• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৯, ০১:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৫, ২০১৯, ০৭:১৫ পিএম

দুধের ৯৬ নমুনার ৯৩টিই ক্ষতিকর 

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না : হাইকোর্ট

মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না : হাইকোর্ট


বাজারের তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান পাওয়া গেছে উল্লেখ করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। আজ বুধবার এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, খাবারে ভেজাল দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না, এটা মানুষের মৌলিক অধিকার।

এছাড়া এদিন দুধ ও দইয়ে ভেজাল বা রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িতদের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা দাখিল করা হয়।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট  বেঞ্চে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে ৯৬ নমুনার বিষয়ে প্রতিবেদন দিলেও কোন কোন কোম্পানির দুধে এসব ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট না করায় সংশ্লিষ্ট কোম্পানির নাম আদালতে উপস্থাপন করতে বলে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এর সঙ্গে জড়িতদের নাম-ঠিকানাও আজকের (১৫ মে) মধ্যে দাখিলের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। গত ৮ মে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছিলেন। আদালতে সেদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। 

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, বাজার থেকে সংগৃহীত কাঁচা তরল দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯৩টিতেই সীসা ও অ্যান্টিবায়েটিক অনুজীব পাওয়া গেছে। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার মধ্যে ১৮টিতেই ভেজাল পাওয়া গেছে। এছাড়া উচ্চমাত্রার বিভিন্ন রাসায়নিক পাওয়া গেছে দুধ ও দইয়ে। কোন কোন কোম্পানি দুধে এই ভেজাল বা রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর সঙ্গে জড়িত, প্রতিবেদনে তাদের নাম-ঠিকানা না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সেই তালিকাও দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে গরুর দুধ, দুই এবং গো-খাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, সীসা রয়েছে তা নিরূপণের জন্য একটি জরিপ পরিচালনার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সে সময় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণি সচিব, কৃষি সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সকল সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআই চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকে স্বতপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত। আলফা টক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ০.৯৯৬ পর্যন্ত। টেট্রাসাইক্লিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৬৭১.১৩ পর্যন্ত, সিপ্রোফ্লোক্সাসিনের মাত্রা ১০০ পর্যন্ত সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ১৪৮.৩৬ পর্যন্ত। কীটনাশকের মাত্রা ৫ সহনীয় হলেও পাওয়া গেছে ৯.৫০-১৬.২০ পর্যন্ত। প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে টেট্রাসাইক্লিনের সহনীয় মাত্রা ১০০ হলেও দেশীয় প্যাকেটজাত দুধে পাওয়া গেছে ১৮৭.৫৮ পর্যন্ত। আমদানিকৃত প্যাকেটজাত দুধের ক্ষেত্রে এই উপাদানের মাত্রা ৭১৭.৮২ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আর আলফাটক্সিনের সহনীয় মাত্রা ০.৫ হলেও পাওয়া গেছে ১.৯৩ পর্যন্ত।

এমএ/আরআই