছেন নগরবাসী। 

জানা গেছে, ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসা সঠিকভাবে তদারকি না করার দরুন সামান্য বৃষ্টিতে নগরীর পুরান ঢাকা, নাজিমুদ্দিন রোডসহ অনেক স্থানে পানি জমে থাকে। একই চিত্র মিরপুর এলাকার শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়ার। বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে বঙ্গভবনের সামনের সড়ক।

জানা যায়, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির ২৭শ’ কিলোমিটার খোলা ড্রেন এবং ৪৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে। আর ওয়াসার মিরপুরের রূপনগর খাল ভরাট করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সড়ক তৈরি করেছে। ঢাকা ওয়াসা গত বছর ১৭টি খাল পুনঃখনন করলেও ফের আবর্জনায় ভরাট হয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি ড্রেনেজ পাম্পিং সিস্টেম থাকলেও সময়ে কিছুই কাজে আসে না।

সরেজমিন দেখা যায়, পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড ও ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সড়ক, চাঁনখারপুলে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ভেঙে পড়ায় বৃষ্টি ছাড়াই ময়লা পানি সড়কের ওপর ভাসছে। একই অবস্থা ডিএসসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদ রোড। ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় ওয়াসার স্যুয়াজের লাইনসহ সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজের বেহাল দশা। বাদ যায়নি, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কালসী। দীর্ঘদিন ধরে পুরো সড়কের দুই পাশে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ভেঙে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সড়কে পানি জমে যাওয়ায় বাস চলাচলে সড়ক ভেঙে পড়ছে। 

ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে পড়ার সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেলের খোঁড়াখুঁড়ি। পরিকল্পনার অভাব থাকায় মতিঝিল, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও কাঁদার সৃষ্টি হচ্ছে। এর কারণে যানবাহন থেকে শুরু করে পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। তবে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে জমে থাকা পানি অপসারণে ডিএসসিসি পরীক্ষামূলক ড্রেনেজ পরিষ্কারে একটি গাড়ি ব্যবহার করছে। ড্রেনেজের ভেতর ময়লা-আবর্জনা ও পলিথিন জমে থাকায় গাড়ি তা ঠিকভাবে পরিষ্কার করতে পারছে না।

দুই সিটি ও ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘ পরিকল্পনা থাকলেও সরকারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ করা হয়নি। আর সংস্থাগুলোর নিজস্ব আয়ে অর্থ দিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। 

ফলে ইতোমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। আর এদিকে ঢাকা ওয়াসা খাল খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে গতবছরের মতো এবার ৬৫ কোটি টাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়েল কাছে পাঠানো হলে সেই অর্থ দেয়া হয়নি। ফলে রাজধানীর ড্রেনও স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ করতে পারেনি সংস্থাগুলো।

ডিএসসিসির পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বাসা-বাড়ির ব্যবহৃত পানি নিষ্কাশনে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন ও ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন সক্ষমতা থাকলেও মুষুলধারে বৃষ্টি হলে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। কারণ সারা বছর ময়লা-আবর্জনায় ড্রেন ও স্যুয়ারেজ লাইন অর্ধের বেশি ভরাট হয়ে যায়। এতে সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ড্রেনগুলো অচল হয়ে পড়ে। এই অবস্থার জন্য শুধু পলিথিনকে দায়ী করে লাভ নেই। বছর জুড়ে ড্রেন পরিষ্কারে কাজ করতে হবে। তাহলে সহজেই পলিথিন ও ময়লা আবর্জনা জমতে পারবে না। 

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীর খাল বেদখল হয়েছে। এসব উদ্ধারে কোনো সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায় না। কারণ যারা উদ্ধারে ভূমিকা রাখবেন তারাও জানেন খালগুলো ক্ষমতাসীন নেতাদের দখলে। এতে নগরীর চারপাশে নদ-নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলা ও পরিথিন সমস্যায় জলাবদ্ধতার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরকরণে একক সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি। 

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক কারিগরি সহিদ উদ্দিন বলেন, নগরীতে উন্নয় কর্মকাণ্ড চলমান থাকায় পানি নিষ্কাশনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। আশা করি গত বছরের চেয়ে এবার জলাবদ্ধতা অনেক কম হবে নি:সন্দেহে।

টিএইচ/টিএফ